আজকের দিন তারিখ ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা

অমর একুশে গ্রন্থমেলা


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মার্চ ১৯, ২০২১ , ১২:২১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


গতকাল বিকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২১ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রন্থমেলা শুরু হলেও মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে এ বছর শুরু হয়েছে মার্চের ১৮ তারিখ থেকে, চলবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এবারের বইমেলা উৎসর্গিত হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে। মেলার মূল থিম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বিষয়টি খুবই প্রাসঙ্গিক। ১৯৫২ সালের এই মাসে মায়ের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল বাঙালি। সেই ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের সূচনা এবং পরিণতিতে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। ফেব্রুয়ারি তাই আমাদের জাতীয় চেতনার উন্মেষের স্মারক একটি মাস। এই মাসটি এলে আমরা অমর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হই, ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি আবেগে আপ্লুত হই এবং অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, উদার চেতনায় নতুন করে উজ্জীবিত হই। এ মাসে নানা উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে আমরা তা ফুটিয়ে তোলারও চেষ্টা করি। ফেব্রুয়ারি মাসে অমর একুশে গ্রন্থমেলা আমাদের তেমনি একটি জাতীয় কৃত্যের অংশ হয়ে গেছে। বলা যায়, বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের চাঞ্চল্য অনেকটাই একুশে গ্রন্থমেলাকেন্দ্রিক। যদিও মার্চ মাসে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই এক মাস রাজধানীর বাংলা একাডেমি ও তৎসংলগ্ন মেলা প্রাঙ্গণ থাকবে পাঠক-লেখক, ক্রেতা-দর্শক নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের পদচারণায় মুখর। এবার গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫৪টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৮০টি ইউনিটসহ মোট ৫৪০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৩৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেলায় ৩৩টি প্যাভিলিয়ন থাকবে। লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল মেলা প্রাঙ্গণে। সেখানে ১৩৫টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি ৫টি উন্মুক্ত স্টলসহ ১৪০টি স্টল দেয়া হয়েছে। একটি উদ্বেগের ব্যাপার যে, একুশে গ্রন্থমেলায় প্রতি বছরই নতুন বই আসার হার বাড়ছে, কিন্তু মানসম্মত বইয়ের সংখ্যা তেমন বাড়ছে না। যেনতেনভাবে নতুন বই মেলায় আনার প্রবণতায় মানহীন, তথ্য ও মুদ্রণত্রুটিযুক্ত বইয়ে বাজার ভরে যাচ্ছে। তাই মেলাকেন্দ্রিকতা থেকে বের হয়ে বছরজুড়ে নতুন বই প্রকাশ অব্যাহত রাখলে লেখক-প্রকাশকরা মেলার সময়ের বাড়তি চাপ থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন এবং প্রকাশনার প্রতি যথাযথ মনোযোগী ও যত্নশীল হওয়ার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি অমর একুশে গ্রন্থমেলা চলাকালীন সংলগ্ন এলাকায় কোনো রকম নিরাপত্তা ঘাটতি ও ব্যবস্থাপনাজনিত দুর্বলতা যাতে না থাকে সেটা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। শুধু পর্যাপ্ত র‌্যাব-পুলিশ মোতায়েনই যথেষ্ট নয়, তাদের সার্বক্ষণিক ও ত্বরিত তৎপরতা নিশ্চিত করতে হবে। থাকতে হবে মেলায় আগতদের সচেতনতা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলায় অবস্থান করতে হবে। লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশাসন সতর্ক থাকবেÑ উৎসবমুখর হবে গ্রন্থমেলা, এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।