উন্নয়নের চমকে বাংলাদেশ
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: ডিসেম্বর ২২, ২০২৩ , ৪:৩৮ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : সময় থেমে থাকে না। দিনের পর রাত আবার দিন এভাবেই ঘুরছে সময়ের চাকা। চলতি বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরে পা রাখার অপেক্ষায় পুরো বিশ্ব। তবে শেষ হতে চলা বছরটি ছিল বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নে চমকের বছর। বছরের অক্টোবর মাস থেকে একে একে খুলেছে উন্নয়নের নানা দুয়ার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সরকারের বড় প্রকল্পগুলো। এরমধ্যে রয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল, কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেল, পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ (ঢাকা-ভাঙ্গা), আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল, আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেললাইন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একাংশ এবং ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ চালু। ২০২৩ সাল যেন দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসানের বছর। কারণ, পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেলের জন্য মানুষ দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছে। যদিও আগের বছরই পদ্মাসেতু চালু হয়েছে, তবে সেতুতে রেল যোগাযোগ যুক্ত হয়েছে এ বছরই। অন্যদিকে মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ঢাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার হয়েছে অবসান। নানা শঙ্কা ও দুর্ভোগের মধ্যে যেন দারুণ একটা বছর পার করলো দেশবাসী। কারণ, ২০২৩ সালের মতো এতো মেগা প্রজেক্ট আগের কোনো একক বছরে চালু হয়নি। এছাড়া উদ্বোধন হয়েছে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে। বিআরটির কিছু প্রকল্প উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এর ফলে আরও সহজ হবে দেশের যোগাযোগব্যবস্থা। বাড়বে কর্মসংস্থান। খুলবে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। বিশ্লেষকেরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী পার হতেই এসব মেগা প্রকল্পকে ‘ট্রাম কার্ড’ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করলে আরও মেগা প্রকল্প নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এরমধ্যে পাটুরিয়া থেকে গোয়ালন্দে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের। নির্বাচনের বৈতরণী পার হতেই এসব মেগা প্রকল্পকে ‘ট্রাম কার্ড’ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটি টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করলে আরও মেগা প্রকল্প নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এরমধ্যে পাটুরিয়া থেকে গোয়ালন্দে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের মেগা প্রকল্প প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ২০২৩ সালে সরকার বেশকিছু মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করে দেশবাসীকে চমকে দিয়েছে। সামনে আরও মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। আমরা অবকাঠামো নির্মাণে বেশি গুরুত্ব দেবো। অবকাঠামো যে কোনো দেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি। অবকাঠামো দিয়েই দেশের উন্নয়ন বিচার করা হয়। আমরা দ্বিতীয় পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজ শুরু করবো। তিনি বলেন, আমার নিজ এলাকা সিলেট ও সুনামগঞ্জেও আরও উন্নয়ন দরকার। পর্যটকদের জন্য টাঙ্গুয়ার হাওরের পাশে ছোট পরিসরে বিমানবন্দর দরকার। দেশের সব সড়ক সোজা ও প্রশস্ত করা দরকার। পর্যায়ক্রমে সব রেললাইন ডাবল ট্র্যাক করা দরকার। আমাদের আরও অবকাঠামো উন্নয়ন দরকার। যেন দেশের মানুষের চলাফেরা সহজ হয়। তবে ২০২৩ সাল আমাদের জন্য মঙ্গলময় হয়ে থাকবে। দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ, ঢাকায় মেট্রোরেল ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের উদ্বোধন করা হয়েছে। এ টার্মিনাল পুরোদমে চালুর পর উন্নয়নশীল বাংলাদেশের বার্তা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে যাবে। পদ্মাসেতুতে রেল চলাচলে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে। মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ পর্যন্ত উদ্বোধন করা হয়েছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে তৈরি করা বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের উন্নয়নে নতুন পালক। এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নদী তলদেশে প্রথম টানেল। এ টানেল চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে আনোয়ারা উপজেলাকে যুক্ত করেছে। টানেলটি হয়ে উঠছে ‘দুই শহরের এক নগরী’ এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তৈরি হওয়া প্যাসেজওয়ে। অন্যদিকে পদ্মাসেতুর পর মেট্রোরেল ও বঙ্গবন্ধু টানেল চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ২ শতাংশের বেশি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঢাকা-কক্সবাজার সরাসরি রেলসংযোগও চালু হয়েছে। কক্সবাজার রেলস্টেশনকে দেশের প্রথম আইকনিক স্টেশন করে গড়ে তোলা হয়েছে। ঝিনুকের আদলে তৈরি দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশন ভবনটির আয়তন এক লাখ ৮২ হাজার বর্গফুট। এতে পর্যটকসহ সাধারণ যাত্রীদের যাতায়াত ব্যবস্থা আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি অংশ খুলে দেওয়া হয়েছে। যার মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। অন্য বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মারেল সংযোগ প্রকল্প ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন করা হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় জানায়, আখাউড়া-আগরতলা ও খুলনা-মোংলা রেললাইন উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে দেশের পরিবহন ব্যবস্থায় নতুন দ্বার খুলেছে। যমুনা নদীর ওপর নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর কাজও প্রায় শেষ। মেট্রোরেল লাইন-৫ নর্দান রুটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে অক্টোবর মাসে। উদ্বোধন হয়েছে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় এ এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত। অত্যাধুনিক এ এক্সপ্রেসওয়েতে নেই কোনো স্টপওভার পয়েন্ট, সিগন্যালিং সাইন কিংবা অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা। একটি গাড়ি বাধাহীনভাবে মাত্র ৬-৭ মিনিটে পাড়ি দেবে ১২ কিলোমিটার পথ। উদ্বোধনের প্রায় দেড় বছর পর শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে পদ্মাসেতু প্রকল্পের। তবে আর্থিক অগ্রগতি এখনো ৯১ দশমিক ১০ শতাংশ। অর্থাৎ এ পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৯ হাজার ৭০৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। বরাদ্দ দেওয়া আছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সর্বশেষ ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত মেগা আটটি প্রকল্পের গড় অগ্রগতি ৮৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৭৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সবশেষ অক্টোবর পর্যন্ত বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) অগ্রগতি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পগুলোর আওতায় ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ১২ হাজার ৮৯৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬ হাজার ২৬৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। অন্য প্রকল্পগুলো হলো- মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের উদ্বোধন করা হয়েছে। এ টার্মিনাল পুরোদমে চালুর পর উন্নয়নশীল বাংলাদেশের বার্তা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে যাবে। পদ্মাসেতুতে রেল চলাচলে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে। মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ পর্যন্ত উদ্বোধন করা হয়েছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে তৈরি করা বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের উন্নয়নে নতুন পালক আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছরের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয় পদ্মাসেতু প্রকল্পের। কিন্তু এরপর প্রায় দেড় বছরের কাছাকাছি সময়ে প্রকল্পটির ভৌত কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে গত অক্টোবরে। প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৯ হাজার ৭০৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এটি বাস্তবায়নে ৩২ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে। এছাড়া পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ (ঢাকা-ভাঙ্গা) প্রকল্পে গত অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। এরই মধ্যেই রেল চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম (১২টি প্রকল্প যুক্ত) প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গত অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৩৩৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। অক্টোবর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৭৬১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এদিকে মেট্রোরেল প্রকল্পের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ গত বছর ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছে। এরপর গত ৪ নভেম্বর উদ্বাধন হয় আগারগাঁও-মতিঝিল অংশ। কিন্তু পুরো প্রকল্প শেষ হতে অপেক্ষা করতে হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। অক্টোবর পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৯৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৬৯ শতাংশ। এছাড়া ভৌত অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশোধিত ব্যয়সহ মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে শুরু থেকে গত অক্টোবর পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৬৭ হাজার ১১ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ প্রকল্পটি উৎপাদনে আসতে পারে।