এখনও বেতন হয়নি আড়াইশ’ কারখানায়
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ২৯, ২০২০ , ৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : গাজীপুরে দুই হাজার ৭২টি কারখানার মধ্যে আড়াই শতাধিক কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) পর্যন্ত তাদের বেতনভাতা পাননি। তবে এরই মধ্যে ৮১৪ কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানান গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) সিদ্দিকুর রহমান। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী রবিবার (৩ মে) থেকে বকেয়া পরিশোধ শুরু হবে। এসপি বলেন, গাজীপুরে বিজিএমইএ’র ৮৩০টির মধ্যে ৪০টি, বিকেএমইএ’র ১৩৮টির মধ্যে ২৭টি, বিটিএমইএ’র ১২২টির মধ্যে ১১টি এবং অন্যান্য ৯৮২টি কারখানার মধ্যে ১৮০টিসহ মোট ২৫৮টি কারখানায় শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন মঙ্গলবার পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে। জানা গেছে, জেলায় বিজিএমইএ’র ৩০৩টি, বিকেএমইএ’র ৩৭টি, বিটিএমইএ’র ৩৪টি এবং অন্যান্য ১৮০টি কারখানাসহ মোট ৫৫৪টি কারখানা চালু রয়েছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এডিশনাল এসপি) সুশান্ত সরকার জানান, বিভিন্ন অজুহাতে কারখানা মালিকেরা বেতনভাতা না দেওয়ায় শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও আন্দোলন করছেন। আবার কিছু কারখানা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ দেওয়া হয়েছে। সামনে ঈদ, এসব কারখানা খোলার দাবিতেও শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোগড়া এলাকার স্টাইলিশ গার্মেন্ট শ্রমিক ও স্টাফদের মার্চের বেতন না দিয়ে প্রায় এক মাস আগে বন্ধ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। ওই কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন পরিশোধ ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করেন। তারা কারখানার পার্শ্ববর্তী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে তিনটি মোটরসাইকেল ও ১০টি বাইসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন। এছাড়া আশেপাশের কারখানাগুলোয় ইট-পাটকেল ছুড়ে দরজা জানালার কাচ ভাঙচুর করেন। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শ্রমিক নেতারা বলেন, কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক অসন্তোষ থামিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু বকেয়া বেতনভাতা না দিলে শুধু আশ্বাস দিয়ে তাদের কতদিন এভাবে থামিয়ে রাখা যাবে বুঝতে পারছি না। স্টাইলিশ কারখানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক নারী শ্রমিক বলেন, আমরা মার্চের বেতন এখনও পাইনি। ওই বেতন না দিয়েই ১ এপ্রিল হতে কারখানা লে-অফ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এখন রোজা চলছে, সামনে ঈদ। লকডাউন থাকায় দিনমজুর স্বামীও বেকার। আমাদের ঘর ভাড়া, দোকান বাকির জন্য প্রতিদিনই বাড়ির মালিক ও দোকান মালিকদের কাছ থেকে কথা শুনতে হচ্ছে। স্বামী-সন্তান নিয়ে এখন খুবই কষ্টে চলছি। আমাদের মতো অনেক শ্রমিক ভাই-বোন এরকম কষ্টেই রয়েছে। এমন অবস্থায় করোনা ভয় ও লকডাউনকে উপেক্ষা করেই আন্দোলনে নামছি। গাজীপুর মহানগরীর ছয়দানা হারিকেন এলাকার বিএইচএমএল সোয়েটার কারখানার শ্রমিকদের মার্চের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়নি। বেতন দেওয়ার তারিখ কয়েকবার দেওয়া হলেও এখনও বেতন দেয়নি কর্তৃপক্ষ। কারখানার মালিক রাজিউল হাসান বলেন, ‘প্রণোদনার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে যাবে। কিন্তু কিছু প্রক্রিয়াগত কারণে তা বিলম্ব হচ্ছে।’ এর আগে তিনি নিয়মিতই বেতন পরিশোধ করেছেন বলে জানান। তিনি বলেন, করোনা সংকটে পড়ে বেতন বকেয়া পড়ে গেছে। বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী জানান, বকেয়া বেতনভাতার জন্যই মূলত কারখানার শ্রমিকেরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য বিক্ষোভ করছে। শ্রমিক ভাই-বোনেরা কষ্টে আছে। তাদের বেতন দিয়ে সংসার খরচ, বাড়ি ভাড়া, দোকান বাকি পরিশোধ করতে হয়। এখন তাদের হাতে টাকা নাই। তাই তারা রাস্তায় নেমেছেন। করোনার কারণে অনেকেরই রফতানির অর্ডার আটকে গেছে। বিশেষ করে ছোট কারখানাগুলো খুবই দুর্দিনের মধ্যে আছে, তারা অর্থসংকটে পড়েছে। তাই তাদের শ্রমিকদের বেতন আটকে গেছে। আমাদের বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ নেতারা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ সপ্তাহে না পারলেও আগামী সপ্তাহে বকেয়া বেতনের ব্যাপারটা সমাধান হবে। আগামী রবিবার (৩ মে) থেকে তারা কারখানাগুলোর বকেয়া বেতনভাতা পরিশোধ শুরু করবেন। এরপর আর পোশাক কারখানাগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষ থাকবে না। তিনি আরও বলেন, ‘অধিকাংশ কারখানা আমাদের সংগঠনের সদস্য নয়। তাদের দায়িত্ব আমরা নেবো না। সরকারকে (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে) পরামর্শ দিয়েছি বিজিএমইএ, বিকেএমইএ বা বিটিএমইএ’র বাইরে যেসব পোশাক কারখানা আছে তা বন্ধ করে দিতে। এদের কারণেই টোটাল গার্মেন্টস সেক্টরে বদনাম হয় এবং দায় আমাদের ওপর চলে আসে।