আজকের দিন তারিখ ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য এমারেল্ড অয়েল কেন উৎপাদনে ফিরতে বিলম্ব

এমারেল্ড অয়েল কেন উৎপাদনে ফিরতে বিলম্ব


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:২৮ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


দিনের শেষে প্রতিবেদক : ​সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেও উৎপাদন শুরু করতে পারেনি এমারেল্ড অয়েল। কোম্পানির আগের মালিকদের শেয়ার ট্রান্সফারের জটিলতায় উৎপাদন এখনো শুরু করতে পারেনি। বেসিক ব্যাংক ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ২০১৭ সালে কারখানা বন্ধ করে মালিকপক্ষ লাপাত্তা হয়। এরপর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সম্মতিতে ব্যবস্থাপনায় এসেছে জাপানপ্রবাসীর মিনোরি বাংলাদেশ।
কোম্পানিটির বিপুল পরিমাণ ঋণের সিংহভাগ নেয়া হয়েছে বেসিক ব্যাংক থেকে। সুদ-আসলে তা এখন এক শ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বেসিক ব্যাংক চাইছে আগের পর্ষদের মালিকানায় থাকা শেয়ারের বিনিময়ে এই ঋণ সমন্বয় করতে। কিন্তু ব্যবস্থাপনায় আসা মিনোরি বাংলাদেশ এতে রাজি নয়।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে কারখানাটিতে উৎপাদন শুরু হবে, এমন ঘোষণা এসেছিল ১২ জুলাই। গত কয়েক মাসে তিন গুণ হয়ে যাওয়া শেয়ারে এরপরও বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলছিলেন বহুজন। কিন্তু নির্ধারিত দিনের ৬ দিন আগে বৃহস্পতিবার ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জকে এমারেল্ড জানায়, তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। এবার আর কোনো নির্ধারিত সময় জানায়নি কোম্পানিটি, বলেছে, এই তথ্যটি তারা পরে জানাবে।
মিনোরি বাংলাদেশের নিয়োজিত পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, আমরা চেয়েছিলাম সেপ্টেম্বরে উৎপাদন শুরু করতে। কিন্তু এর আগে আমাদের বেশ কিছু কাজ শেষ করতে হবে। তা না হলে আমরা উৎপাদন শুরু করব, কিন্তু মুনাফা যাবে আগের পরিচালকদের কাছে। আফজালের তথ্য অনুযায়ী, শেরপুরে এমারেল্ডের কারখানা মেরামত করে চালুর উপযোগী করে ফেলা হয়েছে। তবে সমস্যা হচ্ছে পুরোনো পরিচালকদের ব্যাংকঋণ নিয়ে জটিলতা, তাদের শেয়ার স্থানান্তর আর কয়েকটি লাইসেন্স নবায়নের কাজ শেষ করতে না পারা।
মিনোরি পরিকল্পনা করছে, এমারেল্ড থেকে ধানের কুঁড়ার তেল বানিয়ে স্থানীয় বাজারে ছাড়ার পাশাপাশি তারা রপ্তানি করবে জাপানেও। এ জন্য রপ্তানি-সম্পর্কিত লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। শেয়ার নিয়ে জটিলতা কোথায় : বিএসইসি পর্ষদ পুনর্গঠনের আগে যারা মালিকানায় ছিলেন, তাদের হাতে এখনও কোম্পানিটির ২৫ শতাংশের মতো শেয়ার আছে। মিনোরি বাজার থেকে কিনেছে ৮ শতাংশের কিছু বেশি শেয়ার। তারা আগের পর্ষদ সদস্যদের শেয়ারের মালিকানা চায়। এর বিনিময়েই কারখানাটির যে ঋণ আছে, তার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী তারা। আফজাল হোসেন বলেন, ব্যাংকঋণ যা আছে তা পুনঃতফসিল করতে হবে। কিন্তু ব্যাংক এ বিষয়ে মামলা করেছে। তারা চাচ্ছে পরিচালকদের শেয়ারের বিপরীতে ঋণ মওকুফ করা। কিন্তু সেটি করা সম্ভব হবে না। আমরা চেষ্টা করছি।
অর্থাৎ বেসিক ব্যাংক চাইছে এমারেল্ডের আগের মালিকদের শেয়ার তাদের মালিকানায় থাকুক, কিন্তু মিনোরি চাইছে তারা শেয়ার দেবে না, টাকা পরিশোধ করবে। এ জন্য ঋণটি পুনঃতফসিল করতে চায় তারা। আর সুদ মওকুফ সুবিধাও চাইছে তারা। কিন্তু এই আলোচনাও এখনো চূড়ান্ত রূপ নেয়নি। বিএসইসি কোম্পানিটি চালু করার বিষয়ে অনেক আন্তরিক। কোম্পানিটি চালু করার প্রচেষ্টায় বিএসইসি নানাভাবে সহযোগিতা করেছে। এখন ব্যাংকঋণ ও শেয়ার ট্রান্সফারের বিষয়ে সহযোগিতা পাওয়া গেলে আমাদের উৎপাদন শুরু করা সহজ হবে। তবে বিএসইসির একজন কমিশনার এ বিষয়ে বলেন, ব্যাংকঋণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে কোম্পানি চালু করার ক্ষেত্রে বিএসইসি এ বিষয়টিতে সহযোগিতা করতে পারে। একই সঙ্গে শেয়ার ট্রান্সফারের ক্ষেত্রেও। তবে এ ক্ষেত্রে এমারেল্ড অয়েলকে আমাদের কাছে আবেদন করতে হবে। তবেই কমিশন এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারবে।
শেয়ারের মালিকানা না পাওয়ায় লাইসেন্স নবায়নে জটিলতা : এমারেল্ড ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জকে জানায়, করোনার সময় বেশ কিছু অফিস বন্ধ থাকায় তারা কয়েকটি লাইসেন্সের কাজ করতে পারেনি। পরিচালক আফজাল হোসেন জানান, এই লাইসেন্সগুলো রপ্তানিসংক্রান্ত। তিনি বলেন, ‘ইএফসি, আইএফসি, এনার্জি রেগুলেটরির লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে। তিনটি লাইসেন্স নবায়ন না করলে আমরা উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করতে পারব না। আবার শেয়ার ট্রান্সফার না হলে এ তিনটি লাইসেন্সও নবায়ন করা সম্ভব হবে না। তাই উৎপাদন শুরু করার আগে এই বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
কারখানা মেরামত, গ্যাসের পুনঃসংযোগ কতদূর : শেরপুর পৌরসভার শেরীপাড়ায় এমারেল্ডের কারখানা অবস্থিত। গত দুই মাস ধরেই সেখানে কর্মযজ্ঞ চলছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া যন্ত্রপাতির যা যা নষ্ট হয়েছে, সেগুলোর মেরামতকাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, ফ্যাক্টরিতে গ্যাস-সংযোগের জন্যও তিতাসের সঙ্গে কথা হয়েছে। টাকা পরিশোধ করলে লাইন সংযোগ দেয়া হবে। টাকাও আমাদের কাছে আছে।
নতুন পর্ষদে যারা : বন্ধ ও মালিক লাপাত্তা কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটির বোর্ড পুনর্গঠন করে বিএসইসি চেষ্টা করছে সেগুলোকে চালু করার। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ৩ মার্চ সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হককে চেয়ারম্যান করে নতুন বোর্ড করা হয়। পর্ষদের অন্য স্বাধীন পরিচালকরা হচ্ছেন বিআইবিএমের প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গোলাম সারওয়ার, সজিব হোসেইন ও সন্তোষ কুমার দেব।
কোম্পানির তথ্য : কোম্পানিটি ২০১৪ সালে ১০ টাকা করে অভিহিত মূল্যে দুই কোটি শেয়ার বিক্রি করে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে পুঁজিবাজার থেকে। কোম্পানিটি ধানের কুঁড়া থেকে তেল উৎপাদন করত এবং সে সময় বাজারে তাদের ব্র্যান্ড স্পন্দন বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার দুই বছর পর রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি মামলার কারণে ২০১৬ সালের ২৭ জুন থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় কোম্পানিটির। মামলার আসামি হয়ে মালিকপক্ষ উধাও হয়ে যায়।
শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বিএসইসি এ রকম রুগণ বেশ কিছু কোম্পানিকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েছে। পর্ষদ পুনর্গঠন করে স্বাধীন পরিচালক নিয়োগের পর এরই মধ্যে উৎপাদন শুরু হয়েছে আলহাজ টেক্সটাইলে, ডুবে যাওয়া রিংসাইন টেক্সটাইলেও শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক উৎপাদন। এমারেল্ড উৎপাদনে এলে এটা হবে তৃতীয় কোম্পানি, যেটিকে ডুবে যাওয়া থেকে টেনে তোলা হয়েছে। এর আগে একই প্রক্রিয়ায় উৎপাদন শুরু করেছে রিংসাইন ও আলহাজ টেক্সটাইল।