আজকের দিন তারিখ ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
/////হাইলাইটস///// করোনাকালের বাজেট পাস হচ্ছে সোমবার

করোনাকালের বাজেট পাস হচ্ছে সোমবার


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ২৮, ২০২০ , ৪:০৩ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////


দিনের শেষে ডেস্ক : স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতীয় সংসদে পেশকৃত বাজেটগুলোর মধ্যে এবারই প্রথমবারের মতো কোনো আলোচনা ছাড়াই পাস হতে যাচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের মেগাবাজেট। নিয়মানুযায়ী বাজেট পেশের পর এর উপর সরকারি ও বিরোধী দলীয় এমপিরা দীর্ঘদিন আলোচনা করে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব করা বাজেটে নানা সংশোধনী দেন। এরপর সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয় নতুন অর্থবছরের বাজেট।

কিন্তু মহামারি করোনার উর্দ্ধগতির মাঝে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে বসা এই অধিবেশনটিতে বাজেটের উপর কোনো আলোচনা করারই সুযোগ মেলেনি এমপিদের। গত ২৩ জুন মাত্র একদিন আলোচনা শেষে আগামীকাল মঙ্গলবার বাজেট পাস করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংসদ সচিবালয়ের একটি সূত্র।

এদিকে কোনো আলোচনার সুযোগ না দিয়েই এতো বড়ো একটি বাজেট সরকারের একক সিদ্ধান্তে পাস করে নেয়ার উদ্যোগে সমালোচনামূখর হয়ে উঠেছে নাটকীয়ভাবে শপথগ্রহণ ও সংসদে যোগদানকারী দল বিএনপি। ভার্চুয়াল অধিবেশন চালানোর প্রস্তাব দেয়া দলটির এমপিরা এটিকে দেশের ইতিহাসে নজিরবীহিন বলে অভিহিত করে প্রস্তাবিত বাজেটকে মানুষ মারার বাজেট হিসেবেও মন্তব্য করেছেন। দলটির পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো না হলেও বাজেট পাশের দিন বিএনপির এমপিরা সংসদে যাবেন না এমনটাই শুনা যাচ্ছে।

দলটির সংরক্ষিত আসনের এমপি রুমিন ফারহানা বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি এই বাজেট সেশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই বাজেট অধিবেশন আমরা ভার্চুয়াল করার আহবান জানিয়েছেলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য সে প্রস্তাব মিডিয়াতে এসেছে, সব জায়গায় প্রচার হয়েছে তারপরও সংসদ ভার্চুয়াল করা হয়নি। এর ফলে যেটি হলো সম্পূরক বাজেট ঘোষণার একদিন পরই সংসদ মুলতবি হয়ে গেছে। শুধু মাত্র ২৩ জুন বাজেটের উপর আলোচনা হয়েছে। কেবল একদিন আলোচনা করে বাজেট পাশ হওয়ার নজির বাংলাদেশের ইতিহাসে নেই।

তিনি বলেন, করোনা সংকটের মধ্যে যে বাজেট দিয়েছে, এটি নিয়ে সমালোচনা হবে সেটি সরকার আগ থেকেই আঁচ করতে পেরেছিল। সরকার চাইলেই এক মাসব্যাপী ভার্চুয়াল এই অধিবেশন চালাতে পারতো। সেখানে এমপিরা মন খুলে তাদের মতামত দিতে পারতেন। মূলত সরকারের ভূলগুলো ঢাকার জন্যই এক দিনের মধ্যে বাজেটের আয়োজন করেছে তারা।

বিএনপির আলোচিত এমপি হারুনুর রশিদ বলেন, এই করোনার সময় যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে সেটিকে কেউ স্বাগত জানায়নি। আওয়ামী লীগের যারা বাজেট বিশেষজ্ঞ তারাও স্বাগত জানাননি। বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সবাই বলেছেন, এটি একটা অস্বাভাবিক এবং কল্পনাবিলাসী বাজেট। করোনা সংকট উত্তরণের জন্য আমাদের যে রোডম্যাপ দরকার ছিল, এই বাজেটে সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। আমি সুস্পষ্টভাবেই বলতে চাই, সরকারে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই যেভাবেই হোক ক্ষমতায় থাকতে চায় তারা। সেজন্যই যেসতেনভাবে কোনো আলোচনা ছাড়াই বাজেট পাস করে নেয়া হচ্ছে। সরকারের এই ক্ষমতা লোভের কারণে আমরা পথ হারিয়েছি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট বড় কোনো সংশোধনী ছাড়াই আগামীকাল (৩০ জুন) জাতীয় সংসদে পাস হচ্ছে । পরদিন ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে এ বাজেট। ১১ জুন প্রস্তাবিত ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার এই বাজেটে ছোটখাটো দু-একটি বিষয় ছাড়া তেমন কোনো বড় সংশোধনীর সম্ভাবনা নেই। তবে মোবাইল ফোনের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত কর প্রত্যাহার করা হতে পারে। একইভাবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় নিয়ে জনস্বাস্থ্যের গুরুত্ব বাড়াতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কিছুটা বাড়ানো হতে পারে। কর ও ভ্যাট কাঠামোতে বড় কোনো পরিবর্তনও আসছে না। এর বাইরে তেমন কোনো সংশোধনীর আলোচনা নেই।

করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাবে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও করোনা মোকাবিলায় এবারের বাজেটে সর্বোচ্চ কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। যদিও মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটভিত্তিক সেবার ক্ষেত্রে কিছুটা ভ্যাট ও ট্যাক্স বেড়েছে এবারের বাজেটে। বিভিন্ন মহল থেকে মোবাইল ব্যবহারের ওপর কর কমানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নিত্যপণ্য চাল, চিনি, ভোজ্যতেল, পিয়াজ এবং লবণের মতো অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক কমানো হয়েছে বাজেটে। কর ছাড়ের বাজেট হওয়ায় অর্থায়ন ও বাস্তবায়নে কিছুটা চ্যালেঞ্জ যোগ হয়েছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত রয়েছেন।

এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনীতি সচল রাখা, মানুষের জীবন রক্ষা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য চারটি কৌশলের কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। সেগুলো হচ্ছে-সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে কর্মসৃজনকে প্রাধান্য ও বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত, ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা প্রবর্তন যাতে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরুজ্জীবিত হয় এবং দেশে-বিদেশে উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তৃতীয় কৌশলটি হলো হতদরিদ্র ও কর্মহীন হয়ে পড়া জনগণকে সুরক্ষা দেয়া ও বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা। তবে এ কৌশলটি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করা হচ্ছে যাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।