কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ১৩, ২০২১ , ১২:০১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
লকডাউনে শিল্পকারখানা খোলা রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন সংকট। একদিকে অর্থনীতি সচল রাখার জন্য শিল্পকারখানা খোলা রাখার বিষয়ে মালিক পক্ষ জোরালো অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। স্বাস্থ্য খাতের চরম সংকটকালে হাসপাতালগুলোতে যেখানে ঠাঁই নেই, সেখানে কলকারখানায় কর্মরত এই শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়লে তার দায় কে নেবে? জানা গেছে, কারখানাগুলোতে দিন দিন বাড়ছে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা। শ্রমিকরা অভিযোগ করছেন, লোক দেখানোর নামে কারখানা গেটে স্বাস্থ্যবিধি লিখে রাখলেও কারখানার ভেতর শ্রমিকদের বসার ক্ষেত্রে নিরাপদ দূরত্ব রাখছে না। মাস্ক নেই, নেই পিপিই। এমন অবস্থা যদি হয় কারখানাগুলোর চিত্র- তাতে শঙ্কা বেড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। দেশে দীর্ঘদিন করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকার পর গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। এরপর মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দ্রুত সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষের মধ্যে যেমন উদাসীনতা রয়েছে, তেমনি স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকারি জোর চেষ্টাও সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। লকডাউনের ঘোষণা দিয়েও কার্যকর করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ এবং দেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ জোগান দেয় এ খাত। এই বিপুল মুনাফার জোগান আসে মূলত শ্রমিকদের সস্তা শ্রম থেকে। বছরের পর বছর সরকার বাজেটের মাধ্যমে গতানুগতিক পথে- এছাড়া বিভিন্ন অর্থনৈতিক অজুহাতে এ শিল্পের মালিকদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। কিন্তু দেখা যায়, পোশাক শ্রমিকদের বেতনভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তা লেগেই থাকে। করোনা ইস্যুতে নতুন করে সংকটে পড়ছে তৈরি পোশাক খাত। করোনার প্রভাবে সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে কোনো ধরনের শিল্পকারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই না করতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর শিল্পমালিকদের নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু এ নির্দেশনা উপেক্ষা করেই গত বছর করোনাকালীন বেশকিছু গার্মেন্টস কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা অমানবিক। এমন ঘটনা আমরা এবার দেখতে চাই না। রমজান আসন্ন। এরপর ঈদ। এ সময়ে শ্রমিকদের বেতনভাতা যেন ঠিকভাবে পান তাও নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকরা যেন সঠিক সময়ে তাদের বেতন বুঝে নিতে পারেন- বিজিএমইএ নিশ্চয় বিষয়টি তদারকি করবে। দেশের বর্তমান দুর্যোগময় করোনা পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের সামাজিক অসন্তোষ দেখতে চাই না। পাশাপাশি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে। কর্মক্ষেত্রে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, নিয়মিত মেঝে পরিষ্কার করা, পুরো কর্মস্থল পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা, হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজেশনের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সরবরাহ করা এবং যেখানে প্রয়োজন সেখানে বিনামূল্যে কর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) সরবরাহ করতে হবে। তাহলেই শ্রমিকদের জীবনের সুরক্ষার পাশাপাশি ধীরে ধীরে দেশের অর্থনীতি কিছুটা প্রাণ ফিরে পাবে বলে আমাদের আশাবাদ।