আজকের দিন তারিখ ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য খেলাপি ঋণের ৪৫ শতাংশ ৫ ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত

খেলাপি ঋণের ৪৫ শতাংশ ৫ ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ১, ২০২০ , ৩:১২ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


দিনের শেষে প্রতিবেদক :   রীতি পাল্টাতে পারছে না দেশের ব্যাংকখাত। ব্যাংকগুলোর ছোট ঋণের পরিবর্তে বড় ঋণ দিতে বেশি আগ্রহ। এতে বড় ঝুঁকি তৈরি করছে বৃহৎ অঙ্কের ঋণ। ফলে অল্প সংখ্যাক গ্রাহকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে ব্যাংক খাত। দেশে ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ১০ ব্যাংকের কাছেই রয়েছে মোট খেলাপি ঋণের ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ১০টি ব্যাংকের মধ্যে পাঁচটিতে মোট খেলাপি ঋণের ৪৫ দশমকি ৮ শতাংশ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে। এতে নানা ধরনের বিপর্যয় নেমে আসছে কোন কোন ব্যাংকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ আর্থিক স্থিতিশীলতা পর্যালোচনা (ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট ) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে ১০ ব্যাংকের কাছেই রয়েছে মোট খেলাপি ঋণের ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ। বাকি ৫০ ব্যাংকে খেলাপির হার ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ। আর ১০টি ব্যাংকের মধ্যে পাঁচ ব্যাংকের কাছেই রয়েছে মোট খেলাপি ঋণের ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ। বাকি ৫৫ ব্যাংকে খেলাপির পরিমাণ ৫৪ দশমিক ২ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর খেলাপি ঋণের সবচেয়ে বড় একটি অংশ পুনঃতফসিল হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরই ৫২ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ নবায়ন করা হয়েছে।

এর আগে ২০১৮ সালে ২৩ হাজার কোটি টাকা, ২০১৭ সালে ১৯ হাজার কোটি টাকা, ২০১৬ সালে ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৫ সালে ১৯ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এদিকে গত বছর খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের দিক থেকে শীর্ষে ছিল শিল্প খাত। ২০১৯ সালে এ খাতে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয় ৩০ দশমিক ১ শতাংশ। এর পরেই ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ রয়েছে তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে। এছাড়া ১১ দশমিক ৭ শতাংশ ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ করা হয়েছে ফরেন ট্রেডে। অন্যান্য ১১ দশমিক ৪ শতাংশ, বাণিজ্যিক ঋণে ১০ শতাংশ, চলতি মূলধনে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ, অবকাঠামোতে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং কৃষি খাতে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে।

চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের ডিসেম্বর প্রান্তিকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন পর্যালোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাংক ঋণ গ্রহীতাদের সক্ষমতা কমায় ঋণ আদায়ে শিথিলতা এসেছে। ফলে ব্যাংকগুলো এবার ঋণের সুদের আয় থেকে বঞ্চিত হবে। এতে ব্যাংকগুলোর আয় কমে যাবে। এসব কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন করে ঋণ বিতরণের জন্য কম সুদে তহবিলের জোগান, সুদ বাবদ ভর্তুকি দিয়ে ব্যাংকগুলোর ক্ষতি মেটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, আগামী বছর থেকে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে। ফলে আগামী ছয় মাস উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং শিল্প খাত ঘুরে দাঁড়াবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা কমায় এর দাম কমে গেছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স কমে যাবে। দেশের অর্থনীতিকে নেতিবাচক অবস্থা মোকাবিলা করতে হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা পর্যালোচনা প্রতিবেদনে মূলত বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও সক্ষমতার চিত্র তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম মূল্যায়ন করা হয়। আর্থিক খাতের গতি-প্রকৃতি, স্থিতিশীলতা ও তার প্রভাব এবং তা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপ, সম্পদের মান, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও তারল্যের নির্দেশকগুলো বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে এ প্রতিবেদনে।