আজকের দিন তারিখ ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য গোপালগঞ্জে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি

গোপালগঞ্জে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: অক্টোবর ২৬, ২০২২ , ৫:৫৩ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি :  গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষানী আরতী বিশ্বাস (৩৫)। তার স্বামী বিধান বিশ্বাস এক কৃষক। সংসারে রয়েছে দুই ছেলে মেয়ে। স্বামীকে সাথে নিয়ে এ বছর ২ বিঘা জমিতে শীতকালীন সবজিসহ বিভিন্ন ফলের চাষ করেছিলেন। স্বপ্ন ছিল জমিতে যেসব ফলস ফলবে তা বাজারে বিক্রি করে ছেলে মেয়ের পড়ালেখাসহ সংসারের খরচ চালাবেন। কিন্তু ঘূর্নিঝড় সিত্রাং-এর তান্ডবে সেই স্বপ্ন এখন ফিকে হতে বসেছে। এখন দিন রাত পরিশ্রম করে চেষ্টা করছেন জমির ফসল বাঁচতে। শুধু কৃষানী আরতী বিশ্বাস নয় এমন গল্প গোপালগঞ্জ সদর, টুঙ্গিপাড়া ও কাশিয়ানী উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দাবি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা।

সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত থেকে দমকা হওয়ার সাথে প্রচন্ড বৃষ্টি নিয়ে গোপালগঞ্জে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। রাতভর চলে সিত্রাং-এর তান্ডব। কৃষানী আরতী বিশ্বাসের মত কয়েক হাজার কৃষকের প্রায় চার হাজার হেক্টর জমির উঠতি আমন ধান, টমেটো গাছ, শীতকালীন শাক-সবজি, পেঁপে ও কলা বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঘের পাড়ে লাগানো টমেটো গাছসহ অন্যান্য গাছ জমিতে হেলে পড়েছে। নষ্ট হয়েছে গাছে আসা ফুল ও ফল। এসব গাছে আর ফুল ও ফল না আসার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। পেঁপে ও কলা বাগানে সব গাছ ভেঙে গিয়ে নষ্ট হয়েছে। এসব গাছে আর ফল না হবে না।

নষ্ট হওয়া এসব ক্ষেতে এক একজন কৃষক ধার, দেনা আর নিজের জমানো টাকা দিয়ে ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করেছে। এখন ফসল নষ্ট হওয়ায় সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে হচ্ছে তাদের। ধার দেনা শোধ তো দূরের কথা কিভাবে ছেলে মেয়ের পড়ালেখা আর সংসার খরচ চালাবেন সেই চিন্তায় পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।

অর্থের অভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়া এসব ক্ষেতে নতুন করে ফসল লাগতে বিপাকে পড়েছেন তারা। নতুন ফসল রোপণ করতে কৃষি বিভাগের কাছে পরামর্শসহ আর্থিক অনুদানের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি, কলা ও পেঁপের চাষ করা হয়েছিল। আমন ধানের ১০ ভাগ ক্ষতি হয়েছে। তবে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে লতা জাতীয় সবজি এবং কলা ও পেঁপে ক্ষেতের। কৃষি বিভাগ ধারণা করছে এ ঝড়ে জেলায় ৩ হাজার ৯’শ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক শ্যামল মালাকার বলেন, গত বছর লাভ হওয়ায় এ বছর সাড়ে ৬ কাঠা জমিতে টমেটোর চাষ করেছি। গাছে ফুল ও ফল এসেছে। আগাম এসব ফল তুলতে পারলে টমেটো প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি করে এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা লাভ করতে পারতাম। কিন্তু গাছ নষ্ট হওয়ায় যে ফুল এসেছে তাতে আর ফল হবে না। এখন আমি পুরোপুরি সর্বশান্ত হয়ে গেলাম।

কৃষক ভজন মালাকার বলেন, ‘পৌনে দুই বিঘা জমি নিয়ে আমি কলাগাছের চাষ করেছি। ঝড়ের একদিন আগে জমিতে ৫ হাজার টাকা সার কিনে দিয়েছি। কিন্তু ঝড়ে আমার সব গাছ ভেঙে গেছে। একটি গাছেও ফল ধরবে না। যে ক্ষতি হয়েছে তা আর কোন ভাবেই পূরণ হবে না। কৃষি বিভাগ যদি আমাদের সহায়তা না করে তাহলে আমাদের মরণ ছাড়া আর কোন পথ খোলা থাকবে না।’

ফসলের ক্ষয় ক্ষতির সত্যতা নিশ্চিত করে গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, ‘ক্ষতির পরিমাপ জরিপ করতে আমাদের কৃষি বিভাগের কর্মীরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। এখন পর্যন্ত আমরা ৩ হাজার ৯’শ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করেছি। এসব ক্ষতি পুষিয়ে নেবার জন্য ইতিমধ্যে সরকারকে জানানো হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ব্যাপারে কোন ধরনের ব্যবস্থা নিবে না আর্থিক প্রণোদনা দিবে তা সরকার সিদ্ধাস্ত নিবে। এরপর আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে পারবো।’

তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগের সকল কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এ ক্ষতি যাতে আরও কম হয়, কৃষকরা যাতে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে সেজন্য আমরা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।