আজকের দিন তারিখ ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব: অরক্ষিত উপকূলে প্রয়োজন টেকসই বেড়িবাঁধ

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব: অরক্ষিত উপকূলে প্রয়োজন টেকসই বেড়িবাঁধ


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ২৮, ২০২১ , ১২:০৮ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


অরক্ষিত আর অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে দেশের বিশাল সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল। ২২টি উপকূলীয় জেলায় সাড়ে ৪ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। প্রতি বছরই ঝড়-তুফান ও ঘূর্ণিঝড় উপকূলবাসীকে তাড়া করে ফেরে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস গত বুধবার সকালে ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে আঘাত হানার পর ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। বাংলাদেশে আঘাত না হানলেও ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের পানি বেড়ে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের ২৭টি উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ভোরের কাগজের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির যে চিত্র উঠে এসেছে, তা খুবই উদ্বেগজনক। বিশেষ করে দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের বাঁধ, সড়ক ও ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ১০ হাজার জনঅধ্যুষিত দ্বীপটির অর্ধেকের বেশি মানুষ আশ্রয়চ্যুত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার উপকূল প্লাবিত হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে শত শত গ্রাম; তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, ভেসে গেছে মাছের ঘের। বিভিন্ন স্থানে নদীতে বিলীন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু বাঁধ। এতে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় অনেকে আশ্রয় নিয়েছে রাস্তার ওপরে। কোথাও কোথাও রাস্তা ভেঙে ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ। দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশুসহ ৭ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। জানা যায়, বাংলাদেশের ১৯ জেলার ১৪৭ উপজেলার ১৩ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা উপকূলীয় অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। ষাটের দশকে নির্মিত উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধের বেশিরভাগই এখন নাজুক হয়ে পড়েছে। নামে মাত্র থাকা উপকূলের বেড়িবাঁধ সংস্কার ও মেরামতের নামে প্রতি বছর চলে সীমাহীন দুর্নীতি, সরকারি অর্থের বেশুমার লুটপাট। ঠিকাদার, প্রকৌশলী আর ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বরাদ্দের অর্থ ভাগাভাগি করে নেয়ার কারণেই উপকূলে নামকাওয়াস্তে বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার হয়। সামান্য জোয়ারেই সেসব বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয় প্রতি বছর। দুই বছর আগের ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে মাইলের পর মাইল বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে তালিয়ে যায় ফসলি জমি, বহু জনবসতি। সিডরের ১৩ বছর পরও দক্ষিণাঞ্চলের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার হয়নি। পিছিয়ে থাকা এ জনপদ ও বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না কোনোভাবেই। উপকূলীয় বাসিন্দাদের সুরক্ষিত রাখতে সরকার শত শত কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও তাদের ঝুঁকিমুক্ত জীবন নিশ্চিত হচ্ছে না কোনোভাবেই। উপকূলের বিপুল জনগোষ্ঠী জাতীয় অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। এরপরও উপকূলের প্রায় ৪ কোটি মানুষ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দিন দিন ঝুঁকি বাড়ছে। বিস্তীর্ণ উপকূলীয় জনপদকে সুরক্ষায় টেকসই উন্নয়ন পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। ইয়াসে যেসব এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের সহায়তায় দ্রুত সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ নিতে হবে।