চট্টগ্রামে অস্থির চালের বাজার, আমদানি ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি ব্যবসায়ীদের
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: আগস্ট ১১, ২০২২ , ৩:৩৮ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য
চট্টগ্রামের চালের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, পাহাড়তলী ও চাক্তাই চালপট্টিতে উৎপাদিত ও আমদানিকৃত চালের বিশাল মজুত রয়েছে। অতি মুনাফার লোভে সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় পাইকারি বাজারে বাড়ছে চালের দাম। এদিকে পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারেও দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারের কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সঙ্ককট সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
খাতুনগঞ্জের আড়তদার সিরাজুল ইসলাম জানান, ডলারের উচ্চমূল্য এবং ভারতে চালের দাম বাড়তি থাকার কারণে চাল আমদানিতে খরচ বেড়ে গেছে। যেসব চালের চাহিদা রয়েছে সেগুলো একটি চক্রের মাধ্যমে গুদামজাত হয়ে যাচ্ছে। ফলে চাহিদামতো চাল পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে কৃত্রিম সঙ্ককট তৈরি হওয়াতে দাম বাড়ার এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে।
চট্টগ্রামের বৃহত্তর পাইকারি চালের বাজার পাহাড়তলীতে দেখা গেছে, মিনিকেট (চিকন চাল) ৫০ কেজির বস্তায় ৪শ’ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৫শ টাকা, নাজিরশাইল ৩ হাজার ৯শ ও পাইজাম ২৭শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বস্তাপ্রতি ৩শ’ টাকা বেড়ে জিরাশাইল সাড়ে তিন হাজার টাকা, চিকন মিনিকেট ২ হাজার ৭শ’ টাকা, চিকন আতপ ৩ হাজার ৮শ’ টাকা ও বিআর-২৮ জাতের চাল ২ হাজার ৭শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চিনিগুঁড়া চালে। বস্তায় ৯শ’ টাকা বেড়ে চালটির দাম এখন ঠেকেছে ৫ হাজার ৯শ’ টাকায়। তাছাড়া মোটা আতপ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকায়।
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দীন বলেন, বর্তমানে চালের বাজার খুবই অস্থির। দিন দিন দাম বাড়ছে এবং তা ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। তেলের দাম বাড়ার কারণে মিল মালিক ও বিভিন্ন সিন্ডিকেট মিলে চালের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু এখানে আমাদেরও কিছু করার নেই। বরং চালের দাম বাড়ার কারণে আমাদের বেচাবিক্রিও কমে গেছে। সরকার ভারত থেকে যে চাল আমদানি করেছে সেখান থেকে আমরা যে পরিমাণে স্বর্ণা চাল পেয়েছি তা আমাদের স্থানীয় চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। তিনি বলেন, মিল মালিক ও করপোরেট গ্রুপ যারা চাল মজুত করে রাখছে, তারা চালের দাম প্রচুর বাড়িয়ে দিয়েছে। এলসি করা চাল বাজারে এখনও প্রবেশ করেনি।
চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও পাইকারি চাল ব্যবসায়ী শান্ত দাশগুপ্ত বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে আমাদেরকে এখন প্রতি ট্রাকে পাঁচ হাজার টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। কাজেই চালের বাজারে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে তা এত সহজে কাটবে না। তিনি বলেন, ভাদ্র মাসে নতুন চাল বাজারে আসার কথা। বর্তমানে ১৫ শতাংশ ডিউটি দিয়ে চাল আমদানি করতে হয়। এটি যদি ফ্রি করে দিত বা কমিয়ে দিত, তাহলে কিছুটা কমত।
জানা যায়, ভারতীয় নাজিরশাইল চাল প্রতি বস্তা (২৫ কেজিতে এক বস্তা) বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮৫০ টাকায়। আগে এ চাল বিক্রি হতো ১ হাজার ৬৮০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা। জিরাশাল ৫০ কেজি বস্তার এক বস্তা ভালো চাল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৮৫০ টাকা করে। এ চাল বস্তাপ্রতি ৩০০ টাকা বেড়েছে। আর মোটা আতপ বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। আর স্বর্ণা সিদ্ধ চালের দাম বেশি বেড়ে গেছে। আগে ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪৫০ টাকায়।
চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম বলেন, চালের দাম বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে। এছাড়া ডলারের অবস্থা তেমন ভালো না, ডিউটিও বাড়তি। আমদানি করা চাল যদি বেশি পরিমাণে বাজারে না আসে, তাহলে চালের আরও ক্রাইসিস হতে পারে। চালের দামও আরও বাড়তে পারে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, করোনাকালীন সময় থেকে চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে চালের বাজার দর বেড়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হলে জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকারসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। না হয় সাধারণ মানুষ তাদের কাছে বলির পাঠা হয়েই থাকবে।