আজকের দিন তারিখ ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় চট্টগ্রাম নিয়ে চিন্তা করার কি কেউ নেই?

চট্টগ্রাম নিয়ে চিন্তা করার কি কেউ নেই?


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ৩, ২০২০ , ৪:০৬ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


শ্যামল দত্ত, সম্পাদক : চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসার চরমতম বেহাল অবস্থা দেখে এক বন্ধু ফোন করে বললেন, এই শহরটিতে অন্তত ৫ হাজার ব্যবসায়ী আছেন, যারা কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার মালিক। ১ হাজার ব্যবসায়ী আছেন, যারা ৫০০ কোটি টাকার মালিক এবং ৫শ’র বেশি ব্যবসায়ী আছেন যারা ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার মালিক এবং এদের মধ্যে অনেকের সম্পদের পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। কিন্তু এই সমস্ত ব্যবসায়ী কখনো চট্টগ্রামে একটি স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলায় আগ্রহী হননি, কোনো ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়তে ভূমিকা রাখেননি। ব্যবসা করেছেন, টাকা কামিয়েছেন, বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, বিদেশি পাসপোর্ট নিয়েছেন, চিকিৎসার প্রয়োজন হলে নিমিষেই সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক কিংবা নিদেনপক্ষে ব্যাঙ্গালুর, চেন্নাই অথবা কলকাতায় পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু করোনার লকডাউনে কপাল পুড়েছে এই ব্যবসায়ীগোষ্ঠীর। বিদেশ যাওয়া বন্ধ। তাই বিদেশে চিকিৎসাও বন্ধ। যারা চতুর তারাআগেভাগেই চলে গেছেন বিদেশে। আর যারা ধুরন্ধর, তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিপদ বুঝে ফ্লাইট চার্টার্ড করে চলে যাচ্ছেন বিদেশে। বিশেষ বিমানে করে যে ‘ব্যবসায়ী বনাম রাজনীতিবিদ’ প্রথম বিদেশে চলে গেছেন তিনি চট্টগ্রামের কৃতী সন্তান ঋণখেলাপির মামলা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছ থেকে বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তি এম মোরশেদ খান। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ সরকারের কাছে আবেদন করেছেন ফ্লাইট চার্টার্ড করে বিদেশে পাড়ি দেয়ার জন্য। এখন শুধু সরকারের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়ার অপেক্ষায়।

করোনার এই চলমান দুর্যোগে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের এই বিশাল ধনাঢ্য জনগোষ্ঠীর অসহায়ত্ব এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ, যন্ত্রণা ও মুখরোচক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের সবচেয়ে ধনী পরিবার বলে পরিচিত এস আলম ব্যবসায়ীগোষ্ঠীর পাঁচ ভাইয়ের পুরো পরিবার যখন করোনা আক্রান্ত এবং চট্টগ্রামের চিকিৎসাব্যবস্থার অপ্রতুলতায় তাদের অসহায়ত্ব দেখে অনেকে কষ্ট পেলেও মুচকি হেসেছেন কেউ কেউ। এই পরিবারের অভিভাবক হিসেবে পরিচিত সবার বড় ভাই মোরশেদ আলম মৃত্যুবরণ করলে সামাজিক গণমাধ্যমে শোকের পাশাপাশি আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। যারা চাইলে চট্টগ্রামে কয়েকটি হাসপাতাল নিমিষে কিনে ফেলতে সক্ষম, তাদের এই করুণ দশা দেখে সহানুভূতির পাশাপাশি তাদের সমালোচনাও কম হয়নি। আইসিইউর অভাবে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মতো একটি সাধারণ হাসপাতালে চিকিৎসারত আইসিইউ থেকে এক ভাই রশিদুল আলমকে বের করে বড় ভাই মোরশেদ আলমকে ঢুকানো হয়েছিল বাঁচানোর জন্য। শেষ পর্যন্ত মোরশেদ আলমকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। অবশেষে এই পরিবারটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আশ্রয় নিয়েছেন উন্নত চিকিৎসার জন্য। আলোচনায় আছে, ঢাকায় এসে তারা পুরো একটি হাসপাতালের ফ্লোর ভাড়া নিয়ে নিয়েছেন। চট্টগ্রামে বিদ্যমান চিকিৎসাব্যবস্থায় কোনোরকম আস্থা রাখতে পারেননি তারা। আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে করে পুরো পরিবার চলে এসেছে ঢাকায়। এর মধ্যে গত কয়েক সপ্তাহে চট্টগ্রামে মৃত্যুর মিছিল ক্রমাগত দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। আরো কয়েকজন ব্যবসায়ী চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেছেন যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে, চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বায়তুশ শরফের পীরসহ কয়েকজন ধর্মীয় নেতা, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতা- এমনকি চিকিৎসকরাও আছেন এই মৃত্যুর তালিকায়।

ঢাকার পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রাম হলেও এই শহরের স্বাস্থ্যব্যবস্থার অপ্রতুলতা নিয়ে লেখালেখি কম হয়নি। কিন্তু সেই চিকিৎসাব্যবস্থা যে এতটাই খারাপ, তা সম্ভবত সবার ধারণার বাইরে। বাংলাদেশের সব কিছু যেমন কেন্দ্রীভূত ঢাকায়, তেমনি ঢাকার বাইরে সর্বত্র চেহারাও প্রায় একই রকম। এমনকি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা নামে চট্টগ্রামের হলেও চট্টগ্রামকে কখনো তারা তাদের কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু করেননি। তারা থাকেন দুবাই, সিঙ্গাপুর, কানাডা কিংবা ঢাকায়। চট্টগ্রামে ব্যবসা করলেও তাই চট্টগ্রামে অবকাঠামো গড়ে তোলার ওপরে তারা কখনো জোর দেননি। তাদের সন্তান পড়াশোনা করে বিদেশে, যে কারণে চট্টগ্রামে একটি ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রয়োজন অনুভব করেননি। চট্টগ্রামে একটি ভালো হাসপাতাল গড়ার প্রয়োজন মনে করেননি এই হাজার কোটি টাকার মালিকরা। কারণ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক তো আছেই। চট্টগ্রামের নামকরা তিনটি হাসপাতাল- ইউএসটিসি গড়ে তুলেছিলেন ডাক্তার নুরুল ইসলাম, ইমপেরিয়েল হাসপাতাল গড়ে তুলেছেন ডাক্তার রবিউল হোসেন এবং একদল চিকিৎসক মিলে গড়ে তুলেছেন ম্যাক্স হাসপাতাল। ব্যবসায়ীরা পারেননি ল্যাবএইড, স্কয়ার কিংবা অ্যাপোলোর মতো উন্নতমানের হাসপাতাল গড়ে তুলতে।

চট্টগ্রামে ভালো একটি বিনোদন কেন্দ্র নেই, একটি ভালো পর্যটন কেন্দ্র নেই। একটি উন্নত, আধুনিক ও স্বাস্থ্য আর শিক্ষায় সমৃদ্ধ শহর গড়তে এই রাজনৈতিক-ব্যবসায়ীগোষ্ঠীর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি কখনো। তাই করোনার এই অসহায় মুহূর্তে মরতে হচ্ছে সবাইকে। গরিবরা মরছে চিকিৎসার অভাবে, বড়লোকরা মরছে ভালো চিকিৎসার অপ্রতুলতায়। চট্টগ্রামের মতো অসহায় অবস্থা সম্ভবত বাংলাদেশের আর কোনো শহরে নেই। প্রায় ৩ হাজার শনাক্ত করোনা রোগীর এই শহরে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ফিল্ড হাসপাতাল মিলে চিকিৎসা বেড মাত্র ৩৫০টি। প্রায় ১ কোটি লোকের এই চট্টগ্রাম শহরে করোনা রোগীর জন্য আইসিইউ মাত্র ১২টি। ফলে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু ঘটছে অসংখ্য মানুষের। সামান্য অক্সিজেন দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন আলোচনা চট্টগ্রামের কেন এই দশা? বিএনপির আমলে ১০ জন মন্ত্রী এবং মন্ত্রী পদমর্যাদার নেতৃবৃন্দ ছিল চট্টগ্রামে। বর্তমান সরকারের আমলেও এই সংখ্যা কম নয়। কিন্তু চট্টগ্রামের দুঃখ কিছুতেই ঘুচে না। চট্টগ্রাম নিয়ে ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদদের নির্লিপ্ত অবহেলা আর বঞ্চনার ইতিহাস বড়ই দীর্ঘ। তাই প্রশ্ন উঠছে, চট্টগ্রামের প্রতি নির্মোহ ভালোবাসা আর উপলব্ধি নিয়ে চিন্তা করার কি কেউ নেই? একজন মহিউদ্দিন চৌধুরীকে কী আর কখনো পাওয়া যাবে না- যিনি ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতা বা মন্ত্রী হওয়ার লোভ ছেড়ে শুধু চট্টগ্রাম নিয়ে ভাববেন? সংকটে-দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বলবেন ‘আঁই ত আছি’।

৫০ বছরের ইতিহাসের এই বাংলাদেশটাকে পালাক্রমে শাসন করেছে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি। মাঝখানে প্রায় এক দশক এরশাদের জাতীয় পার্টি। এর মধ্যে চট্টগ্রামে অনেকেই আছেন যারা দুটি সরকারের আমলেই রাজত্ব চালিয়েছেন। যেমন মোরশেদ খান এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ আরো অনেক নেতা দুটি সরকারেই মন্ত্রী ছিলেন। রাজনীতির প্রয়োজনে এক আমলের রাজনীতিবিদরা আরেক আমলকে কালো অধ্যায় হিসেবে অভিহিত করলেও চট্টগ্রামের ভাগ্যে উন্নয়নের সাদা অধ্যায় কখনোই দেখা যায়নি। চট্টগ্রামের দুঃখ চাক্তাই খাল খননের কাজ কখনো শেষ হয়নি, রাস্তাঘাটের যথাযথ উন্নয়ন হয়নি, পাহাড়-কাটা থামেনি, বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম শহরে যেতে অপরিসীম যানজট সংকটের সমাধান হয়নি। ফ্লাইওভার নির্মাণ হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে, তাই যানবাহনের জটের সমস্যার অবসান হয়নি। এখন ফ্লাইওভারের মধ্যেই পানি জমে থাকে। এরকম ফ্লাইওভারে পানি জমার বিরল রেকর্ড সম্ভবত একমাত্র চট্টগ্রামেরই। সুধীজনদের মনে হয় এই শহর অভিভাবকহীন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলে সব দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বলে এই দায়িত্ব চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। আবার উভয়ে মিলে বলে জলাবদ্ধতার সংকটের সমাধানের দায়িত্ব চট্টগ্রাম ওয়াসার। ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নানা সময়ে ক্ষোভ ঝাড়লেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।

আবার অন্যদিকে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে এক ধরনের অভূতপূর্ব সখ্য ও সহযোগিতা আছে। রাজনৈতিক বিভাজনকে পাশে রেখে তারা আত্মীয়তা করেন, ব্যবসায় জড়ান একে অপরের সঙ্গে। ফলে কোনো রাজনৈতিক শাসনামলই তাদের জন্য কোনো বৈরী পরিবেশ তৈরি করে না। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি এমনকি জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে অদ্ভুত মিত্রতা ও ব্যবসায়িক আঁতাত আছে, যা চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের অন্য কোথাও দেখা যায় না।

চট্টগ্রামের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের পেছনে কী কারণ আছে তা নিয়ে হয়তো সমাজবিজ্ঞানীরা গবেষণা করতে পারেন কিন্তু যে জিনিসটা চট্টগ্রামের চিন্তাশীল মানুষকে ভাবনায় ফেলে দিয়েছে তা হলো শিক্ষা-সংস্কৃতি আর বৈচিত্র্যের উপাদানে সমৃদ্ধ চট্টগ্রাম কেন একটি মৌলবাদী, ধর্মীয় গোঁড়া ও উগ্রবাদী চিন্তার চর্চার কেন্দ্র হয়ে উঠল? কবিয়াল রমেশ শীল, কবি আলাওল, আব্দুল
করিম সাহিত্য বিশারদের চট্টগ্রাম কিংবা মাস্টারদা সূর্যসেন ও বীরকন্যা প্রীতিলতার চট্টগ্রাম, ভারতীয় উপমহাদেশে সাহিত্য-সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্র চট্টগ্রাম- কেন এমন একটি সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় হানাহানির কদর্য চেহারা নিয়েছে এটা ধারণা করা চিন্তাশীল মানুষের পক্ষে কঠিন। চট্টগ্রামের এই সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ ধনাঢ্য সম্প্রদায়, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক সমাজ চট্টগ্রামের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, শিক্ষা সংস্কৃতি ও ব্যবস্থায় নজর না দেয়া। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও পীরের মুরিদ হওয়ার পেছনে যতটা আগ্রহী, ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ভালো হাসপাতাল নির্মাণের ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নয়।

পাকিস্তানের এক পীর প্রতি বছর শুধুমাত্র চট্টগ্রামেই আসেন এবং তাকে নিয়ে চট্টগ্রামের দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক ব্যবসায়ী নেতার মধ্যে বাড়াবাড়ি রকমের যে কদর্য প্রতিযোগিতা- তা একেবারেই দৃষ্টিকটু পর্যায়ের। অথচ পাহাড় নদী সমুদ্র আর প্রকৃতির সৌন্দর্যের এই শহর, হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ আরো অসংখ্য নৃগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের শহর-চট্টগ্রামের যে অনন্যতা এই শহরের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মন কাড়েনি। এক ধরনের সাংস্কৃতিক দৈন্যে গড়ে ওঠা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী সমাজের কাছে সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ সম্পদটি হারিয়ে গেছে সংস্কৃতিহীন সম্পদের প্রভাবে। যে কারণে চট্টগ্রামের আর্য সংগীত, সংগীত পরিষদ নামের প্রতিষ্ঠানগুলো হারিয়ে গেছে অবহেলায়, অযত্নে। কে বলবে, অবিভক্ত ভারত থাকাকালে চট্টগ্রামে সর্বভারতীয় সংগীত সম্মেলন হয়েছিল। সাহিত্য, সংস্কৃতি আর দেশপ্রেমের অনুপ্রেরণা ছিল চট্টগ্রাম। এখন চরম অবহেলায় পড়ে আছে জেএম সেন হল, সূর্যসেনের আবক্ষ মূর্তি, প্রীতিলতার স্মৃতিবিজড়িত ইউরোপিয়ান ক্লাব, জালালাবাদ যুদ্ধের স্মৃতির মিনার, মুসলিম ইনস্টিটিউট হল কিংবা আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের হেডকোয়ার্টার সিআরবি। বারো আউলিয়ার শহর, মাইজভাণ্ডারীর শহর, সুফি, মুর্শিদি, কবিয়ালের শহর চট্টগ্রাম এখন দেওবন্দী ঘরানার চাপে কোণঠাসা এবং ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ সবাই এখন হাটহাজারীমুখী।

করোনার এই দুর্যোগ শুধু চট্টগ্রাম কেন পৃথিবীর সব ধনী-গরিব সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এসেছে। তবে এই সংকট আমাদের মধ্যে নতুন উপলব্ধি তৈরি করবে এমন সম্ভাবনা চরম আশাবাদীরাও করেন না। তবে এমন বাস্তবতা তো আছে যে চট্টগ্রামের ৬৪ জন ব্যবসায়ী চাইলে শুধু চট্টগ্রাম কেন দেশের ৬৪ জেলায় অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ৬৪টা হাসপাতাল গড়ে তুলতে পারেন। না হলে এই অভিযোগটি অবশ্যই থাকবে যে, বীর প্রসবিনী চট্টগ্রামে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আছে কিন্তু একজন রতন টাটা, আজিজ প্রেমজি, কেকে বিরলা কিংবা বিল গেটসের মতো মানবিক ব্যবসায়ী নেই- যারা ব্যবসা করেন, সম্পদ তৈরি করেন এবং একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এমনকি পয়োনিষ্কাশনের নিশ্চয়তাও তৈরি করেন। তাদের নিজেদের ভাগ্যের যেমন পরিবর্তন আনেন এবং অন্যের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য তারা কাজ করেন। একথা মনে রাখা দরকার কোভিড-১৯ একমাত্র শেষ ভাইরাস নয়। আইসিইউর অভাবে অসময়ে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে হলে সবাইকে নিয়ে বাঁচার চিন্তাটা তৈরি করতে হবে। নিজের চারপাশটাকে বাদ দিয়ে কানাডায় কিংবা সিঙ্গাপুরে বাড়ি তৈরি করে নিজেকে বাঁচানো যে কঠিন, তার প্রমাণ তো আমরা ইতোমধ্যে পেয়েছি।