চলতি বছর ১১ ভূমিকম্প, বাড়ছে ঝুঁকি
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: ডিসেম্বর ২, ২০২৩ , ৪:০৫ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : দিনকে দিন ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। মাঝেমধ্যেই ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠছে দেশ। এসব ভূমিকম্পে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিককালে বড় মাত্রার ভূমিকম্প না হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ভূমিকম্পের তেমন কোনো পূর্বাভাসের ব্যবস্থা নেই। গত ৭ মাসে দেশে অন্তত ১০ বার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এ বছর প্রথম ভূকম্পন অনুভূত হয় ১৬ ফেব্রুয়ারি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের পাশাপাশি সেদিন কেঁপে ওঠে সিলেট। ৩ দশমিক ৯ মাত্রার এ ভূমিকম্পে বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে মাঝারি মাত্রার দুটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। দেশটির আয়াবতি ও রাখাইন রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের কক্সবাজারেও ভূকম্পন অনুভূত হয়। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার আগারগাঁও থেকে ৩৭৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। এদিকে ৩০ এপ্রিল ৪ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে চট্টগ্রাম। ৫ মে আরেকটি ভূমিকম্প হয়েছে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায়। এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৩। উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার কাছে বিক্রমপুরের দোহার থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। এটির গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার। গত ১৬ জুন রাজধানীসহ সারা দেশে ৪ দশমিক ৫ মাত্রার মৃদু ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জ। ১৪ আগস্ট রাত ৮টা ৪৯ মিনিটের দিকে একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ঐ ভূমিকম্পে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকা কেঁপে ওঠে। মাত্রা রিখটার স্কেলে ছিল ৫ দশমিক ৫, যা মাঝারি মাত্রার একটি ভূমিকম্প। এর উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের সিলেটের কানাইঘাট এলাকায়। গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার। আগস্ট মাসে দুই দফায় বাংলাদেশে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর মধ্যে একটি হয় ২৯ আগস্ট। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট। এরপর ১৪ আগস্ট আরেক বার ভূমিকম্প হয়। এর কেন্দ্রস্থল ছিল সিলেটের কানাইঘাট এলাকায়। এরপর ৯ সেপ্টেম্বর আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তার উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসামের কাছাড় এলাকা। দুইদিন পরেই ১১ সেপ্টেম্বর সিলেট এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যার উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত। এছাড়া ১৮ সেপ্টেমর পর্যন্ত ঢাকা ও এর উত্তরের কয়েকটি জেলায় হালকা ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ২, যা মাত্রা অনুযায়ী হালকা ভূমিকম্প হিসেবে ধরা হয়। এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলে।
অপরদিকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের এমন ঝুঁকি থাকলেও মোকাবিলার প্রস্তুতি অনেকটাই কম। বহু পুরোনো ভবন, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করা ভূমিকম্প ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সঠিক সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে দেশকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী মনে করেন, ছোট ও মাঝারি ভূকম্পনে বড় শক্তি বের হওয়ার একটা প্রবণতার লক্ষণ দেখা গেছে। তার মানে, যে কোনো সময় একটি বড় ভূমিকম্প সংঘটিত হতে পারে। তবে এই বড় ভূমিকম্প কবে হবে, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। জাতিসংঘ বলছে, পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে ঢাকা একটি। এছাড়া বাংলাদেশ পৃথিবীর ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত বিধায় প্রাচীনকাল থেকে এ দেশে মাঝে মধ্যে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। উপরন্তু হিমালয় রেঞ্জ হচ্ছে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল। যদিও সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশের জনগণ শক্তিশালী ভূমিকম্পের মুখোমুখি হয়নি। এদিকে, কুমিল্লায় কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে একটি পোশাক কারখানা থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ৮০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে জেলার চৌদ্দগ্রামে আমির শার্টস গার্মেন্টসে এ ঘটনা ঘটে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হঠাৎ ভূমিকম্পে ভবন কেঁপে উঠলে আমির শার্টস গার্মেন্টসের শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে নামার চেষ্টা করেন। এ সময় কারখানার প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে ভবনটি ধসে পড়েছে।
এতে অন্য শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে প্রধান ফটকের তালা ভেঙে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পদদলিত হয়ে অর্ধশতাধিক শ্রমিক আহত হন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও থানা পুলিশ গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। আমির শার্টস গার্মেন্টসের এইচআর কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ভূমিকম্পের সময় আমি নিজেই মাইকিং করছিলাম কেউ যেন আতঙ্কিত না হয়। এ সময় কেউ একজন বলে উঠলো ভবনে ফাটল ধরেছে। এ সময় শ্রমিকরা আতঙ্কিত হয়ে বের হতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ২০-২৫ জনের মতো আহত হয়েছেন। আমরা তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্টেশন কর্মকর্তা দিদারুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত হয়ে হুড়োহুড়ি করে বের হতে গিয়ে পদদলিত হয়ে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এর সংখ্যা এখনি বলা যাচ্ছে না। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা ডা. গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, আমির শার্টস গার্মেন্টসের ঘটনায় মোট ৮০ জন শ্রমিককে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি ৭৭ জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি গেছেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, এখানে যাদের আনা হয়েছে তাদের মধ্যে চৌদ্দগ্রামের ঘটনায় ছয়জন, কুমিল্লা ইপিজেড থেকে চারজন এবং কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে দুজনকে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি। এরই মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন।