আজকের দিন তারিখ ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সারাবিশ্ব জনপ্রিয়তা কমছে মোদির

জনপ্রিয়তা কমছে মোদির


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ৯, ২০২১ , ১:২৯ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাবিশ্ব


দিনের শেষে ডেস্ক : সাম্প্রতিক নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে পরাজয় এবং বাকি ৫ রাজ্যেও হতাশাজনক ফল। একমাত্র অসম ছাড়া অন্য কোনও রাজ্যে দাগ কাটতে পারেনি মোদি ম্যাজিক। আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এর সঙ্গেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা, যেখানে এই সংক্রমণ রুখতে কেন্দ্রীয় সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলেই দাবি করছে একাধিক দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা। নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ জুটি এই সঙ্কটের মুখে পড়তে পারেন তা নাকি আগেই ধারণা করেছিলেন বিজেপির তাবড় নেতারা।

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বেপরোয়া রাজনীতিক, ভোট চলাকালীন প্রথম আক্রমণ আসে তার দিক থেকেই। তিনি জানিয়েছিলেন, দেশ যখন করোনা আবহে অস্থির তখন মোদি বাংলা দখলের নেশায় ব্যস্ত। এবারে বাংলায় পরাজয়ের পর দেশের প্রতিটি বিরোধী দল আজকের ভয়ঙ্কর সংক্রমণ তথা মৃত্যুর মিছিলে দায়ী করছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। অক্সিজেন থেকে টিকা, পরিষেবা, হাসপাতালে বেডের অভাব নিয়ে সরব বিরোধীরা। এমনকি বিজেপি দলের অভন্ত্যরেও মুখ খুলছেন অনেকেই।

এদিকে নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা ধরে রাখবেন কী ভাবে? প্রশ্ন শুনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উত্তর, কিছুই বুঝতে পারছি না! যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ধস নেমেছে। এর পরে করোনার ধাক্কা সামলাবেন কী ভাবে? লখনউ থেকে ফোনে বিজেপি নেতার একই জবাব, কিছুই বুঝতে পারছি না!কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবিরের অভিযোগ, করোনা দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে মোদি সরকারের কোনও পরিকল্পনাই নেই। বিজেপি নেতাদেরও বক্তব্য মোটামুটি এক। তার মধ্যেই করোনার এই ধাক্কার পরেও যাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ণ থাকে, তার ‘স্ট্র্যাটেজি’কোথায়, তা নিয়ে চিন্তায় তারা।

বিজেপি নেতারা মানছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় দেশ জুড়ে মৃত্যুর মিছিল এবং তার সঙ্গে অক্সিজেন, টিকার অভাবের ফলে মোদি সরকারের দিকেই আঙুল উঠেছে। স্বাভাবিক ভাবেই এর ফলে মোদির ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার গ্রাফ নিম্নমুখী হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা মনে করছেন, রাজ্যের নির্বাচনে শেষ দু’তিন দফার ভোটে করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্রের ব্যর্থতার খেসারত দিতে হয়েছে। তাদের প্রশ্ন, এর পরেও হাল শোধরাতে মোদি-অমিত শাহের দিক থেকে কোনও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না কেন?

মেডিক্যাল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদির সরকারই দেশে জাতীয় বিপর্যয় ডেকে আনার জন্য দায়ী থাকবে। মোদি সরকার করোনা মোকাবিলার থেকে টুইটারের সমালোচনা মুছতে বেশি ব্যস্ত বলে মনে হচ্ছে। এই সমালোচনা বন্ধ করার চেষ্টা ক্ষমার অযোগ্য। দ্য ইনস্টিটিউট ফর হেল্থ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন’এর হিসেব তুলে ধরে ল্যান্সেট-এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ১ অগস্টের মধ্যে দেশে করোনা মৃত্যুর সংখ্যা ১০ লক্ষ ছোবে। এখনও পর্যন্ত করোনা মৃত্যুর সরকারি সংখ্যা ২.৩৮ লক্ষর ঘরে। ল্যানসেট-এর বক্তব্য, ১০ লক্ষ মৃত্যুর অনুমান সত্যি হলে তার জন্য মোদি সরকারই দায়ী থাকবে। কারণ বিপদ-বার্তা সত্ত্বেও মোদি সরকার গোটা দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে জড়ো করে ধর্মীয় উৎসব, বড় বড় রাজনৈতিক সভা হতে দিয়েছে।

করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর কথা ভুলে থেকেছে। তার আগে মার্চ মাসেই মোদি সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, করোনার খেলা শেষ।বিজেপির কিছু নেতা আবার এতে হর্ষ বর্ধনের দোষ দেখতে নারাজ। তাদের যুক্তি, প্রধানমন্ত্রী নিজেই তো তার আগে দাভোসের ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের সম্মেলনে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধজয় ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। তার পরে ফেব্রুয়ারিতে বিজেপি জাতীয় পদাধিকারীদের বৈঠকে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় প্রস্তাবও পাশ হয়েছে।

 

বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, মোদিজি বোধহয় অতিরিক্ত আত্মতুষ্টিতে ভুগছিলেন। তাই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যে এ রকম বিপর্যয় ডেকে আনবে, তা বুঝতে পারেননি। কিন্তু এখনও কি আমরা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী? দলের নেতারা কি ভাবছেন, মানুষ ২০২৪-এর আগে এই অক্সিজেন, আইসিইউ বেডের জন্য হাহাকার, টিকার অভাবের কথা ভুলে যাবে? বিরোধী নেতারা বলছেন, বিজেপি হয়তো করোনার ব্যর্থতা ভোলাতে ২০২৪-এর আগে ফের মন্দির-মসজিদ, হিন্দু-মুসলিম, পাকিস্তান-জাতীয়তাবাদের ইস্যু তুলে আনতে চাইবে। কিন্তু বারবার একই হাতিয়ারে কাজ দেবে না। বিজেপি সূত্রের খবর, পরে যা হবে, দেখা যাবে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ধাক্কা দেয়ার পরে গত ২০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা করেছিলেন। তার পরে ‘মন কি বাত’ছাড়া তিনি এ বিষয়ে সরাসরি মুখ খোলেননি।

বিজেপি নেতারা মনে করছেন, পরিস্থিতি কিছুটা শোধরালে হয়তো তিনি ফের জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা করবেন। কিন্তু এখনই বিজেপির সাংসদ-বিধায়করা নিচু তলায় ক্ষোভ টের পাচ্ছেন।

উত্তরপ্রদেশেই দেখা গিয়েছে, বিধায়ক-সাংসদরা নিজেদের এলাকায় অক্সিজেনের অভাব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগীকে চিঠি লিখছেন। উত্তরপ্রদেশের এক বিজেপি নেতা বলেন, ২০১৭-য় আমরা উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় ৪০৩টির মধ্যে ৩১২টি আসন জিতেছিলান। তাতে ভর করেই ২০১৯-এ লোকসভায় এ রাজ্য থেকে ৮০টির মধ্যে ৬২টি আসন জিতে বিজেপি কেন্দ্রে ফের ক্ষমতায় ফিরেছে। কিন্তু এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনেই ধস নেমেছে। এর পরে কোভিডের ক্ষত যোগ হবে।

কিছু দিন আগে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা কোভিড রোগীদের সাহায্যে যুব মোর্চার হেল্পলাইন চালু করেছিলেন। কিন্তু দলের পর্যালোচনা বলছে, বিজেপি নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে বড় রাজনৈতিক দল বলে দাবি করলেও, আরএসএসের বিরাট সংগঠন সত্ত্বেও তাদের তুলনায় ভাঙা সংগঠন নিয়েও যুব কংগ্রেসের মানুষকে সাহায্য অনেক বেশি চোখে পড়েছে। বিজেপি নেতাদের যুক্তি, আসলে দল ক্ষমতায় রয়েছে। তার পরেও সাধারণ মানুষের সাহায্যে কর্মীরা মাঠে নামলে সরকারি ব্যর্থতাই স্পষ্ট হয়ে উঠবে কি না, তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।