আজকের দিন তারিখ ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় তবুও চলছে মাদক বিকিকিনি

তবুও চলছে মাদক বিকিকিনি


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ৯, ২০২১ , ২:২৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


করোনা মহামারি থেকে মানুষের জীবন রক্ষার মতো কাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যস্ততার সুযোগ নিচ্ছে মাদক কারবারিরা। নিত্যনতুন কৌশলে মাদকের চোরাচালান রাজধানীতে আসছে এই দুর্যোগকালেও। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে প্রায় দিনই একাধিক চালান উদ্ধার ও বহনকারী গ্রেপ্তার হলেও যেন অপ্রতিরোধ্য মাদক কারবারিরা! নতুন ৯ ধরনের মাদক উদ্ধারের খবরে উদ্বেগ ছড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অভিভাবক মহলে। কুরিয়ার সার্ভিস ও অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে হরেক রকম মাদক। অন্যদিকে করোনা ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যে সব দেশের সীমান্ত পাহারা এখন অনেকটাই ঢিলেঢালা। এর সুযোগ নিচ্ছে মাদক কারবারিরা। মিয়ানমার সীমান্ত হয়ে ইয়াবার চালান আসছে। সাগর, পাহাড় আর সড়কপথে নানা কৌশলে পাচার হচ্ছে এ ভয়ংকর নেশার ট্যাবলেট। ভারত থেকে ফেনসিডিলের চালান পাচার হয়ে আসছে। তবে অধিকাংশ যানবাহন বন্ধ থাকায় কারবারিদের পক্ষে সহজেই মাদক বহন সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে তারা বিভিন্ন জরুরি সেবার আওতায় চলাচলকারী যানবাহনে মাদক বহন করছে। এ ক্ষেত্রে বাহক যাত্রীবেশে ছোট ছোট চালানে মাদক নিয়ে আসছে। যে পরিমাণ ধরা পড়ছে তার তিনগুণেরও বেশি মাদক সীমান্ত এলাকা থেকে বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, এখন সবচেয়ে বেশি ইয়াবা আসছে কক্সবাজার এলাকা দিয়ে। এছাড়া রাজশাহী, কুমিল্লা ও সিলেটের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গাঁজা, ফেনসিডিল ও হেরোইনের চালান নিয়ে আসছে মাদক কারবারিরা। করোনা সংকটকালেও মাদকের চাহিদা কমেনি। মরণ নেশা ইয়াবা দেশের তরুণ সমাজকে এখন সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করছে। মুড়ি-মুড়কির মতো সর্বত্র ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে। ইয়াবাকে পুঁজি করে রমরমা ব্যবসা চলছে। ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে সরকার। আইন প্রণয়নের চেয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগের বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এ দিকটিতে জোরালো দৃষ্টি দিতে হবে। এছাড়া ফেনসিডিলকে ছাপিয়ে মিয়ানমারের ইয়াবা মাদকের দাপটকে পাশ কাটিয়ে নিউ সাইকোট্রফিক সাবসটেনসেস (এনপিএস), ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, খাট, এলএসডি, এস্কাফর পর ম্যাজিক মাশরুম নামে নতুন আরো একটি মাদকের সন্ধান পাওয়া গেছে বাংলাদেশে। বিভিন্ন খাবারে কেক ও চকোলেট মিশ্রিত অবস্থায় সেবন করা হয় এটি। এ মাদক সেবনের ফলে সেবনকারীর মধ্যে হ্যালুসিনেশন তৈরি হয়। দেশের বিরাটসংখ্যক তরুণশক্তি নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখছি, অথচ প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মাদকের নেশায় ধ্বংস হচ্ছে তারুণ্য, জাতির ভবিষ্যৎ। তাই তারুণ্যগ্রাসী মাদকের বিস্তার এখন জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। মাদকের থাবা রুখতে হবে যে কোনো মূল্যে। সীমান্তবর্তী এলাকার মিয়ানমার অংশে ইয়াবা তৈরির কারখানাগুলো নিষ্ক্রিয় করা এবং এদেশে ইয়াবা অনুপ্রবেশ রোধে বাংলাদেশ-মিয়ানমার আলোচনার মাধ্যমে কার্যকর সমঝোতায় উপনীত হওয়া জরুরি। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে যেসব চিহ্নিত প্রভাবশালী ব্যক্তি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সদস্য তাদের সহায়ক, সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। প্রশাসনিক কঠোর অবস্থান, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং জনসচেতনতাই পারবে ইয়াবার শিকড় উপড়ে ফেলে এর বিস্তার ঠেকাতে।