আজকের দিন তারিখ ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সাহিত্য কথা নূরনাহার নিপা গল্প লেখেন বলার ঢঙে

নূরনাহার নিপা গল্প লেখেন বলার ঢঙে


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ২১, ২০২৪ , ৩:৪০ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সাহিত্য কথা


এবার ঈদের ছুটিতে বেশ কয়েকটি বই পড়েছি। তন্মধ্যে নূরনাহার নিপার ‘রাজকন্যা ও নীলপরি’। বইটির গল্পগুলো পাঠ করার পূর্বে বইটির ডিটেইলস চেক করি। ফ্লপ দেখি। লেখক পরিচিতি পড়ি। এটা আমি সচরাচরই করি। কিন্তু নূরনাহার নিপার লেখক পরিচিতি দেখে আমি চমকে যাই। তাঁকে নতুনভাবে আবিষ্কার করি।
নূরনাহার নিপা একসময় লেখালিখি করতেন নূরনাহার ইউনুস নিপা নামেই। বড়দের জন্য লিখতেন। গল্প ও কবিতা। ২০০৮ সালে তাঁর একটি উপন্যাস প্রকাশ হয়। ‘সেই মেয়েটি স্মৃতির আড়ালে’ নামে। উপন্যাসের মূল কাহিনি চতুর্ভুজ প্রেমের। বেদনার গল্প। তাঁর এই উপন্যাসটি আমি ২০১১ সালে পড়েছি। তখনও আমি লেখালিখি শুরু করিনি। কৈশোরকাল। কিন্তু প্রচুর বই পড়ি। ছোটদের পাতাগুলো দেখি। আমার বড়আপা এই উপন্যাসটি এনেছিলেন। বড়আপার খুব প্রিয় উপন্যাস।
আমি আর আমার এক কাজিন এই উপন্যাসটি নিয়ে প্রতিযোগিতা করতাম। কে কত দ্রুত রিডিং পড়তে পারি। কার কতটা উচ্চারণ শুদ্ধ হয় আমরা সেটা দেখতাম। কখনো কখনো উচ্চস্বরেও পড়তাম। এভাবেই আমরা এই উপন্যাসটি পড়েছি। কিন্তু কে লেখক? কী লিখেছেন? সেটা আমাদের কাছে কখনোই মূখ্য ছিল না৷ জানার আগ্রহও ছিল না। অথচ আজ আমার কৈশোরে পড়া উপন্যাসের লেখককে আমি চিনি। তাঁর সাথে কথা হয়। কী অদ্ভুত আর ম্যাজিক্যাল আমাদের জীবন!
নূরনাহার নিপার বাড়ি চট্টগ্রামে। দেওয়ান বাজারের পশ্চিম বাকলিয়ায়। তাঁর জন্ম: ১৯৮২ সালের পহেলা জানুয়ারি। প্রথমে তিনি বড়দের জন্য লিখলেও এখন সমানতালে ছোটদের জন্যেও লেখেন। তাঁর প্রথম লেখা প্রকাশ হয় ২০০৭ সালে। এপর্যন্ত মোট ছয়টি বইয়ের লেখক তিনি। লেখালিখির জন্য বহু পুরস্কারও পেয়েছেন। এবছর একুশে বইমেলায় প্রকাশ হয় তাঁর ‘রাজকন্যা ও নীলপরি’৷ চট্টগ্রামের শব্দশিল্প প্রকাশন থেকেই।
‘রাজকন্যা ও নীলপরি’ ছোটদের গল্পের বই। শিশুতোষ গল্প। ছোট ছোট গল্প। গল্পগুলোর ভাষা সহজসরল। ছোট ছোট শব্দ ও বাক্যে খুবই চমৎকার। গল্পগুলো মূলত রূপকথার গল্পের মতোই। গল্পের চরিত্রগুলো রাজা-রানি, রাজকুমার-রাজকন্যা আর ভূত-পেত্নী। মোট আটটি গল্প নিয়ে লেখা বইটি৷ প্রতিটি গল্পই বুদ্ধিদীপ্ত ও শিক্ষণীয়।
বইটির প্রথম গল্পটির নাম ‘ব্যাঙ রাজকুমার’। অহংকার আর পশুপাখির প্রতি নির্যাতনের ফল কী হতে পারে— গল্পে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তৃতীয় গল্পটি একটু হাসির। গল্পের শেষে এসে যে কেউ ফিক করে হেসে দেবে। সিংহ বনের রাজা হলেও কিন্তু সে প্রচন্ড বোকা। গল্পটি না পড়লে বুঝাই যাবে না৷ এমনকি ‘লাল পাহাড়ের ভূত’ গল্পে কীভাবে ভূতকেও ভয় দেখানো যায় লেখক খুবই নিপুণভাবে উপস্থাপন করেছেন। সজীবের উপস্থিত বুদ্ধি দেখে তার বন্ধুরা তাকে বাহবা দেয়। তার বুদ্ধির প্রশংসা করে৷ বইটির আরেকটি গল্প হচ্ছে— রাজকন্যা ও নীলপরি। এই গল্পের নামকরণে বইটিরও নামকরণ করা হয়েছে। গল্পটি রূপকথার গল্প। আমরা ঠাকুরমারঝুলিতে এরকম গল্প পড়েছি৷ খুবই চমৎকার গল্প। গল্পের সমাপ্তি খুবই সুন্দর। নিখুঁত ও নিপুণ। অসম্ভব সুন্দর।
‘রাজকন্যা ও নীলপরি’ বইটির সবগুলো গল্প ভালো। সুন্দর। শব্দ ও বাক্যচয়ন অসাধারণ। মাঝেমধ্যে গল্পের প্রয়োজনে আঞ্চলিক ডায়লগও আছে। এটা আরও চমৎকার করেছে গল্পগুলো। আসলে নূরনাহার নিপা গল্প লেখার ঢঙে গল্প লিখেননি। লিখেছেন গল্প বলার ঢঙে। যা একজন সফল ও দক্ষ গল্পকারের পরিচায়ক। মীর শামীমের করা পাতায় পাতায় রঙিন অলংকরণ বাচ্চাদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ। গল্পগুলো পড়তে প্রচুর আগ্রহ বাড়াবে। বইটির রঙিন প্রচ্ছদ করেছেন দেলোয়ার রিপন। প্রচ্ছদটি নজরকাড়া। নামের সাথে খুব মানানসই। অতুলনীয়। বাঁধাই করা হার্ডকাভার। ক্রাউন সাইজের এই বইটির কাগজগুলো উন্নতমানের। ঝকঝকে ছাপা৷ বর্ণগুলোও একটু বোল্ড। বইটির ফ্লপ লিখেছেন— শিশুসাহিত্যিক ও গল্পকার আলী আসকর। যতটুকু জানি— বইটি চট্টগ্রাম বইমেলায় খুবই পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। মেলায় কাটতি ছিল বইটির। প্রতিদিন মেলা থেকে বাচ্চারা সংগ্রহ করতো। অভিভাবকরাও কিনে দিতেন। বইটি ঘিরে জমে উঠেছিল চট্টগ্রাম বইমেলা। পাঠকরাও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতেন। এটা একজন লেখকের জন্য অনুপ্রেরণা। সাহস। স্বপ্ন। শিশুসাহিত্যের জন্য আশীর্বাদ। আমি আশাবাদী— বইটি আরও প্রচুর পাঠকপ্রিয়তা পাবে৷ ছোটদের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে রাজকন্যা ও নীলপরি। পাঠকরা বইটি পড়ে আনন্দিত হবে। জয় হোক নূরনাহার নিপার। জয়তু রাজকন্যা ও নীলপরি।

ওয়াহিদ ওয়াসেক