পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরা হলো না এমএম কলেজের ২ শিক্ষার্থীর
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১ , ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ
যশোর প্রতিনিধি : যশোর জেনারেল হাসপাতালের পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে উপচেপড়া ভিড়। আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে শয্যার পাশে স্বজন, বন্ধু শিক্ষকরা। এদের একজন যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের মাস্টার্স অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র শরিফুল ইসলাম। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন অন্যরা। শরিফুল জানালেন বুধবার বিকালে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বারোবাজার এলাকায় যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনায় তার বন্ধু মোস্তাফিজুর রহমান নিহত হয়েছেন। আর চাচাতো ভাই শিমুল হোসেন হাসপাতালে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। বারোবাজার ট্র্যাজেডিত নিহত ১০ জনের মধ্যে সরকারি এমএম কলেজের দুই শিক্ষার্থীর পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন– রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর গ্রামের ইসাহাক মণ্ডলের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ও এমএম কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী চুয়াডাঙ্গার দিঙে গ্রামের আব্দুর রশিদের মেয়ে রেশমা খাতুন (২৬)। বারোবাজারে বাস দুর্ঘটনায় আহত অন্তত ৯ জনকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে শিক্ষার্থী রয়েছে পাঁচজন। হাসপাতালে আহতদের খোঁজ নিতে আসা সরকারি এমএম কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাবেক সম্পাদক ও অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মহিউদ্দীন বলেন, বুধবার মাস্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষে ঝিনাইদহ এলাকার শিক্ষার্থীরা বাসে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় বারোবাজারে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। হতাহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। অধ্যক্ষের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি।
নিহতের পরিবার, বন্ধু ও স্বজনরা জানান, মোস্তাফিজুর রহমান কল্লোল (২৫) সরকারি এমএম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান মাস্টার্সের ছাত্র। চাকরি করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে। বর্তমানে সাতক্ষীরায় কর্মরত। মাস্টার্স পরীক্ষায় অংশ নিতে ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। বুধবার পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পথে বারোবাজারে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন মোস্তাফিজুর।
সন্ধ্যায় অ্যাম্বুলেন্সে করে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। তাকে এক নজর দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন এলাকার মানুষ। তার অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন এমএম কলেজের ছাত্রী রেশমা খাতুন। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনি। নিহত রেশমার ভাই সোহেল রানা জানান, তার বোন অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে ফিরছিলেন। হঠাৎ ফোন আসে যে, বোন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। ঘটনাস্থলে এসে বোনের মরদেহ শনাক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, শেষ পরীক্ষা দিয়ে আর বাড়ি ফিরতে পারল না আমার বোন। শেষ পরীক্ষা দিয়ে বোনেরও শেষ বিদায় হয়ে গেল। হাসপাতাল সূত্র জানায়, যশোর ঝিনাইদাহ মহাসড়কের বারোবাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে ৯ জনকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতরা হলেন- ঝিনাইদাহ সদর উপজেলার লাওদিয়া গ্রামের খঞ্জের আলীর ছেলে আব্দুর রহিম, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহর এলাকার আব্দুল হকে ছেলে মাহফুজুর রহমান, একই উপজেলার তাহেরহুদা গ্রামের নায়েব আলীর মেয়ে বিউটি, ঝিনাইহের কালীগঞ্জ উপজেলার একতারপুর গ্রামের তানজিল হোসেনের ছেলে শিমুল হোসেন, একই উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের আদিল উদ্দিনের মেয়ে শান্তা ও একই গ্রামের মুজিবউল্লাহর মেয়ে আলো। তারা সবাই মাস্টার্স পরীক্ষার্থী। বাকিরা হলেন- ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার কাকলিয়া গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে কাবিল এবং শাহাদৎ ও অজ্ঞাত একজন। এদের মধ্যে এমএম কলেজের ছাত্র শিমুল হোসেনের শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডা. অমিয় দাস বলেন, বিকাল ৪টার দিকে সড়কে আহত কয়েকজন এসে ভর্তি হয়। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বুধবার বিকাল ৩টার দিকে যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের বারোবাজার নামক স্থানে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনার শিকার হয়।