আজকের দিন তারিখ ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
জাতীয় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিনের আপিল

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিনের আপিল


পোস্ট করেছেন: admin | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ২, ২০১৬ , ১২:৫৪ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়


320160602123934অনলাইন ডেস্ক: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ আপিল করেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এ আপিল করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (০২ জুন) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শামসুদ্দিনের আইনজীবী মাসুদ রানা।

খালাস চেয়ে করা মোট ৪৭৫ পৃষ্ঠার আবেদনে যুক্তি দেখানো হয়েছে আটটি। আবেদনে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হয়েছেন জয়নুল আবেদীন তুহিন।

গত ০৩ মে অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ ও তার ভাই সেনাবাহিনীর বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো.নাসিরউদ্দিন আহমেদসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বাকি একজনকে দেওয়া হয়েছে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ। একই মামলার ওই পাঁচ আসামির মধ্যে গ্রেফতার রয়েছেন শামসুদ্দিন আহমেদ। বাকি চারজন পলাতক থাকায় আপিল করেননি তারা।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য দু’জন হচ্ছেন রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান ও হাফিজ উদ্দিন। আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে আজহারুল ইসলামকে।

আসামি পাঁচজনের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, নির্যাতনের লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এতে ছিল ১৪ জনকে হত্যা ও গণহত্যা, একজনকে আটক ও নির্যাতন এবং ২০-২৫টি বাড়িতে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ।

অভিযোগগুলোর মধ্যে হত্যা-গণহত্যার তিনটি (১, ৩ ও ৪ নম্বর) ছিল পাঁচজনেরই বিরুদ্ধে। বাকি চারটির মধ্যে হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের দু’টিতে (৬ ও ৭ নম্বর) গাজী আব্দুল মান্নান এবং হত্যার একটিতে (২ নম্বর) নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও হত্যার একটিতে (৫ নম্বর) শামসুদ্দিন আহমেদ এককভাবে অভিযুক্ত হন। এসব অভিযোগে ভিন্ন ভিন্নভাবে আসামিদের সাজা দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। শুধু ৩ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন মান্নান।

কোন অপরাধে কার কি সাজা
প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১২ নভেম্বর দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার বিদ্যানগর ও আয়লা গ্রামের মোট আট জনকে হত্যা ও একজনকে আহত করেন অভিযুক্ত পাঁচজন। এ অপরাধে শামসুদ্দিন, নাসিরউদ্দিন ও মান্নানকে ফাঁসি এবং হাফিজ ও আজহারুলকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৩ নভেম্বর একই উপজেলার আয়লা গ্রামের মিয়া হোসেনকে হত্যা করেন নাসির। এ অপরাধে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন তিনি।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, একই উপজেলার মো. আব্দুল গফুরকে অপহরণ করে ২৬ সেপ্টেম্বর খুদির জঙ্গল ব্রিজে নিয়ে হত্যা করেন তারা। এ হত্যার দায়ে হাফিজকে ফাঁসি এবং শামসু, নাসির ও আজহারুলকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এ অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মান্নানের বিরুদ্ধে, তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।

চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৩ আগস্ট করিমগঞ্জ উপজেলা ডাকবাংলোতে শান্তি কমিটির কার্যালয়ে আতকাপাড়া গ্রামের মো. ফজলুর রহমান মাস্টারকে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যা করেন আসামিরা। পাঁচজনই আমৃত্যু কারাদণ্ড পেয়েছেন এ অপরাধে।

পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, ৭ সেপ্টেম্বর রামনগর গ্রামের পরেশ চন্দ্র সরকারকে হত্যা করেন শামসুদ্দিন। এ হত্যার দায়ে ফাঁসি হয়েছে তার।

ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৫ আগস্ট পূর্ব নবাইদ কালিপুর গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক ও রূপালীকে অপহরণ করে নির্যাতন ও হত্যা করেন মান্নান। এ অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড পেয়েছেন তিনি।

সপ্তম অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিদের নেতৃত্বে ১৫ সেপ্টেম্বর আতকাপাড়া গ্রামে হামলা চালিয়ে ২০-২৫টি বাড়িতে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করা হয় মান্নানের নেতৃত্বে। এ অপরাধে ৫ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছেন তিনি।

সব মিলিয়ে শামসুদ্দিন আহমেদকে দেওয়া হয়েছে দু’বার ফাঁসি ও দু’বার আমৃত্যু কারাদণ্ড। নাসিরউদ্দিন আহমেদও পেয়েছেন দু’বার ফাঁসি ও দু’বার আমৃত্যু কারাদণ্ড। গাজী আব্দুল মান্নানকে একবার ফাঁসি, দু’বার আমৃত্যু কারাদণ্ড ও ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে আর একটি অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। হাফিজ উদ্দিনকে দেওয়া হয়েছে একবার ফাঁসি ও দু’বার আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ। তিনবার আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে আজহারুল ইসলামকে।