ফের বিচারপতিদের প্রশ্নের মুখে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা
পোস্ট করেছেন: admin | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১৪, ২০১৬ , ৩:৫০ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////,জাতীয়
কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামালপুরের আশরাফ হোসেনসহ ৮ আসামির মামলা নিয়ে বিচারপতিদের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। একইসঙ্গে আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে ১০ হাজার মানুষ হত্যার অভিযোগটিও সুস্পষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই মন্তব্য করেন।
এর আগে নির্ধারিত দিন অনুসারে আসামিদের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল। এ সময় তিনি আসামিদের বিরুদ্ধে আনা ৫টি অভিযোগের মধ্যে ২, ৩, ৪ ও ৫ নাম্বার অভিযোগের ওপর যুক্তি উপস্থাপন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনকালে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা ৪ নাম্বার অভিযোগে ভিকটিম রেজাউল করিমকে একাত্তর সালে আটক করার পৃথক অভিযোগ আনা হয়েছে। এখানে তার নাম উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ১ নাম্বার অভিযোগের ১০ হাজার মানুষ হত্যার যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেখানে একজন ভিকটিমেরও নাম নেই কেন তা জনাতে চান ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিরা।
বিচারপতিরা বলেন, ১০ হাজার মানুষ হত্যার এভিডেন্সে কোনো ব্যক্তির নাম আসেনি, যাদেরকে আটক করে, নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এ অভিযোগে (১নং অভিযোগে) তদন্ত সংস্থা কি একজনের নামও খুঁজে বের করতে পারেনি? তারা কি চার্জে ১০/১২ জনের নামও উল্লেখ করতে পারেনি? তা হলে তারা (তদন্ত সংস্থা) কি করেছেন?
বিচারপতিরা প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বলের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে বলেন, একাত্তরের ৯ মাসে জামালপুরে ১০ হাজার মানুষ হত্যার মাস, তারিখ, সময় জানতে চাইনা। ওই ৯ মাসে কাদেরকে কিভাবে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে তাদের নাম বলেন।
বিচারপতিদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল বলেন, ‘আমি আসামিদের বিরুদ্ধে ২, ৩, ৪ ও ৫ নাম্বার অভিযোগের ওপর যুক্তি উপস্থাপন করে গেলাম। ১ নাম্বার অভিযোগের ওপর প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ যুক্তি উপস্থাপন করবেন।’
পরে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে যুক্তি উপস্থাপন করতে বলা হলে তিনি আগামীকালের জন্য সময় আবেদন করেন। এ সময় ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য মামলাটি আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত মুলতবি রাখার নির্দেশ দেন।
যুক্তি উপস্থাপনের সময় ট্রাইব্যুনালে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন এবং প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম। অন্যদিকে আসামিদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মিজানুর রহমান, আইনজীবী এইচএম তামিম প্রমূখ।
উল্লেখ্য, গত ২৫ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কার্যালয়ে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে আনিত ৯২ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে জামালপুরের উক্ত আটজনের বিরুদ্ধে হত্যা, লাশ গুম, লুটপাট, নির্যাতন ও অপহরণসহ ১০ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনের পাঁচটি অভিযাগ পাওয়া গেছে। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৬ পাতার দালিলিক প্রমাণ এবং ৪০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধের সময়কাল ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধরা হয়েছে।
যুদ্ধকালীন এই সময়ে আসামিরা জামালপুরে প্রায় ১০ হাজার মানুষকে হত্যা, ৫০ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস করে প্রায় ১২ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযুক্ত ৮ জনের মধ্যে ইতোমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন, জামালপুর শহরের নয়াপাড়া এলাকার অ্যাডভোকেট শামছুল হক (৭৫) ও সিহংজানি বালক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফুলবাড়িয়ার বাসিন্দা এসএম ইউসুফ আলী (৮২)।
এ মামলায় অন্য আসামিরা হলেন, মো. আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরীফ আহমেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মো. আব্দুল মান্নান, মো. আব্দুল বারি, হারুন ও মো. আবুল কাসেম।