বঙ্গবন্ধু কন্যাকে আমি মাটির সঙ্গে তুলনা করি: আলমগীর
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১ , ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: বিনোদন
দিনের শেষে প্রতিবেদক : এ জাতিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা দিয়েছেন, যা দিচ্ছেন- আসলেই তার তুলনা কোনোদিন হয় না। বাবার (বঙ্গবন্ধু) স্বপ্ন বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছেন, জাতিকে উপহার দিয়েছেন সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। ৭৫তম জন্মদিনে তাকে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা। স্বার্থপরের মতো বলছি, আমাদের স্বার্থে, দেশের স্বার্থেই প্রধানমন্ত্রীকে আরো বহুদিন বেঁচে থাকতে হবে। আমি তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। তিনি আরো সুন্দরভাবে, সুস্থভাবে বেঁচে থাকুন আমাদের মাঝে- সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই চাওয়া।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিনে তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে এভাবেই নিজের অনুভূতি ভোরের কাগজের কাছে তুলে ধরেন চিত্রনায়ক আলমগীর। এ সময় শেখ হাসিনার অর্জন, নিজের সঙ্গে স্মৃতিচারণ, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুকন্যার অবদানসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিজের স্মৃতিচারণ করে নায়ক আলমগীর বলেন, প্রধানমন্ত্রী তো প্রধানমন্ত্রীই। তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তার সঙ্গে আমার বহুবার দেখা হয়েছে। আমি তার একজন স্নেহধন্য। এটা আমার পরম সৌভাগ্য। তার সঙ্গে আমার বেশ কয়েকবার দেখা করার সৌভাগ্য হয়েছে। আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও কথা বলেছি। তিনি যথেষ্ট আন্তরিকতা ও স্নেহ নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। একবার লন্ডন থেকে আমার নাতি-নাতনিরা দেশে এসেছে। তারা প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি দেখতে চায়। নাতি-নাতনিদের ইচ্ছার কথা আমি বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ফোন করে জানাই, তিনি বলেন, ওদের নিয়ে এসো। আমি গিয়েছি। অত্যন্ত আন্তরিকতা নিয়ে তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমি সত্যিই অভিভূত! যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। প্রধানমন্ত্রী অসাধারণ মাতৃত্বগুণ সম্পন্ন একজন নারী। আমি বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বাংলাদেশের মাটির সঙ্গে তুলনা করি। তিনি এ দেশের কাদামাটির মতো যেমন সহজ, সরল এবং নরম, তেমনি প্রয়োজনে লোহার মতো শক্ত ও কঠিনও হতে পারেন।
বিশিষ্ট এই চলচ্চিত্র অভিনেতা বলেন, ২০০০ সালে সরাসরি রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হওয়ার কথা ভেবেছিলাম। আপার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে দেখা করলাম। নিজের ইচ্ছার কথা জানালাম। বললাম আপা, আমি সরাসরি আপনার সঙ্গে রাজনীতির মাঠে কাজ করতে চাই। তিনি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন ‘ফিল্মে এখনো তোমার অনেক কাজ বাকী। তোমাকে ফিল্মে অনেক প্রয়োজন। আমি চাই তুমি ফিল্মেই থাকো।’ আপার এই কথা শোনার পর আমি বুঝলাম ‘ ফিল্মে আপার কী পরিমাণ দুর্বলতা!’- আপার সেই পরামর্শটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। দ্বিতীয়বার আর সরাসরি রাজনীতির কথা ভাবিনি। কিন্তু তার নেতৃত্বে দলের জন্য, দেশের জন্য আমি কাজ করার চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে বঙ্গবন্ধুকন্যার দুর্বলতা ও অবদান তুলে ধরে কিংবদন্তি এই অভিনেতা বলেন, শুধু বাংলাদেশের চলচ্চিত্রেই নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অবদান আছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ছেন, পৃথিবীতে যা বিরল। স্বজন হারিয়েছেন, বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন কিন্তু দমে যাননি। এটা ওপরওয়ালা প্রদত্ত কারিসমা। এ দেশে চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু বঙ্গবন্ধুর হাতেই। তিনিই এফডিসিরি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। বাবার মতোই চলচ্চিত্রের প্রতি কন্যার প্রচণ্ড দুর্বলতা। চলচ্চিত্র উন্নয়নে শেখ হাসিনা যা করেছেন, আর কোনো সরকার তা করেনি। শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট করেছেন, অনুদানের টাকা বাড়িয়েছেন। আরো অনেক সুযোগ-সুবিধা। কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ রাখছেন না। বিশ্ব চলচ্চিত্রের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমাদের নতুন নতুন ধারণা দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা তার আইডিয়ার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে পারছি না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমি মনে করি, চলচ্চিত্রের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপগুলো যদি মেনে চলা যায়, তাহলে চলচ্চিত্র অনেক এগিয়ে যাবে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে চলচ্চিত্র জগতের কিংবদন্তি এই অভিনেতা বলেন, আজকের বাংলাদেশ শেখ হাসিনার অবদান। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উদযাপন করেছি বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে। বিশ্ব নেতাদের অংশগ্রহণ এই উদযাপনকে মহিমান্বিত করেছে। আমাদের অনেক অর্জন। বিদ্যুৎ সেক্টরের কথা যদি বলি- দেশে এক সময় বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল, এখন উদ্বৃত্ত। মাত্র ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যাত্রা শুরু করেন। বিদ্যুতের হাহাকার ছিল। আজকে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বলছে। এখন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। ঢাকা শহরে পানির ভয়াবহ সংকট ছিল, এখন তা নেই। শিক্ষার হার বেড়েছে। করোনা মহামারির মধ্যেও পোশাক শিল্পে ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় অবস্থান দখল করেছে। আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভ এখন ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে, মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয়, ফল উৎপাদনে সেরা দশে। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী স্থানে তিনি নিয়ে গেছেন। বৈশ্বিক করোনা মহামারির মধ্যেও দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রেখেছেন। ব্যাংক সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে এনেছেন। বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ছে। কর্মসংস্থানের জন্য ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছেন। খেলাধুলায় আমরা অনেক এগিয়েছি, বিশেষ করে ক্রিকেটে। এভাবে প্রতিটি সেক্টরে বাংলাদেশ অভ‚তপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। আগে বাংলাদেশকে বিশ্বের ধনী দেশগুলো বাঁকা চোখে দেখত, এখন সমীহ করে। মর্যাদার চোখে দেখে সারাবিশ্ব। বিশ্বের সৎ ও কর্মঠ সরকার প্রধানদের শীর্ষ ৩-৪ জনের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন।
দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের কথা তুলে ধরে আলমগীর বলেন, শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্তে প্রমত্ত পদ্মা নদীর উপর স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে। আগামী বছর সেটা চালু হবে। ঢাকায় বড় বড় ফ্লাইওভার হয়েছে। মেট্রোরেলের কাজ দৃশ্যমান। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গায় দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে হয়েছে। প্রায় ৫০০ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত হয়েছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণ করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, যা দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর নিচে প্রথম টানেল নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও স্বপ্নদর্শী নেতৃত্বের এক অনন্য উদাহরণ। রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ হয়েছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুকন্যার অর্জন বলে শেষ করা যাবে না। সবশেষে আবারো আমি তার দীর্ঘায়ু কামনা করি। তিনি যাতে সুন্দর এবং সুস্থ থাকেন- তাই প্রার্থনা করি।