আজকের দিন তারিখ ১০ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ২৬শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সারাদেশ বরিশাল সিটি নির্বাচনে বাড়ছে সহিংসতা, নৌকার বিজয়ে প্রভাব পড়ার আশংকা

বরিশাল সিটি নির্বাচনে বাড়ছে সহিংসতা, নৌকার বিজয়ে প্রভাব পড়ার আশংকা


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ৫, ২০২৩ , ৬:৩৬ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ


বরিশাল অফিস : বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আর মাত্র ৬ দিন বাকী। এরই মধ্যে একদিকে যেমন উত্তাপ ছড়াচ্ছে তেমনি বাড়ছে সহিংসতা। সম্প্রতি নগরীর একাধিক ওয়ার্ডে সহিংস ঘটনা ঘটে এবং এসব ঘটনায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কার্যালয় ঘেরাও করার ঘটনাও ঘটে। স্থানীয়দের মতে, ওয়ার্ড পর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রার্থী (দুই পক্ষ) থাকায় তাদের মধ্যেই সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে নৌকাকে ঢাল হিসেবেও ব্যবহার করছেন কেউ কেউ। যদিও এসব ঘটনায় নৌকার কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করছেন আওয়ামীলীগ নেতারা। তবে অনেকেই মনে করছেন, এ ধরণের সহিংসতার ঘটনা নৌকার বিজয়ে প্রভাব পড়তে পারে।
গত রবিবার নগরীর দুটি ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন দলের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। দুপুর আড়াইটায় নগরীর চান্দু মার্কেট এলাকায় নিজ নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী এবং একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাফিন মাহমুদ তারিক। এতে তিনি অভিযোগ করেন, রবিবার সকালে তার পাঁচজন নারী কর্মী নৌকা এবং ঘুড়ি প্রতীকের প্রচারণায় বের হন। তারা ধানগবেষণা রোড এলাকায় ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান শরীফ ওরফে আনিস শরীফের পুরান বাড়িতে ভোট চাইতে যান। এসময় কাউন্সিলর আনিস শরীফের ভাই এবং চরমোনাই’র মুজাহিদ কমিটির সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মোহন শরীফ তাদের ঘরে ডেকে নিয়ে হাতপাখা প্রতীকে ভোট চাইতে বলেন। তিনি আরো বলেন, ‘দুপুরের দিকে আমি আমার ছেলেসহ ৪-৫ জন পুনরায় ওই এলাকায় গণসংযোগ করতে গেলে আনিস শরীফের ভাই মোহন শরীফ, বজলু শরীফ, অপি শরীফ, সাইফুল শরীফ এবং শামীম হাওলাদারসহ কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের ধাওয়া করে। এমনকি আনিস শরীফ নিজেও সেখানে উপস্থিত হয়ে নৌকার পোস্টার ছেঁড়ার অপবাদ দিয়ে আমার লোকেদের মারধর করে। এসময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় ছেলেসহ আমি রক্ষা পেলেও আমার কর্মী চাঁন খাঁ ও আজিম হাওলাদারকে আটকে রেখে মারধর করে একটি মোটরসাইকেল রেখে দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে আহত অবস্থায় ওই দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
তবে প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থীর এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এবং আসন্ন নির্বাচনে ঠেলাগাড়ি প্রতীকের প্রার্থী আনিসুর রহমান শরীফ। নগরীর ধানগবেষণা সড়কে নিজ বাড়িতে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সাফিন মাহমুদ তারিক নৌকার বিপক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। তিনি আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে নিজের নির্বাচনের প্রচার চালাচ্ছে। রবিবার দুপুরের দিকে তারিক নিজে লোকজন নিয়ে এসে নৌকা প্রতীকের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। বিষয়টি আমার লোকেরা দেখতে পেয়ে প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করা হয়। এসময় স্থানীয়রা তাদের ধাওয়া দিলে তারিক লোকজন নিয়ে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় একটি মোটরসাইকেল ফেলে যায় তারা। খবর পেয়ে পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। এই ঘটনায় মামলা করবেন বলেও জানান আনিস শরীফ।
অপরদিকে, নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী শাকিল হোসেন পলাশকে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি, মারধরের অভিযোগ উঠেছে প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থী রিয়াদ হোসেন সাজনের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। রবিবার দুপুরে নগরীর রিফিউজি কলোনিতে পলাশের নির্বাচনী কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এসময় নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে বলে জানান পলাশ। এর প্রতিবাদে পুলিশ কমিশনার কার্যালয় ঘেরাও করে পলাশের সমর্থকরা। এসময় বিক্ষুব্ধরা দোষীদের দ্রæত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। পলাশ জানান, দুপুরে নগরীর রিফিউজি কলোনিতে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে মোটরসাইকেলযোগে আসেন প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থী ঠেলাগাড়ি প্রতীকের রিয়াদ হোসেন সাজনের অনুসারী বাবুনীসহ কয়েকজন। হঠাৎ করেই টেবিলের ওপর রাখা টিফিন ক্যারিয়ার দিয়ে আমাকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে আমাকে পিস্তল ঠেকিয়ে মারধর করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, পলাশের সাথে সাবেক কাউন্সিলর নাসিরের বিরোধ হয়। এসময় পলাশকে মারধর করে নাসির। এ নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এর জের ধরেই নাসিরের ভাতিজা বাবু ও তার লোকেরা মারধর করেছে শাকিল হোসেন পলাশকে।
এর আগে একই ওয়ার্ডে আগের রাতে সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী কামরুন্নাহার রোজীর প্রচার মাইক ও গাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে। এছাড়া গত শুক্রবার রাতে নগরীর বান্দরোডে পাবলিক লাইব্রেরি সংলগ্ন মাঠে ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী জয়নাল আবেদীন ও এটিএম শহিদুল্লাহ কবিরের লোকেদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং চেয়ার ভাঙচুর হয়। এ নিয়ে পরদিন শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেন জয়নাল আবেদীন। তাছাড়া শনিবার দুপুরে নগরীর পলাশপুর এলাকায় এক কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে অপর প্রার্থীর সমর্থককে আটক করতে গিয়ে বস্তিবাসীর রোষানলে পড়তে হয় পুলিশকে।
সাম্প্রতিক এ সহিংসতার ঘটনায় স্থানীয়রা জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডেই ক্ষমতাসীন দলের সাথে সরাসরি অথবা সমর্থক কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই নৌকাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আধিপত্য বিস্তার ও নির্বাচনে বিজয়ী হতে চান। এমনকি একপক্ষ আরেক পক্ষকে সাদিকপন্থী হিসেবে প্রচার চালাতে দেখা যায়। স্থানীয়দের মতে, এতে করে সাধারণ ভোটারদের উপর প্রভাব পড়তে পারে। আর তাতে ক্ষতি হবে নৌকার প্রার্থীর।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচনের প্রধান এজেন্ট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আফজালুল করীম বলেন, ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিজেদের আধিপত্য দেখানোর জন্য একে অপরের সঙ্গে বিরোধে জড়াচ্ছে। এ নিয়ে কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও এখানে নৌকার কোন সম্পৃক্ততা নেই। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী সহিংসতা যাতে এড়ানো যায়, সে বিষয়ে আমরা চেষ্টা করছি। তাছাড়া সহিংসতা প্রতিরোধে মাঠ পর্যায়ে আমাদের একাধিক সদস্য কাজ করছে।