বাংলাদেশকে বিদায় করে সেমিফাইনালে পাকিস্তান
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: নভেম্বর ৬, ২০২২ , ২:১৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে ডেস্ক : দক্ষিণ আফ্রিকার বিদায়ে বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাওয়ার। কিন্তু পাকিস্তানের কাছে বাঁচা-মরার ম্যাচে ৫ উইকেটে পরাজিত হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে।
বাংলাদেশের হৃদয় ভাঙার ম্যাচে মূল আলোচনা ছিল সাকিবের বিতর্কিত আউট। যার প্রভাব পড়ে প্রথম ইনিংসে। তার পরেও বাকি ব্যাটাররা অবদান রাখতে না পারায় স্কোরটা বড় হয়নি। নাহলে পাকিস্তানকে চেপে ধরার সুযোগ ছিল। রান আটকানোর সঙ্গে উইকেট তুলে নিতে পারলেও মামুলী স্কোর পেয়ে পাকিস্তান ১১ বল হাতে রেখে ৫ উইকেট হারিয়েই জিতে নিয়েছে। ১২৮ রানের লক্ষ্যে বাবর-রিজওয়ানের বিদায়ের পর নওয়াজ-হারিসের জুটি অবদান রাখে বেশ খানিক্ষণ। ৩১ রানের সেই জুটি ভাঙে নওয়াজের রান আউটে। তিনি ফেরার আগে ১১ বলে ৪ রান করেছেন।
তারপর শান মাসুদ-হারিস ২৯ রানের জুটিতে জয়ের পথটা আরও সহজ করেছেন। হারিসকে বিদায় দিয়ে এই জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। হারিস ১৮ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ৩১ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেছেন। ইফতিখার আহমেদকে (১) মোস্তাফিজ বিদায় দিলেও ততক্ষণে জয়ের চৌকাঠে ছিল বাবর আজমরা। শান মাসুদের অপরাজিত ২৪ রানে ১৮.১ ওভারেই পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত হয়েছে। তার ১৪ বলের ইনিংসে ছিল ২টি চার। বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট নেন নাসুম আহমেদ, সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান ও এবাদত হোসেন।
পাকিস্তান: ১৮.১ ওভারে ১২৮/৫ (রিজওয়ান ৩২, বাবর ২৫, হারিস ৩১, শান ২৪*; নাসুম ১/১৪, মোস্তাফিজ ১/২১, এবাদত ১/২৫, সাকিব ১/৩৫)
ফল: পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: শাহীন আফ্রিদি।
রানআউট মিস
বাবর-রিজওয়ানকে বিদায় দেওয়ার পর আরও একটি উইকেট তুলে নেওয়ার সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। তখন ক্রিজে ছিলেন মোহাম্মদ নওয়াজ-মোহাম্মদ হারিস। কিন্তু রান আউটের সুবর্ণ সুযোগ তারা মিস করেছে।
বাবরকে ফেরালেন নাসুম, রিজওয়ানকে এবাদত
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে পাকিস্তানকে ১২৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ। জবাবে ওপেনিং জুটিতেই বাবর-রিজওয়ান ৫৭ রান যোগ করেছেন। ১১তম ওভারে দারুণ এই জুটি ভেঙেছেন আজ সুযোগ পাওয়া নাসুম আহমেদ। ৩৩ বলে ২৫ রান করা বাবর মোস্তাফিজের ক্যাচ হয়েছেন। তার ইনিংসে ছিল ২টি চার।
এক ওভার পর এবাদত হোসেন বিদায় দিয়েছেন রিজওয়ানকেও। ৩২ বলে ৩২ রান করা এই ব্যাটার শান্তর কাছে ক্যাচ তুলেছেন। তার ইনিংসে ছিল দুটি চার ও একটি ছয়।
পাওয়ার প্লেতে পাকিস্তানের ৩৪ রান
১২৮ রানের লক্ষ্যে ধীরে-সুস্থে খেলে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে বিনা উইকেটে ৩৪ রান উঠেছে পাকিস্তানের। যা আবার বাংলাদেশের ইনিংসের তুলনায় যা কম। বাংলাদেশ একটি উইকেট হারিয়ে ৪০ রান তুলেছিল।
রিজওয়ানের ক্যাচ মিসে শুরু বাংলাদেশের
প্রথম ওভারেই উইকেট তুলে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে বাংলাদেশের। তাসকিন আহমেদের প্রথম ওভারে ক্যাচ দিয়েছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। কিন্তু সোহান সেটি গ্লাভসবন্দি করতে পারেননি। নাহলে শুরুতে পাকিস্তানকে চাপে রাখা যেত।
পাকিস্তানকে ১২৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিতলেই সেমিফাইনাল। এমন সম্ভাবনায় অ্যাডিলেডে পাকিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে খুব বেশি আহামরি সংগ্রহ পায়নি বাংলাদেশ। ৮ উইকেটে ১২৭ রানই করতে পেরেছে।
অবশ্য একটা পর্যায় পর্যন্ত ছন্দেই ছিল বাংলাদেশ। লিটনের বিদায়ের পর ইনিংস মেরামত করছিলেন সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ৫২ রানের এই জুটি ভাঙে শাদাব খানের ওভারে সৌম্য সরকারের বিদায়ে। এই ওভারটিই মূলত ম্যাচের রং পাল্টে দিয়েছে। সৌম্যর ফেরার পরের বলে আম্পায়ারের বিতর্কিত এক সিদ্ধান্তে এলবিডাব্লিউ হন সাকিব। জোড়া আঘাতে চাপে পড়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ আর ইনিংস মেরামত করতে পারেনি। এক ওভার বিরতি দিয়ে নাজমুল শান্ত ফিরলে বিপদ বাড়ে আরও। এই ব্যাটারই সর্বোচ্চ ৫৪ রান করেছেন।
শেষ দিকে বাকি ব্যাটাররা অবদান রাখতে পারেননি। শুধু আফিফ হোসেন ২০ বলে ২৪ রান করতে পারায় স্কোর দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ১২৭ রান। বাংলাদেশকে অল্পতে আটকে রাখতে বড় অবদান পেসার শাহীন আফ্রিদির। ২২ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন। তাছাড়া ৩০ রানে দুটি নিয়েছেন লেগ স্পিনার শাদাব খান। একটি করে নিয়েছেন হারিস রউফ ও ইফতিখার আহমেদ।
মোসাদ্দেক-সোহানও ব্যর্থ
দ্রুত সৌম্য, সাকিব, শান্তর উইকেট পড়লে পরের ব্যাটার হিসেবে মোসাদ্দেক থিতু হওয়ার মতো কিছু করতে পারেননি। বরং বাজে শটে বোল্ড হয়েছেন শাহীনের বলে। ফেরার আগে করতে পারেন ৫। নতুন নামা নুরুল হাসান সোহানও একই ওভারে শূন্য রানে ফিরলে শেষটা বাজে হওয়ার ইঙ্গিত মিলতে থাকে। তাসকিন আহমেদও এদিন হাত খুলতে পারেননি। তাকে ১ রানে বাবর আজমের ক্যাচ বানিয়েছেন শাহীন আফ্রিদি। নাসুম ৬ বলে ৭ রান করেছেন। তাকে শেষ ওভারে ফিরিয়েছেন হারিস রউফ।
শান্তর বিদায়ে দ্রুত পড়লো আরেকটি উইকেট
৫২ রানের জুটি ভাঙে সৌম্যর বিদায়ে। জোড়া আঘাতে একই ওভারে সাকিব আল হাসান ফিরলেও অর্ধশত রান তুলেশান্ত স্কোরবোর্ড সচল রেখেছিলেন। ১৪তম ওভারে তাকেও বিদায় দিয়েছে পাকিস্তান। ইফতিখার আহমেদের বলে বোল্ড হয়েছেন। ততক্ষণে ৪৮ বলে ৫৪ রান হয়ে গেছে তার। ইনিংসে ছিল ৭টি চার।
সৌম্যর বিদায়ে ভাঙলো জুটি, বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বিদায় সাকিবেরও
পাওয়ার প্লেতে একটি উইকেট পড়লেও ইনিংস মেরামতে অবদান রাখছিলেন শান্ত-সৌম্য। এই জুটিতে যোগ হয় ৫২ রান। গুরুত্বপূর্ণ জুটিটি ভেঙেছেন লেগ স্পিনার শাদাব খান।
সৌম্য রিভার্স সুইপ খেলতে গেলে ক্যাচ উঠে যায় বাতাসে। ক্যাচটি নেন শান মাসুদ। ফেরার আগে ১৭ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় ২০ রান করেছেন। পরের বলে তো সাকিব আল হাসানকেও লেগ বিফোরে ফিরিয়েছেন শাদাব খান। অবশ্য এই বল খেলার সময় কিছুটা এগিয়ে এসেছিলেন তিনি।
আম্পায়ার কিছুক্ষণ ভেবে আঙুল তুলেছিলেন। পরে রিভিউ নিলে দেখা যায় থার্ড আম্পায়ার লেগ বিফোরের সিদ্ধান্তেই অটল থেকেছেন। অথচ ব্যাট মাটির কিছুটা ওপরে থাকা অবস্থায় আলট্রা এজে স্পাইক দেখা গেছে। কিন্তু টিভি আম্পায়ার ঘোষণা দেন বল ব্যাটে লাগেনি। অধিনায়ক সাকিবের কাছেও পুরো বিষয়টা অবিশ্বাসের মতো লেগেছিল বলে কিছুক্ষণ মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত আম্পায়ারের কথায় সাজঘরের পথ ধরেন শূন্য রানে।
পাওয়ার প্লেতে উঠলো ৪০
পাওয়ার প্লেতে লিটনের উইকেট পড়লেও ৪০ রান উঠেছে। ৬ ওভারে এক উইকেটে বাংলাদেশর সংগ্রহ ছিল ৪০ রান।
তবে এই জুটি গড়তে যাওয়া শান্ত চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে জীবনও পেয়েছেন। ওয়াসিমের বলে কভারে ক্যাচ ছেড়েছেন শাদাব খান। তখন তিনি ১১ রানে ব্যাট করছিলেন।
সাজঘরে লিটন
শুরুটা প্রত্যাশিত হয়নি। আগের ম্যাচে দুর্দান্ত শুরু এনে দেওয়া লিটন দাস তৃতীয় ওভারেই ফিরেছেন। শাহীন আফ্রিদির বলে সরাসরি শান মাসুদের হাতে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। ফেরার আগে আবার একই ওভারে ছক্কাও মেরেছেন। ৮ বলে তিনি করেছেন ১০ রান।
সেমির আশায় টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছে বাংলাদেশ
আগের ম্যাচে হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে প্রোটিয়াদের। ফলে সুপার টুয়েলভে গ্রুপ দুইয়ে পাকিস্তান-বাংলাদেশ ম্যাচটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভার্চুয়াল নকআউট। এই ম্যাচ জয়ী দল সরাসরি চলে যাবে সেমিফাইনালে। আর হারলেই বিমানের টিকিট কাটতে হবে। এমন ম্যাচে বাংলাদেশ টসও জিতেছে। শুরুতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাকিব আল হাসান।
বাংলাদেশ দলে তিনটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাদ পড়েছেন শরিফুল ইসলাম, ইয়াসির আলী, হাসান মাহমুদ। তাদের জায়গায় ফিরেছেন সৌম্য সরকার, নাসুম আহমেদ ও এবাদত হোসেন। পাকিস্তান অবশ্য অপরিবর্তিত একাদশ নিয়েই মাঠে নেমেছে।
বাংলাদেশ একাদশ: নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), আফিফ হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন, নুরুল হাসান, তাসকিন আহমেদ, নাসুম আহমেদ, এবাদত হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান।
পাকিস্তান একাদশ: মোহাম্মদ রিজওয়ান, বাবর আজম (অধিনায়ক), শান মাসুদ, মোহাম্মদ হারিস, ইফতিখার আহমেদ, মোহাম্মদ নওয়াজ, শাদাব খান, মোহাম্মদ ওয়াসিম, নাসিম শাহ, হারিস রউফ, শাহীন আফ্রিদি।