বিপণি বিতানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় : মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ২৫, ২০২০ , ৯:০৩ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : রাজধানীর বিপণি বিতানগুলোতে ঈদের কেনাকাটায় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। পণ্য কেনাবেচার সময় সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেউই। ব্যবসায়ীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও এ ব্যাপারে নেই কোনও পদক্ষেপ।
সরেজমিনে শনিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বিভিন্ন বিপণি বিতান ঘুরে দেখা যায়, দোকানগুলোতে রয়েছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য দোকানের সামনে টাঙানোর কথা ছিল সতর্কবাণী সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন। তবে তা মানছেন না ব্যবসায়ীরা। মালিক ও কর্মচারীদের মুখে নেই মাস্ক, হাতে নেই গ্লাভস। নিয়ম–নীতির (স্বাস্থ্যবিধি) তোয়াক্কা করছেন না কেউ। অনেক ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোজার ঈদে মার্কেটে না আসলেও এবার তারা মার্কেটে আসতে বাধ্য হয়েছে। অনেক দিন বাসায় থাকতে তাদের আর ভালো লাগে না। তাছাড়া প্রয়োজনীয় পোশাকও দরকার তাই বাধ্য অনেকেই মার্কেটে আসছে এমনটাই জানানালেন তারা।
অন্যদিকে করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বিক্রি বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে ঈদের সময় দোকান খোলা রাখার সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
তাছাড়া সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে মার্কেট–দোকান বন্ধের নির্দেশনায় শেষ দিকের হুড়োহুড়িতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায় বলেও যুক্তি দিয়েছেন তারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দোকান খোলা রাখার সময় অন্তত দুই ঘণ্টা বাড়ালে ক্রেতাদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটার সুযোগ করে দিতে পারবেন তারা। কোভিড–১৯ মহামারীর কারণে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করে সংক্রমণ এড়াতে রাজধানীর বড় বড় শপিং সেন্টারগুলোকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন।
গত ১ জুলাই থেকে এই নির্দশনা মেনেই চলছে বেচাকেনা। এর আগে গত ১ জুন থেকে টানা এক মাস সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সীমিত পরিসরে বেচাকেনা চলে। এর আগে ২৫ মার্চ থেকে প্রায় দুই মাসের বেশি সময় করোনাভাইরাসের ভয়ে বেচাকেনা গুটিয়ে রেখেছিলেন ক্ষুদ্র দোকানিরা।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন শনিবার দিনের শেষে প্রতিনিধিকে বলেন,“ দোকান মালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত প্রায় ২০ দিন আগে বেচাকেনার সময় বাড়ানোর জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। উনারা বিবেচনা করবেন বললেও এখনও কিছু হয়নি। ঈদের আছে আর মাত্র পাঁচ দিন। “মন্ত্রণালয়ে আবেদন না করে উপায় ছিল না। সন্ধ্যার দিকে কাস্টমাররা আসা শুরু করেন। আর ওই সময়ই পুলিশসহ প্রশাসনের অন্যান্য লোকজন দোকান বন্ধ করতে হুলস্থূল শুরু করে দেন। এভাবে তো বেচাকেনা করা যায় না।”
ঢাকার নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ডাক্তার শাহীন আহমেদ বলেন, “ব্যবসায়ীরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, মহামারীর মাঝেও দিনের বেলায় বিপণিবিতানগুলোতে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির মধ্যে দূরত্ব বজায় রেখে স্বাভাবিক বেচাকেনা চলছে। কিন্তু সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ রাখার বাধ্যবাধকতার কারণে বিকাল ৫টার পর থেকে এক ধরনের হুড়োহুড়ি লেগে যাচ্ছে। কারণ ওই সময়টাই বেচাকেনার সবচেয়ে মোক্ষম সময়। কোরবানির ঈদের মওসুম কাছে আসার কারণেও এমনটি হয়ে থাকতে পারে। এই পরিস্থিতিতে বেচাকেনার সময় বাড়ানোর বিকল্প দেখছি না।” তিনি বলেন, “প্রশাসনের নির্দেশেই ৭টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করতে হচ্ছে। আমরা এখন চাচ্ছি অন্তত ঈদের আগ পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞাটা যেন তুলে নেওয়া হয়। ক্ষুদ্র দোকানিরা যেন কিছুটা বেচাকেনা করে তাদের দীর্ঘদিনের ক্ষতি পুষিয়ে আনতে পারেন।”
নিউ মার্কেটের পাশের আরেক বিপণন কেন্দ্র চাঁদনী চকের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিজাম উদ্দিনও একই ধরনের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “সন্ধ্যার দিকে অফিস ছুটির পর বেচাকেনার চাপ যখন একটু বাড়ে বিধিনিষেধের কারণে তখনই বন্ধের প্রস্তুতি নিতে হয়। ঈদের আগে এটি একটি সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। আমরা সিটি করপোরেশনে যোগাযোগ করেছি। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির কাছে চিঠি দিয়ে সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি। কিন্তু এখনও কোনো খবর আসেনি।”
মহামারী আসার আগে স্বাভাবিক সময়ে ঢাকার বিপণিবিতানগুলো রাত ৮টার পর থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হত। ব্যবসায়ীরা নতুন স্বাভাবিকতায় আরও এক ঘণ্টা সময় বাড়িয়ে ৯টা পর্যন্ত বেচাকেনার সুযোগ চাচ্ছেন।
মিরপুর–২ নম্বর সেকসনের মিরপুর শপিং সেন্টারের ব্যবস্থাপক আবুল হোসেন গত শুক্রবারের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, এই মার্কেটের দুটি ফ্লোর নিয়ে পার্কিং। শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে ৫টা নাগাদ পার্কিংয়ের দুটি ফ্লোরই গাড়িতে পূর্ণ হয়ে যায়। “অর্থাৎ অন্তত ১০০ গাড়ি সেখানে একত্রিত হয়। বেচাকেনা জমে উঠতে না উঠতেই ৬টা থেকে দোকান বন্ধের প্রস্তুতি নিতে হয়েছে।”
এই ব্যবসায়ী বলেন, “সকাল ১০টায় দোকান খুললে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজে ১১টা বেজে যায়। কিছুক্ষণ বেচাকেনার পর দুপুরে খাবারের বিরতি। বিকাল নাগাদ ক্রেতাদের আনাগোনা কম থাকে। আবার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে দোকানের ভেতরে ২–১ জনের বেশি ক্রেতা এলাউ করা যায়নি। অর্থাৎ বেচাকেনা চলে ধীর গতিতে।”
এই মার্কেট ও মিরপুর–১ নম্বরে কো–অপারেটিভ মার্কেট ব্যবসায়ী সমবায় সঞ্চয় সমিতির সভাপতি নাসির উদ্দিন ভূইয়া বলেন, “সরকার যদি আপতত ঈদের আগ পর্যন্ত রাত ৯টা পর্যন্ত বেচাকেনার সুযোগ দেন এবং ঈদের পর আবার ৮টার সিডিউল ফিরিয়ে আনেন তাহলে ব্যবসায়ীদের উপকার হবে।
“এতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার উদ্দেশ্যটিও আরও ভালোভাবে পালন হবে। ক্রেতারা বাড়ি থেকে কেনাকাটা করতে বেরিয়ে আসলে আমরা ব্যবসায়ীরা তো আর ফিরিয়ে দিতে পারি না।”