বিবিসি’র প্রতিবেদন : কিয়েভের পর খারকিভেও আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২ , ৭:৩৯ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাবিশ্ব
দিনের শেষে ডেস্ক : দক্ষিণের মেলিতোপোল দখল করে নেবার পর এবার ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে প্রবেশ করেছে রাশিয়ান সেনাবাহিনী, বলছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ।
রাশিয়ান সেনারা শহরের প্রতিরোধ বেষ্টনী ভেদ করেছে এবং সেখানে তাদের সাথে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর লড়াই চলছে বলে খবর আসছে। রাতভর মিসাইল হামলার পর রাশিয়ান বাহিনী শহরটিতে প্রবেশ করলো। মিসাইল হামলায় একটি নয় তলা আবাসিক ভবন ধসে পড়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার জরুরী বিভাগ। ভবনটির বেজমেন্টে আশ্রয় নেয়ার কারণে ৬০ জনের মতো বাসিন্দার প্রাণ রক্ষা হয়েছে। তবে বয়স্ক একজন নারী মারা গেছেন। বিবিসির সংবাদদাতা পল এ্যাডামস জানিয়েছেন, প্রকৃত অর্ধে খারকিভ শহরেই রুশ ও ইউক্রেনীয় সৈন্যদের মধ্যে প্রথমবারের মত রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ বা ‘স্ট্রিট ফাইটিং হচ্ছে। রাস্তার যুদ্ধ অত্যন্ত গোলমেলে এবং কখন কি হবে তা আগে তেকে বলা কঠিন। আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা – দু’দিক থেকেই এ যুদ্ধ এক কঠিন পরীক্ষা। শহরটি থেকে প্রকাশ পাওয়া কিছু ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তার কোণায় কোণায় ইউক্রেনের সৈন্যরা রকেটচালিত গ্রেনেড নিক্ষেপ করছে, এবং রুশ সৈন্যরা সাঁজোয়া যানের পেছনে পেছনে পায়ে হেঁটে এগুচ্ছে। পল এ্যাডামস লিখছেন, গত কয়েকদিনে রুশ কৌশল ছিল বড় শহরগুলো এড়িয়ে চলা, এবং দৃশ্যতঃ তাদের ইচ্ছা ছিল রাজধানী কিয়েভে ঢুকে সরকার পরিবর্তন ঘটানো। খারকিভের ক্ষেত্রে হয়তো সেই কৌশলে একটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। খারকিভ শহরটি রুশ সীমান্তের একেবারে কাছে, এবং বরাবরই এ সম্ভাবনা ছিল যে রুশ অভিযান হলে এ শহরটিই হয়তো প্রথম বিপদে পড়বে। গ্যাস পাইপলাইন ধ্বংস : ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বলছে, রাশিয়ান বাহিনী শহরটির কাছে একটি গ্যাস পাইপলাইনও ধ্বংস করেছে। স্থানীয় গভর্নর ওলেহ সিনেগুবভ জানিয়েছেন, যেসব রাশিয়ান বাহন শহরে প্রবেশ করেছে সেগুলো হালকা সামরিক বাহন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে শহরে রাশিয়ার সেনা ইউনিটের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যায়, রাশিয়ান সামরিক জীপ ধীরে ধীরে বরফাচ্ছাদিত খারকিভের একটি সরু রাস্তা ধরে এগুচ্ছে। পাশে হেঁটে যাচ্ছে স্থল সেনা। অন্যদিকে ‘টাইগার’ নামে পরিচিত দুটি রাশিয়ান সামরিক জীপে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে এমন একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। একটি পরিত্যক্ত মাঠের কাছে সেগুলোকে জ্বলতে দেখা যায়। তবে নিরপেক্ষ সূত্র থেকে এই ভিডিওগুলো যাচাই করতে পারেনি বিবিসি। আজ সকালের দিকে খারকিভের কর্তৃপক্ষ শহরের ১৫ লাখের মতো বাসিন্দাদের আশ্রয়স্থলে অবস্থান নিতে বলেছে। রাস্তায় বের না হতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। রাজধানী কিয়েভের কেন্দ্র থেকে পশ্চিমে নতুন করে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এর আগমুহূর্তে শহরে সাইরেন বেজে ওঠে। গত রাতে কিয়েভ থেকে ৩০ কিলোমিটার দুরে ভাসিলকিভ এলাকায় একটি তেল পরিশোধনাগারে মিসাইল হামলা চালায় রাশিয়া। মুহূর্তের মধ্যে এই বিস্ফোরণে আলোকিত হয়ে ওঠে কিয়েভের রাতের আকাশ। শহরের মানুষজনকে ক্ষতিকারক রাসায়নিক ধোঁয়ার ব্যাপারে সাবধান করা হয়েছে। অধিবাসীদের ঘরের জানালা বন্ধ করে রাখতে বলা হয়েছে। এর আগের খবরে বলা হয়, রুশ অন্তর্ঘাতী গ্রুপগুলো রাজধানী কিয়েভের ভেতরে ঢুকে পড়েছে এবং তারা সক্রিয় রয়েছে। সোমবার সকাল পর্যন্ত কিয়েভে কঠোর কারফিউ জারি রয়েছে। শহরের পাতাল রেল স্টেশন, ভবনের নিচে গাড়ি পার্কিং এলাকা ও বেজমেন্টে হাজার হাজার ইউক্রেনিয়ান অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি বোঝার জন্য অপেক্ষা করছেন। উত্তর-পূর্বের ওখতিরকা শহরে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও অনাথ আশ্রমে রাশিয়ান হামলায় সাত বছর বয়সী একটি শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। লড়াইয়ে এ পর্যন্ত ১৯৮ জন ইউক্রেনীয় মারা গেছে বলে জানাচ্ছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী। জাতিসংঘ জানাচ্ছে, যুদ্ধের হাত বাঁচতে ৪৮ ঘণ্টায় ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়েছেন এক লাখ ২০ হাজার মানুষ। পোল্যান্ডে প্রবেশের জন্য সীমান্তে ভিড় করে রয়েছেন বহু ইউক্রেনিয়ান। যে পুরুষদের বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে – তারা যুদ্ধ করার জন্য ইউক্রেন রয়ে যাচ্ছেন। বহু শিশু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সূত্র: বিবিসি