মিতু হত্যা: এখনও অন্ধকারে পুলিশ
পোস্ট করেছেন: admin | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ৭, ২০১৬ , ৩:১০ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////,জাতীয়
চট্টগ্রাম: পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু আক্তার খুনের ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখনও অন্ধকারে আছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডটি কোন জঙ্গি সংগঠন বা জামায়াত-শিবির করেছে নাকি অন্য কোন সংক্ষুব্ধ পক্ষ পেশাদার খুনি ভাড়া করে ঘটিয়েছে তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছে না পুলিশ।
কখনও মোবাইলের এসএমএস, কখনও কালো রংয়ের মাইক্রোবাস, কখনও বাবুল আক্তারের স্ত্রীর আগেভাগে বাসা থেকে বের হওয়া আবার কখনও স্বর্ণ চোরাচালানকারী মাফিয়াদের নিয়ে ধারণার উপর ভিত্তি করে অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
সিএমপি কমিশনার মো. ইকবাল বাহার সোমবার (০৬ জুন) জানিয়েছিলেন একদিন পর অর্থাৎ মঙ্গলবার হত্যাকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে দৃশ্যমান অগ্রগতির কথা জানাতে পারবেন।
মঙ্গলবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মূল জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি, এটাই বাস্তবতা। তবে তথ্যগত এবং বস্তুগত কিছু অগ্রগতি আছে। আমরা আরও পর্যবেক্ষণ, বিচার-বিশ্লেষণ করে একটা জায়গায় পৌঁছাতে চাই।
শুরুতে চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিলেও সম্পৃক্ততা না পেয়ে তাদের প্রত্যেককে ছেড়ে দিয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। তবে উদ্ধার হওয়া মোটর সাইকেলের মালিক দেলোয়ারকে মঙ্গলবার (০৭ জুন) সকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকের পর সিএমপির কাছে হস্তান্তর করেছে।
নগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ বলেন, দেলোয়ারের বাড়ি বোয়ালখালীর কধুরখীল উপজেলায়। থাকে নগরীর জামালখানে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে ছয় বছর আগে সে মোটর সাইকেলটি বিক্রি করে দিয়েছে। এরপর কয়েক হাত ঘুরে এখন মোটর সাইকেলটি কার কাছে আছে সে জানেনা।
মোটর সাইকেলের পর কালো রংয়ের মাইক্রোবাস
সিসি ক্যামেরার ফুটেজে খুনিদের ব্যবহৃত মোটর সাইকেলের পেছনে কালো রংয়ের যে মাইক্রোবাস দেখা গেছে সেটা খুনিদের সহযোগিতা করার জন্য এসেছিল বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার মো.ইকবাল বাহার।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মাইক্রোবাসটির গতিবিধি দেখে আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি যে এটা খুনিদের ব্যাকআপ ফোর্স হিসেবে কাজ করছিল। খুনিরা যদি আক্রান্ত হত তবে মাইক্রোবাসের সহযোগিতা নিত। আমরা মাইক্রোবাসটি জব্দ করার চেষ্টা করছি।
সন্দেহ স্বর্ণ চোরাচালানি মাফিয়াদেরও
হত্যাকাণ্ডের পরপর পুলিশ এর সঙ্গে জঙ্গিদের সম্পৃক্ত থাকার সন্দেহ পোষণ করেছিল। হত্যার দিন গভীর রাতে নগরীর শুলকবহর বড় গ্যারেজ এলাকা থেকে মোটর সাইকেলটি উদ্ধারের পর জামায়াত-শিবিরের দিকেও আঙ্গুল তুলেছিল। এরপর পুলিশের সন্দেহের তালিকায় এসেছে স্বর্ণ চোরাচালানি মাফিয়ারাও।
চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি রাতে নগরীর কোতয়ালি থানার রিয়াজউদ্দিন বাজারে বাহার মার্কেটের ছয়তলার দুটি কক্ষ থেকে তিনটি লোহার সিন্দুক জব্দ করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এর মধ্যে একটি সিন্দুকে আড়াই’শ স্বর্ণের বার এবং আরেকটিতে নগর ৬০ লক্ষ টাকা পাওয়া যায়। ওই স্বর্ণ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে একটি চোরাচালানি মাফিয়া সিন্ডিকেটের তথ্য পান বাবুল আক্তার। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যদের গ্রেফতারে কার্যক্রমও শুরু করেছিলেন বাবুল আক্তার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর পুলিশের উপ কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, মিতু আক্তার খুনের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোন জঙ্গিগোষ্ঠী দায় স্বীকার করেনি। আবার সাধারণত জঙ্গিরা নিরীহ নারী-শিশুদের উপর আঘাত করে না। চোরাচালানি মাফিয়াদের হাত অনেক লম্বা। তারা বাবুল আক্তারের উপর সংক্ষুব্ধ ছিল। তারাই ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা তদন্ত করে দেখতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার মো.ইকবাল বাহার সাংবাদিকদের বলেন, প্রথমত জঙ্গি সম্পৃক্ততার একটা বিষয় আমরা বলেছি। তারপর জামায়াত-শিবির আছে। এর বাইরে আরও যে যে অপশন আছে সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে এই গৃহবধূর উপর হামলা হয়েছে সেটাই আগে আমরা বের করার চেষ্টা করছি। সেটা বের করতে পারলে অনেক কিছুই সহজ হয়ে যাবে।
‘কারা এসএমএস পাঠাল, অপারেটর কোম্পানি থেকে কি এসএমএস এসেছিল, বাবুল আক্তারের স্ত্রীর মোবাইল ফোনটা পাওয়া যাচ্ছেনা কেন, তিনি কেন ছেলে নিয়ে আগেভাবে বের হলেন সব বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি। আরও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমরা সংগ্রহ করেছি। আশা করি খুনিদের স্পষ্ট ছবিও পেয়ে যাব। ’ বলেন সিএমপি কমিশনার।