মোদির সফরে গুরুত্ব পাবে আঞ্চলিক যোগাযোগ
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মার্চ ২৪, ২০২১ , ১২:৪৮ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে ডেস্ক : শুক্রবার ২৬ মার্চ ঢাকায় আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষের অনুষ্ঠান ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে যোগ দিতে তার এই সফর। আর এই সফর ঘিরে চলছে নানা গুঞ্জন। তিস্তাসহ পানি বন্টন চুক্তির প্রত্যাশা করছেন অনেকেই। তবে বাংলাদেশের মূল টার্গেট শুধুই তিস্তা নয়। বাংলাদেশ চাইছে আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক সম্প্রসারণ। যার কেন্দ্রবিন্দু হতে চায় বাংলাদেশ। সীমান্ত হত্যা বন্ধে দীর্ঘ দাবিও এবার জোড়ালে ভাবে উঠাবে বাংলাদেশ। সবমিলে ২৭ মার্চ বাংলাদেশ-ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার টেবিলে স্থান পেতে পারে ৭টি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা চুক্তি। আর এই সফরে উদ্বোধন হবে ৮টি প্রকল্প। জানা গেছে, মোদির সফরকালে বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল জাদুঘর, শিলাইদহের সংস্কারকৃত কুঠিবাড়ি, মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া হয়ে কলকাতা পর্যন্ত স্বাধীনতা সড়ক, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি সমাধি, বাংলাদেশের কাছে ভারতের ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর, চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চালু, দুটি সীমান্ত হাট চালু এবং স্মারক ডাকটিকিটের মোড়ক উন্মোচন।
অন্যদিকে এ দফায় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৭টি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। তবে এসবের মধ্যে এখন পর্যন্ত পানি চুক্তি নিয়ে কিছু নেই বলে নিশ্চিত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতে নাগরিকত্ব আইন এবং মুসলমিদের নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সরকার বা বিজেপির রাজনীতি অনেক সময় বাংলাদেশকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। ট্রানজিট সুবিধাসহ ভারতের নানা চাহিদা পূরণ করার পরও বাংলাদেশ কী পেয়েছে- সেই প্রশ্ন উঠছে।
মোদির এই সফরকে সামনে রেখেই গত ৯ মার্চ সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর ওপর একটি সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। সেতুটি সরাসরি যুক্ত করেছে বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলোকে। এখন ভারতের এই রাজ্যগুলো সেতু দিয়ে সহজে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে পণ্য আনা নেয়া করতে পারবে। পাঁচ বছর আগেই ভারতের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার বা ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা কার্যকর হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ফারাক এখন নানা আলোচনার জন্ম দিচ্ছে। সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারত তাদের চাহিদার সবই পেয়েছে। কিন্তু তার তুলনায় বাংলাদেশের প্রাপ্তি না থাকায় এখানে হতাশা বাড়ছে। তিনি বলেন, ভারতের কিছু উদ্বেগ ছিল বাংলাদেশ নিয়ে। ধরুন, উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী কিছু গ্রুপ যে কার্যকলাপ চালাচ্ছিল। তারপর তাদের ট্রানজিটের ব্যাপার ছিল। এই সমস্যাগুলোতে কিন্তু বাংলাদেশ পরিপূর্ণভাবে সহযোগিতা করেছে তাদের উদ্বেগ দূর করার জন্য। এসব ব্যাপারে ভারতের কিন্তু আর চাওয়ার কিছু নাই, মন্তব্য করেছেন তৌহিদ হোসেন।
ফেনীর নদীর ওপর এই ব্রিজ উদ্বোধন হল। তাতে করে কানেকটিভিটির আরেকটা সুযোগ সৃষ্টি হল। আসলে ত্রিপুরার মানুষের জন্য এটা বিরাট সুবিধা হল ভারতের অন্য অংশ থেকে বা বিদেশ থেকে পণ্য আনা নেয়ার ক্ষেত্রে। মি. হোসেন আরও বলেছেন, এগুলো সবই হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের যে কয়েকটা চাওয়া ছিল, দৃশ্যত তাতে কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এই সাবেক পররাষ্ট্র সচিবের বক্তব্য হচ্ছে, ‘তিস্তা নদীর পানি নিয়ে কিন্তু আমরা মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম যে তা হবে। কারণ বেশ কয়েক বছর যাবৎ একাধিক প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছিলেন। এবং সই হওয়ার কাছাকাছিও গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। এটা এখন অনেকটাই কোল্ডস্টোরেজে চলে গেছে। যেটা একটা হতাশার কারণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন মনে করেন, বাংলাদেশের উদ্বেগগুলো ভারতের কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে আমরা দেখি প্রতিটা রাষ্ট্রেরই ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট (জাতীয় স্বার্থ) কিন্তু প্রাধান্য পায়। কিন্তু তার যে প্রতিবেশীর সাথে এমন ধরনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, যেখানে বাংলাদেশ তাদের উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রণে এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে, সেখানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত অন্তত নিরপেক্ষ ভূমিকা নেবে-সেটা আমরা আশা করেছিলাম। সেটাও কিন্তু করেনি।
অধ্যাপক ইয়াসমিন আরও বলেছেন, সে কারণে এই ক্ষোভটাও কিন্তু বাংলাদেশে রয়ে গেছে যে এখানে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক, সেটা কিন্তু স্ট্রাটেজিক (কৌশলগত) নয়, যেটাকে আমরা বলি ট্যাকটিক্যাল। এর মানে হচ্ছে, যখন যেটা প্রয়োজন, সেই প্রয়োজনের ভিত্তিতে সম্পর্কটা নির্ধারিত হচ্ছে। তিনি বলছেন ভারত বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের বিষয়টা দীর্ঘ মেয়াদে চিন্তা করছে না বলে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের উদ্বেগের জায়গাাগুলোকেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে না।
২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ছিল তিস্তার পানি ভাগাভাগি প্রসঙ্গে। তবে দু দেশের মধ্যে ২২টি চুক্তি সই হলেও তিস্তা নিয়ে চুক্তি হয়নি। তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি সই না করার ক্ষেত্রে কয়েকবছর ধরেই ভারতের পক্ষ থেকে তাদের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতার বিষয়কে কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে। তবে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে দেশটির রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকার কেউই এর দায়িত্ব নিতে চায় না। তিস্তা ইস্যুসহ বাংলাদেশের চাহিদাগুলোর ক্ষেত্রে ভারত সংকীর্ণ স্বার্থ দেখছে বলে তিনি মনে করেন।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এখনও অনেক চাওয়া এবং পাওয়ার বিষয় রয়েছে। বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাচ্ছে। তখন শুল্ক বা কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পাওয়ার বিষয়টা চলে যাবে। সেখানে বাংলাদেশের চাওয়ার বিষয়টা হচ্ছে, বাংলাদেশ উন্নয়নমীল দেশ হওয়ার পরও ভারত যেন সেই সুবিধাগুলো আরও কয়েকবছর অব্যাহত রাখে। বন্ধু দেশ হিসাবে ভারতের কাছে এখন বাংলাদেশের এটা বড় চাওয়া হতে পারে।