আজকের দিন তারিখ ২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সারাদেশ রোজা শুরুর ১ মাস আগ থেকেই চড়া চট্টগ্রামে পাইকারি ভোগ্যপণ্যের বাজার

রোজা শুরুর ১ মাস আগ থেকেই চড়া চট্টগ্রামে পাইকারি ভোগ্যপণ্যের বাজার


পোস্ট করেছেন: admin | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ১০, ২০১৬ , ১২:৫৯ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ


GO0VVT_originalচট্টগ্রাম : ‘এই বাঙ্গালীরে সোজা করতে প্রয়োজন লাঠি। হাতে লাঠি থাকলেই সব ঠিক। আর সেই লাঠিটি হাতে নিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন। দু’দিন আগে ৫৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি হওয়া চিনি, আজ ৫০ টাকা। ৯৫ টাকার ছোলার দর নেমে এসেছে ৭৫ থেকে ৭৮ টাকায়। ঠেলার নাম বাবাজি’…

জেলা প্রশাসন পরিচালিত বাজার মনিটরিং টিমের টানা অভিযানে স্বস্তি এসেছে চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বাজারে। অভিযানের পরে বাজারের অবস্থা নিয়ে হাটহাজারী বাজারের খুচরা বিক্রেতা ও খাতুনগঞ্জের নিয়মিত ক্রেতা পঞ্চাশোর্ধ মাহবুবুল আলম এভাবেই বলছিলেন।

রোজা শুরুর ১ মাস আগ থেকেই চড়া চট্টগ্রামে পাইকারি ভোগ্যপণ্যের বাজার। এ নিয়ে মাহবুব আলমের চিন্তার শেষ ছিল না, কেন না খুচরা পর্যায়ে বেশি দামে পণ্যে করতে তাকে পরতে হচ্ছে নানা সমস্যায়। তবে গতকাল (বৃহস্পতিবার) শহর থেকে ফিরে তার সে মেজাজ আর নেই। কেন না জেলা প্রশাসন পরিচালিত বাজার মনিটরিং টিমের টানা অভিযানে স্বস্তি এসেছে বাজারে। এক ধাক্কাতেই পাইকারিতে চিনির দাম কমেছে প্রায় ৯ টাকা। কমেছে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে থাকা ছোলারও।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, রমজানের প্রথম দিন থেকেই অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং টিম। পাইকারী ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জ, কাজীর দেউড়ি, রেয়াজউদ্দিন বাজারসহ নগরীর বিভিন্ন বাজারে টানা অভিযান চালাচ্ছে বেশ কয়েকটি বাজার মনিটরিং টিম। সর্বশেষ শুক্রবার সকালে নগরীর প্রবর্তক মোড়ের আফমি প্লাজার আগোরা সুপারশপকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কাঁচামরিচ, টমেটো, বেগুন, চিনি ইত্যাদি পণ্যের দাম বেশি রাখায় প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করা হয়।
এ ছাড়া খাতুনগঞ্জে একটি চিনি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে বেশি মুনাফা করার দায়ে ২০ লাখ টাকা জরিমানাসহ গত দুদিনে নগরীর বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে মোট ২৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বাজার মনিটরিং টিম। পাইকারি বাজার থেকে কম দামে কাঁচা মরিচ, শশা ও বেগুন কিনে বেশি দামে বিক্রি করার অপরাধে রেয়াজুদ্দিন ও কাজির দেউড়ি বাজারের তিন বিক্রেতাকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘অভিযান পরিচালনা করার পর থেকে বাজারে কিছুটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এই ভাবে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হলে জনগণ উপকৃত হবে। আমরা চাই আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত হোক। জেলা প্রশাসনের বাজার মনিটরিং টিমকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা দেব।’

গতকাল বৃহস্পতিবার মীর গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাজি মীর আহমদ সওদাগর ট্রেডার্সে প্রতি কেজি চিনি ৫০ টাকায় বিক্রয় হয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে গত বুধবারও প্রতিষ্ঠানটি ৫৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে চিনি বিক্রয় করে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও র‌্যাব অভিযানের ফলে চিনির দামে স্বস্তি ফিরবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া শুক্রবার ২৫ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ আজ বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়, রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছগীর আহমেদ জানান, খাতুনগঞ্জে এখন ৫০ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রয় করা হচ্ছে।
এদিকে খাতুনগঞ্জের পাশাপাশি বাজার মনিটরিংয়ের প্রভাব পড়েছে নগরী কাঁচা বাজারেও। বুধবারের অভিযানের পর রেয়াজউদ্দিন বাজার ও কাজীর দেউড়ির খুচরা বিক্রেতাদের পণ্যক্রয়ের রশিদ সংরক্ষণ করতে দেখা গেছে। প্রথম রমজানে যে পণ্য বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।

শুক্রবার সরেজমিনে রেয়াজউদ্দিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দু’দিন আগে ৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, আগে যা বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। শশা ৩০ টাকা, আগে বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। টমেটো ৬০, আলু ২২ টাকা, ঢ়েড়শ ৩৫ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০, পেঁপে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্য সবজিগুলো বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায়।

নিয়মিত কাঁচা ও ভোগ্যপণ্যে ক্রয় করতে হয় গৃহিণী জেসমিন আক্তার পুতুলের। তিনি বলেন ‘কাঁচা তরিতরকারি কিনে এখন কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে। মুদি দোকানগুলোতে পণ্যের তালিকা থাকায় কেউ বেশি দামে কোনো পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না। এ তালিকা সব সময় থাকলে ভালো হত। সারা বছর ধরেই বাজারে প্রশাসনের মনিটরিং থাকা প্রয়োজন।’

অভিযানের নেতৃত্ব থাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান বলেন, ‘চলমান অভিযানে বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসে বলে মনে করি। তবে আমাদের এ বিশেষ অভিযান রমজান পর্যন্ত চলমান থাকবে। কোনোভাবেই যাতে ক্রেতারা প্রতারিত না হন সে দিকে আমরা নজর দিচ্ছি। চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে চারটি টিম কাজ করছে। এতে সহযোগীতা করছেন আরো আটজন শিক্ষানবীশ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।’