আজকের দিন তারিখ ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
সম্পাদকীয় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন: সংকট সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন: সংকট সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মার্চ ২৫, ২০২১ , ১২:১২ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়


গত সোমবার উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শিশুসহ ৭ রোহিঙ্গা দগ্ধ হয়ে মারা গেছে। তবে রোহিঙ্গাদের দাবি, এ ঘটনায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগুনে ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার ঝুপড়ি ঘর, দোকান ও স্থানীয় বসতি পুড়ে ছাই হয়েছে। এমন ঘটনা দুঃখজনক। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা রইল। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে অভিযোগ আসছে। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে উগ্রবাদী ‘আলেকিন’ গোষ্ঠীর দুই পক্ষের বিরোধ চলছে। যে এলাকায় আগুনের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে একটি পারিবারিক বিরোধও চলছিল। এসব মিলিয়ে ঘটনাটিকে ‘নাশকতা’ বলে সন্দেহ করছে রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ। তাদের দাবি, প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করা, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া ব্যাহত করা এবং দেশে মুজিববর্ষ উদযাপনের সময় ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে নাশকতা ঘটানো হতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা চাই, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসুক। বাংলাদেশে অবস্থান করা ১১ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের বৈধ নাগরিক। জোর করে তাদের নিজ বাসভূমি থেকে উচ্ছেদ করে বাংলাদেশে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, যা একটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকে নির্মূল করার চরম বহির্প্রকাশ। বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিলেও মিয়ানমারের নাগরিক অধিকারসহ রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে ওই দেশের সরকারকে বাধ্য করাই এই সমস্যার সমাধান হবে। না হয় রোহিঙ্গাদের নিয়ে নানা সংকটে আমাদের পড়তে হবে। তাই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি দ্রুত করতে হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া থেমে আছে। আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা ছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এই নৃশংসতাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে গত বছরের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা দায়ের করে গাম্বিয়া। হেগের পিস প্যালেসে গত ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর এ মামলার ওপর প্রাথমিক শুনানি হয়। কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চললেও এই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক আদালত মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আদেশ দেন। আমরা আশা করছিলাম, আইসিজের আদেশ নিঃসন্দেহে মিয়ানমারের ওপর রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে বড় ধরনের চাপ তৈরি করবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বর্তমানে বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রিত। তাদের প্রতি সমবেদনা এবং মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি সংহতি এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের তাগিদ জানিয়ে আসছে বিশ্ব সম্প্রদায়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। দুই দফা সময় দিয়েও তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে টালবাহানা শুরু করে। ভারত, জাপানের মতো দেশগুলো চায় এ সংকট এ অঞ্চলের মধ্যেই সমাধান হোক। এই ক্ষেত্রে চীন, রাশিয়ার সমর্থনও জরুরি। এ অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি, স্থিতি এবং নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুর রাজনৈতিক সমাধান অপরিহার্য। প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মিয়ানমারের ওপর জোরালো চাপ রাখতে আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করতে হবে।