লকডাউনে সাইবার অপরাধ : প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে হবে
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ৭, ২০২০ , ৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এখন ঘরে থাকছে অধিকাংশ মানুষ। এতে অনলাইনের ব্যবহার বেড়ে গেছে। সক্রিয় হয়ে উঠেছে সাইবার অপরাধীরাও। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে অপরাধ বেড়েই চলছে। দেশে প্রচলিত সাইবার সুরক্ষা ব্যবস্থা ও প্রচলিত আইন রুখতে পারছে না অপরাধীদের। তথ্যপ্রযুক্তি অপরাধ শনাক্তে দুর্বল জেনে অপরাধী চক্র দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে আতঙ্কের। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে তাদের কাছে সরাসরি ১ হাজার ৭৬৫টি অভিযোগ জমা পড়েছিল। এছাড়া হ্যালো সিটি অ্যাপস, ফেসবুক, মেইল ও হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে অভিযোগ এসেছে ৬ জাজার ৩০০টি। ২০১৯ সালে সরাসরি অভিযোগের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৩২টিতে। আর হ্যালো সিটি অ্যাপস, ফেসবুক, মেইল ও হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে অভিযোগ এসেছিল ৯ হাজার ২২৭টি। সাইবার ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আগে সাইবার ক্রাইম বিষয়ক বেশি অভিযোগ আসত নারীদের কাছ থেকে। কিন্তু এখন সমান্তরালভাবে পুরুষরাও সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন। ২০১৯ সালে মোট অভিযোগের ৫৩ শতাংশ এসেছে পুরুষদের কাছ থেকে, আর বাকি ৪৭ শতাংশ এসেছে নারীদের কাছ থেকে। এই চিত্রটি বলে দেয় অপরাধীর কাছে সাধারণ মানুষ কতটা জিম্মি। লকডাউনে অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আর অপরাধবিজ্ঞানীরা বলছেন, মনিটরিং বাড়িয়ে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে ‘লকডাউনে’ সাইবার অপরাধ আরো বাড়বে। আমাদের দেশে ইন্টারনেটকেন্দ্রিক যে অপরাধগুলো ঘটছে, এর মাঝে বেশি হলো সামাজিক যোগাযোগ সাইটের মাধ্যমে বন্ধুত্ব তৈরি করে মিথ্যা সম্পর্কের আশ্বাস বা অন্য কোনো প্রলোভন দেখিয়ে অন্যের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা বা প্রতারণার মাধ্যমে ফাঁদে ফেলা; কারো কোনো অন্তরঙ্গ বা আপত্তিকর অবস্থার ছবি বা অন্য কোনো একান্ত ব্যক্তিগত বা গোপনীয় তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া বা ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে জিম্মি করা। স্কুল-কলেজ পড়–য়া অল্পবয়সী মেয়েরাই এসব প্রতারণার শিকার হচ্ছে বেশি। শুধু যে নারী নিগ্রহের লক্ষ্যেই সাইবার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে তা নয়, আর্থিক ক্ষেত্রেও সাইবার অপরাধীরা ভয়ঙ্কর অপরাধ করে চলেছে। মোবাইল ফোনে ভুয়া মেসেজ দিয়ে নম্বর হ্যাক করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ লোপাট করার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এছাড়া আরেকটি বড় অপরাধপ্রবণতা হলো ইন্টারনেটে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো। আমরা প্রায়ই সংবাদ মাধ্যমে ইন্টারনেটকেন্দ্রিক প্রতারণা ও অপরাধের খবর পাচ্ছি। ইদানীং করোনা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলছে অপরাধীরা। সাইবার অপরাধীদের দমনে আমাদের প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। মনে রাখতে হবে, সাইবার অপরাধ যেমন বাড়ছে তেমনি তা দমনেও অপরাধ তদন্ত বাহিনীকে প্রশক্ষিত হওয়া দরকার। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন হচ্ছে এবং অপরাধীরা সে প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অপরাধ করে চলেছে। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে যারা মাঠ পর্যায়ে অপরাধ তদন্তে কাজ করছেন তাদেরও এ ব্যাপারে দক্ষতা বাড়াতে হবে। সরকার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে বলে আশা করি।