আজকের দিন তারিখ ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার, ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য ১৪ লাখ প্রবাসী শ্রমিক বেকার : পারিবারিক আয় কমেছে ৭৪%

১৪ লাখ প্রবাসী শ্রমিক বেকার : পারিবারিক আয় কমেছে ৭৪%


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ২, ২০২০ , ৫:২১ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


দিনের শেষে প্রতিবেদক : কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন একটি সংকটময় সময়ে পড়েছে। এই মহামারি নিম্নআয়ের মানুষের উপর অস্বাভাবিকভাবে প্রভাব ফেলেছে। ফলে দেশের ১০ কোটি ২২ লাখ মানুষ অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত দুর্বলতার ঝুঁকিতে পড়েছেন। প্রায় ৭৪ শতাংশ পরিবারের উপার্জন কমে গেছে। ১৪ লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন বা ফিরে আসছেন। ব্র্যাক, ডেটা সেন্স এবং উন্নয়ন সমন্বয়-এর এক যৌথ সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার (১ জুন) অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে “কোভিড-১৯ এবং জাতীয় বাজেট ২০২০-২০২১: নিম্নআয়ের মানুষের জন্য কৌশল পুনর্বিবেচনা” শীর্ষক এই সমীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে ওয়েবেনারে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদের সঞ্চালনায় গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন, আইসোশ্যাল-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. অনন্য রায়হান। প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন। সমীক্ষাটিতে ব্র্যাক, বিআইজিডি, পিপিআরসি, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা পরিচালিত গবেষণা-সমীক্ষার পর্যালোচনার পাশাপাশি একটি জরিপও পরিচালনা করা হয়েছে এবং সেসবের ফলাফল সমন্বয় করে মূল প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে। জরিপটি দেশের ২৫ জেলায় দৈবচয়নে নির্বাচিত ৯৬২ জন উত্তরদাতার অংশগ্রহণে মে মাসের ১৫-১৮ তারিখের মধ্যে সম্পাদন করা হয়। গবেষণা ফলাফলে দেখা যায়, দেশে অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ চরম দরিদ্র (দৈনিক আয় ১.৯ ডলার)। এদের মধ্যে নতুন করে চরম দরিদ্র হয়ে পড়া পরিবারগুলোও রয়েছে। উচ্চ অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে থাকা চরম দরিদ্রের সংখ্যা ৪ কোটি ৭৩ লাখ এবং উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন ৩ কোটি ৬৩ লাখ মানুষ। কোভিড-১৯-এর কারণে নিম্নআয়ের মানুষের উপর বহুবিধ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে উঠে এসেছে। যেসব পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তার মধ্যে-৩৪.৮% পরিবারের কমপক্ষে একজন সদস্য চাকরি হারিয়েছেন, মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে গড় পারিবারিক উপার্জন প্রায় ৭৪% কমে গেছে, তৈরিপোশাক খাতে রফতানি এপ্রিল ২০১৯-এর তুলনায় ২০২০ সালের এপ্রিলে ৮৪% কমেছে, ১,১১৬টি কারখানা বন্ধ ঘোষিত হয়েছে এবং চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২২ লাখ শ্রমিক (২.১৯ মিলিয়ন) শ্রমিক। সমীক্ষায় আরো জানা যায়, কোভিড-১৯ নতুন অর্থনৈতিক বিভাজন, সামাজিক বিভাজন এবং ডিজিটাল বিভাজন সৃষ্টি করেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কেবল ৩৪% পরিবারের স্মার্টফোন রয়েছে এবং ৫৪% পরিবারের টিভি দেখার সুযোগ রয়েছে। অতএব, এর নিচের অংশে বসবাসকারী শিশুরা ডিজিটাল মাধ্যমে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে। ১৪ লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক চাকরি হারানোর কারণে ফিরে এসেছেন বা দেশে ফিরে আসছেন। বিদেশে থাকা অভিবাসীরাও এখন ঋণচক্র ও সামাজিক কলঙ্কের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়েছেন। ডঃ আতিউর রহমান বলেন,“মানুষকে আগে বাঁচাতে হবে, তারপর স্বপ্নপূরণ আর সুখে থাকার চিন্তা। তাই এবারের বাজেট হোক বেঁচে থাকার বা টিকে থাকার বাজেট। কোভিড-১৯ এর এই মহামারিতে সবচেয়ে হুমকির মুখে স্বাস্থ্যব্যবস্থা। মধ্যবিত্তরাই চিকিৎসাসেবা পাবেন কি না সেই আতঙ্কে আছেন, দরিদ্রদের অবস্থা তো আরও করুণ। স্বাস্থ্যখাত ঠিক না করলে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না, আমাদের অর্থনীতিও আগাবে না। ডঃ হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এখন নতুন তালিকা তৈরির সময়ক্ষেপণের দিকে না গিয়ে আগের তালিকা ধরেই কাজ করা শ্রেয়। ৭৮ লাখ প্রাথমিক শিক্ষার্থীকে যে ১০০ টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে, তা এখনই ৫০০ টাকায় উন্নীত করা দরকার। এতে করে সঠিক জায়গায় সহায়তা পৌঁছানো অনেকটা নিশ্চিত হবে। শুধু বরাদ্দ করলেই হয় না, সবার কথা, সুবিধা-অসুবিধা শুনে দক্ষতাপূর্ণ, কার্যকর ও কৌশলী বাজেট করতে হবে। সবাইকে একসঙ্গে হাঁটতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে নিম্নআয়ের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে অন্তত তিন বছরের জন্য নগদ সহায়তা ব্যবস্থা, বেকার গোষ্ঠীগুলির জন্য সর্বজনীন বেকারত্ব সুবিধা স্কিম চালু করা, অফিসগুলোর জন্য প্রতিদিন কাজের সময়সীমা ছয় ঘণ্টা করা এবং প্রয়োজনে তিনটি শিফ্ট চালু করার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়সহ গবেষণার আলোকে জাতীয় বাজেট ২০২০-২০২১-এ অন্তর্ভুক্তির জন্য দেয়া নয়টি প্রস্তাব রাখা হয়।