আজকের দিন তারিখ ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
/////হাইলাইটস///// ৭৫ বছর বয়সে ১৯ বার হামলার শিকার হন প্রধানমন্ত্রী

৭৫ বছর বয়সে ১৯ বার হামলার শিকার হন প্রধানমন্ত্রী


পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১ , ২:৫৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////


দিনের শেষে ডেস্ক :  আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন আজ মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর)। ১৯৪৭ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বেড়ে ওঠেন রাজনৈতিক সংস্পর্শে। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হওয়ায় রাজনীতির বাইরে যেতে পারেননি শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের পরে ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটে বঙ্গবন্ধুকন্যার।  বাবার হাতে গড়া আওয়ামী লীগের রাজনীতি দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে। দলকে ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব শেখ হাসিনার কাঁধে এসে পড়ে ১৯৮১ সালে। সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দেশে ফেরেন ওই বছরের ১৭ মে। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ শুরু করেন। অমসৃণ ও কণ্টকাকীর্ণ ওই পথ পাড়ি দিতে ৭৫ বছর বয়সী শেখ হাসিনাকে ১৯ বার মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়তে হয়। ১৯ দফায় সন্ত্রাসী হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান তিনি।

কখন কোথায় হামলা হয়

১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি: চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে মিছিল সহকারে যাওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর প্রথম হামলা হয়। ওই হামলায় ৭ জন নিহত ও তিন শতাধিক আহত হন।

১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট: রাত ১২টায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে হামলা চালানো হয়। শেখ হাসিনা তখন ওই ভবনেই ছিলেন। সন্ত্রাসীরা ভবন লক্ষ করে গুলি চালায় ও একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। তবে গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় বেঁচে যান তিনি।

১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর: জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন চলাকালে রাজধানীর গ্রিন রোডে তাকে লক্ষ করে গুলি ও বোমাবর্ষণ করে সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীদের গুলি তার গাড়িতে লাগলেও বেঁচে যান শেখ হাসিনা।

১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর: ট্রেন মার্চ করার সময় পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনের বগি লক্ষ করে বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়া হয়। সে সময় অসংখ্য গুলি তার বগিতে বিদ্ধ হলেও তিনি অক্ষত থাকেন।

১৯৯৫ এর ৭ ডিসেম্বর: ওই দিন শেখ রাসেল স্কয়ারে সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় শেখ হাসিনার ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়।

১৯৯৬ এর ৭ মার্চ: সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ৭ই মার্চের ভাষণের স্মরণে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি মাইক্রো বাস থেকে শেখ হাসিনাকে লক্ষ করে গুলি ও বোমা নিক্ষেপ চলতে থাকে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়।

১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলেমেয়েসহ ৩১ জনকে হত্যার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে ই-মেইল চালাচালির খবর আসে। এতে জানানো হয়, ওই ই-মেইলটি পাঠিয়েছিলেন ইন্টার এশিয়া টিভির মালিক শোয়েব চৌধুরী।

২০০০ সালের ২০ জুলাই: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি) গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় জনসভাস্থলের অদূরে ও হ্যালিপ্যাডের কাছে পুঁতে রাখা হয় ৮৪ কেজি ও ৭৬ কেজি ওজনের দুটি বোমা । কিন্তু সৌভাগ্যবশত আগেই ওই বোমাগুলোর হদিস পেয়ে যান গোয়েন্দারা। শক্তিশালী বোমা দুটি বিস্ফোরিত হলে কেবল শেখ হাসিনাই নন, নিহত হতেন বহু মানুষ ।

২০০১ সালের ২৯ মে: খুলনার রূপসা সেতুর কাজ উদ্বোধন করার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। বিষয়টি আগে থেকে জানতে পেরে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠানস্থলে বোমা পুঁতে রাখে জঙ্গি সংগঠন হুজির সদস্যরা। কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশের তৎপরতায় আগেই বোমাটি উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয় করা হয়।

২০০১ সালে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটে যান শেখ হাসিনা। সেখানে আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন স্থানে জনসভায় বক্তৃতা করার কথা ছিল তার। সে সময়ও জনসভাস্থলে বোমা পুঁতে রেখে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল হুজি। কিন্তু জনসভার একদিন আগে মাত্র ৫০০ গজ দূরের একটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে হুজির দুই সদস্য নিহত হলে সে পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে যায়।

২০০২ এর ৪ মার্চ: যুবদল ক্যাডার খালিদ বিন হেদায়েত নওগাঁয় বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে তৎকালীন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা চালায়।

২০০২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর: শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গাড়ি বহরে হামলা চালানো হয়। বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা সাতক্ষীরার কলারোয়ার রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে শেখ হাসিনার ওপর ওই হামলা চালায়।

২০০৪ সালের ২ এপ্রিল: বরিশালের গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে গুলিবর্ষণ করে জামায়াত-বিএনপির ঘাতক চক্র।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এই হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুরর রহমানের সহধর্মিণী ও আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমান এবং আরও ২৩ জন নেতাকর্মী নিহত হন। এ ছাড়াও এই হামলায় আরও ৪ শ’ জন আহত হন।

২০০৭ সালে সাবজেলে বন্দি শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার খাবারে দেওয়া হয়েছিল স্লো পয়জন। উদ্দেশ্য ছিল, ক্রমাগত বিষ দিয়ে তাকে হত্যা করা। স্লো পয়জনিংয়ের কারণে একসময় শেখ হাসিনা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০০৮ সালের ১১ জুন ১১ মাস কারাভোগের পর তিনি প্যারোলে মুক্তি পান।

২০১১ সালে শ্রীলঙ্কার একটি সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের শত্রু রাষ্ট্র পাকিস্তান এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য চুক্তি করে। সেজন্য আগাম পেমেন্টও দেওয়া হয়। শ্রীলঙ্কার সেই সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের আততায়ীদের টিম গাড়ি করে কলকাতা বিমানবন্দরে যাবার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে ভেস্তে যায় শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনাটি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লে. ক. শরিফুল হক ডালিম এবং সেনাবাহিনীর ১৬ জন অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য সামরিক অভ্যুত্থানের চক্রান্ত করে। যা উইকিলিকসের সৌদি আরবের এক গোপন বার্তায় প্রকাশ পায়। হংকংয়ে বসবাসরত এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ইসরাক আহমেদ এ পরিকল্পনায় অর্থায়ন করেন বলে গোপন বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৪ সালের শেষদিকে প্রশিক্ষিত নারী জঙ্গিদের মাধ্যমে মানববোমায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১৫০ জন নারী ও ১৫০ জন যুবককে বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। এদের নেতৃত্বে ছিল ১৩ জঙ্গি দম্পতি। তবে প্রশিক্ষণরত অবস্থায়ই পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে ওই ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যায়।

শেষবার ২০১৫ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে কাওরান বাজার এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে বোমা হামলার চেষ্টা চালায় জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা। কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণও ঘটায় তারা।