আয়ের উৎস নেই ৮৭ শতাংশ বিদেশফেরতের: ব্রাক
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ২৩, ২০২০ , ৬:২২ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: প্রবাসে বাংলা
দিনের শেষে ডেস্ক : করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন অভিবাসী কর্মীরা। কিন্তু দেশে ফিরে তারা এক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। এদের ৮৭ শতাংশেরই বর্তমানে কোনও আয়ের উৎস নেই। সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক পরিচালিত এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা যায়, এসব বিদেশফেরত শ্রমিকদের মধ্যে ৮৭ শতাংশেরই কোনও নির্দিষ্ট আয়ের উৎস নেই। এদের মধ্যে মাত্র ৩৩ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের কাছে থাকা সঞ্চয় দিয়ে তারা তিন মাস বা আরও বেশি কিছু সময় চলতে পারবেন। অন্যদিকে ৫২ শতাংশই জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন। ‘বিদেশফেরত অভিবাসী কর্মীদের জীবন ও জীবিকার ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব’ শীর্ষক একটি জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির মোবাইল ফোনে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে চালানো এই জরিপের তথ্য শুক্রবার গণমাধ্যমকে জানানো হয়। দেশে ফেরত আসা ৫৫৮ জন প্রবাসী কর্মীর উপর ওই জরিপ চালিয়েছিল ব্রাক। ঢাকা, টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, নরসিংদী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, খুলনা এবং যশোরে জরিপটি পরিচালনা করা হয়। এসব প্রবাসীদের ৮৬ শতাংশই মার্চে দেশে ফিরেছেন। আর জরিপে অংশ নেয়া ৪৫ শতাংশ প্রবাসী এসেছেন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, বাহরাইন, ওমান এবং কুয়েত থেকে। ইতালি, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরেছেন বাকিরা। এদের ৪০ শতাংশই করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে তারা দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। আর ৩৫ শতাংশ বলেছেনে, তারা ছুটিতে এসেছিলেন। ১৮ শতাংশ বলেছেন, তারা পারিবারিক কারণে চলে এসেছেন। ৭ শতাংশ বলেছেন, তাদের ফেরার সাথে করোনাভাইরাসের কোনও সম্পর্ক নেই। কোয়ারেন্টিনের বিষয়ে জানতে চাইলে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮৪ শতাংশ বলেছেন, তারা ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। ১৪ শতাংশ বলেছেন, তারা কোয়ারেন্টিন ঠিকমতো মানতে পারেননি। দুই শতাংশ বলেছেন, তারা এক সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। ফেরত আসার পর বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৪ শতাংশ বলেছেন, তারা এখন প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ভীতির মধ্যে রয়েছেন। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির ১২ জন কাউন্সিলর তাদের সবাইকে মনোসামাজিক সেবা দিয়েছেন। ফেরত আসা ২৯ শতাংশ জানান, তাদের ফিরে আসাকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি তাদের প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনরা। তারা তাদের প্রতি সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রদর্শন করেনি। তবে পরিবার সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে বলে জানিয়েছেন ৯৭ শতাংশ। জরিপে অংশ নেওয়া অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ জানান, তাদের নিজেদের সঞ্চয় বলতে এখন আর কিছু নেই। ১৯ শতাংশ জানান, তাদের যে সঞ্চয় আছে তা দিয়ে আরও এক-দুই মাস চলতে পারবেন। নিজেদের সঞ্চয় দিয়ে তিন মাস বা তার বেশি সময় চলতে পারবেন এমন সংখ্যা ৩৩ শতাংশ। ১০ শতাংশ জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে ইতোমধ্যেই আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক উৎস থেকে তারা ঋণ নিয়েছেন। ১৪ শতাংশ প্রবাসী তাদের সঞ্চয়ের ব্যাপারে কোনো প্রকার তথ্য দিতে রাজি হননি। ফেরত আসা অভিবাসীদের শতকরা ৮৪ ভাগ এখনও জীবিকা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা করতে পারেননি। তবে ফের বিদেশ যাওয়ার কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছেন জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মাত্র ৬ শতাংশ। দেশে কৃষিভিত্তিক ছোটোখাট ব্যবসা, মুদি দোকান বা অন্য কিছু করার পরিকল্পনা করছেন বাকি ফেরত আসারা।