আজকের দিন তারিখ ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার, ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
ধর্ম ও জীবন ইতিহাসের সাক্ষী দুই কেবলার মসজিদ

ইতিহাসের সাক্ষী দুই কেবলার মসজিদ


পোস্ট করেছেন: delwer master | প্রকাশিত হয়েছে: মে ২৮, ২০২২ , ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: ধর্ম ও জীবন


ইসলাম ডেস্ক : কিবলাতাঈন মসজিদ মানে দুই কেবলার মসজিদ। মসজিদটি মদিনা শরিফের পশ্চিম প্রান্তে খালিদ বিন ওয়ালিদ সড়কে অবস্থিত। বনু সালামা অঞ্চলে হওয়ার সুবাদে এই মসজিদের প্রথম নাম ছিলো- মসজিদে বনু সালামা। মসজিদে কিবলাতাইন ইতিহাসের এক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী। এই মসজিদে নামাজ আদায়ের সময় কেবলা বদলের আদেশ দেওয়া হয়।
নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে অহি পাওয়ার পর নবী করিম (সা.) মসজিদে আকসার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নামাজের মাঝখানে মক্কামুখি হয়ে নামাজের বাকিটুকু সম্পন্ন করেন। এজন্য এই মসজিদের নাম কিবলাতাঈন (দুই কেবলার মসজিদ)।

বর্তমানে মসজিদের ভেতরের মূল অংশ অক্ষত রেখে চারদিকে দালান করে মসজিদটি বাড়ানো হয়েছে। স্মৃতিস্বরূপ বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকের কেবলার জায়গাটি দু’তলা বরাবর রেখে দেওয়া হয়েছে।

পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে হজরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত নবী-রাসূলদের কেবলা ছিলো বায়তুল মোকাদ্দাস। কিন্তু নবী করিম (সা.) ও সাহাবাদের একাংশ বায়তুল মোকাদ্দাস এবং কাবার দিকে ফিরে নামাজ আদায়ের বিরল সৌভাগ্য অর্জন করেন। ইসলামের সূচনালগ্ন থেকে মদিনায় হিজরতের প্রায় ১৬ মাস পর্যন্ত বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। তবে মুসলমানদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠিত ও বিকশিত করার লক্ষে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কাবার দিকে ফিরে নামাজ আদায়ের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে উপলব্ধি করছিলেন।
অন্যদিকে মুসলমানদের কেবলা বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে হওয়ার কারণে ইহুদিরাও এই বলে অপপ্রচার করে বেড়াত যে, আমাদের ও মুসলমানদের কেবলা যেহেতু এক ও অভিন্ন, অতএব ধর্মের ক্ষেত্রেও মুসলমানদের উচিত আমাদেরই অনুসরণ করা।

এসব কারণে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হৃদয়ের সুপ্ত বাসনা ছিলো, কাবা যদি মুসলমানদের কেবলা হতো! এ বাসনা তীব্রতর হলে নবী করিম (সা.) ব্যাকুলচিত্তে আকাশের দিকে বারবার তাকাতেন, অহির মাধ্যমে এর অনুমোদনের প্রত্যাশায়।

হিজরি দ্বিতীয় সনের শাবান মাসে মতান্তরে রজব মাসের মাঝামাঝি সময়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বেশ কয়েকজন সাহাবি নিয়ে হজরত বিশর ইবনে বারা (রা.)-এর দাওয়াতে যোগ দিতে বনু সালামায় পৌঁছে জোহরের নামাজ, মতান্তরে আসরের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে তাশরিফ নেন।

নামাজে ইমাম ছিলেন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আর মুক্তাদি ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম (রা.)। দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাকাতের মাঝামাঝি সময়ে নবী করিম (সা.)-এর আন্তরিক ইচ্ছার বাস্তবায়নে হজরত জিবরাইল (আ.) অহি নিয়ে অবতীর্ণ হন। অহিতে বলা হয়, ‘হে মুহাম্মদ! আপনি নিজের মুখ মসজিদে হারামের দিকে ফেরান এবং (মুসলমানগণ) তোমরা যেখানেই থাকো, সে দিকেই নিজেদের মুখ ফেরাবে। ’ আল্লাহর নির্দেশ হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.) চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের দুই রাকাত কাবা শরিফের দিকে ফিরে আদায় করেছিলেন, বিধায় এ মসজিদ ইসলামের ইতিহাসে মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলাবিশিষ্ট মসজিদ নামে সুপরিচিত ও সমাদৃত।

দ্বিতীয় হিজরি মোতাবিক ৬২৩ খ্রিস্টাব্দে বনি সালামা অঞ্চলের মসজিদটি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবারা (রা.) নির্মাণ করেন। পরে খলিফা ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) ১০০ হিজরিতে মসজিদে কিবলাতাইন পুনর্র্নিমাণ করেন।

এর পরে শুজায়ি শাহিন আল জামালি ৮৯৩ হিজরিতে ছাদসহ মসজিদে কিবলাতাইন পুনর্র্নিমাণ করেন। এর ৫৭ বছর পর তুরস্কের উসমানি খলিফা সুলাইমান আল কানুনি ৯৫০ হিজরিতে আগের তুলনায় বৃহৎ আয়তনে মসজিদটি পুনর্র্নিমাণ করেন।
মসজিদে কেবলাতাইন অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, যা অন্য কোনো মসজিদে নেই। নবী করিম (সা.)-এর যুগ থেকে দীর্ঘকাল পর্যন্ত এই মসজিদে দু’টি মেহরাব তথা ইমামের দাঁড়ানোর স্থান ছিলো। যার একটি বায়তুল মোকাদ্দাসমুখি, অন্যটি কাবাঘরমুখি। পরে সংস্কারের সময় বায়তুল মোকাদ্দাসমুখি মিম্বরটি ভেঙে কাবামুখি মেহরাবটি অবশিষ্ট রাখা হয়। তবে, ওই মেহরাব বরাবর দু’তলায় একটি মেহরাবের নমুনা বানিয়ে রাখা হয়েছে।

ঐতিহ্যবাহী আরবীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এ মসজিদে দুই হাজারের মতো মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটিতে সুদৃশ্য দু’টি গম্বুজ ও দুটি মিনার রয়েছে। মিনারগুলো দূর থেকে দৃশ্যমান।

হজ ও ওমরা পালনকারীরা মসজিদটি দেখতে ভিড় করেন। এখানে এসে নফল নামাজ আদায় করেন। মসজিদের বাইরে প্রচুর খুচরা পণ্যের দোকান রয়েছে। এসব দোকানের অধিকাংশই নারীরা পরিচালনা করেন। বোরকা পড়ে বেচা-বিক্রি করেন তারা।