ই-কমার্স নীতিমালা নিয়ে ভাবতে হবে
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১ , ৩:০৫ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
অনলাইন কেনাকাটা। প্রতারণা নাকি আস্থার জায়গাÑ এমন প্রশ্ন সামনে আসছে বারবার। ইভ্যালির লুটপাটের ঘটনায় বিষয়টি নতুন করে সামনে আসছে। ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ই-কমার্স বাজারের আকার বছরে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। গড়ে প্রতিদিন ৩০ হাজার ক্রেতা অনলাইনে পণ্যের অর্ডার দেন। ১৩ থেকে ১৫ লাখ মানুষ বছরে একবার হলেও অনলাইনে অর্ডার করেন। অর্থাৎ বার্ষিক লেনদেন এখন ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রবৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকলে সামনের বছর এটি হবে ১৬ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা। অনলাইন লেনদেনে গ্রাহকের আগ্রহ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে এ খাতের উদ্যোক্তা। এই খবরটি অবশ্যই ইতিবাচক। তবে অগ্রগতির পাশাপাশি প্রতারণার মাত্রাও কম নয়। সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছে ই-কমার্স সাইট ইভ্যালির হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় গ্রাহক এখন অনিশ্চয়তায় ভোগছে। এ নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ইভ্যালির কার্যক্রম খতিয়ে দেখছে। দুই দিন আগে ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে ই-অরেঞ্জের মালিক দম্পতিও গ্রেপ্তার হয়েছে। অনলাইন ব্যবসা প্রসার ইতিবাচক হলেও সময় এসেছে এই ব্যবসাকে একটি নির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে আনা। বেশ কয়েকটি প্রতারণার ঘটনা ঘটার পর দেশের ই-কমার্স খাতে জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা (সংশোধিত) ২০২০ ও এর আলোকে গত ৪ জুলাই একটি নির্দেশিকা জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এতেও গ্রাহক স্বার্থ সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। নির্দেশিকার বাস্তবায়নও এখন পর্যন্ত কাগজে-কলমে রয়ে গেছে। বলা চলে, নাগরিক জীবনযাপনে অনলাইন কেনাকাটা এখন যুক্ত হয়ে আছে। স্মার্ট জীবনযাপনে সময় বাঁচাতে ও প্রয়োজনে শহরের পাশাপাশি মফস্বলেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এ তালিকায় রয়েছে গহনা, পোশাক, মুঠোফোন, চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, প্রস্তুত করা খাবার, বই, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, ওষুধ ইত্যাদি। শুধু পোশাক বা গহনা নয়, বাড়ির জন্য চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা পণ্য এখন অনলাইনে কিনছেন। ই-কমার্স ওয়েবসাইটের বাইরেও ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ খুলে বেচাকেনা করছেন অনেকে। ই-কমার্স নিয়ে বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। অনলাইনে কেনাকাটা নিয়ে অনেকে সন্তোষ প্রকাশ করলেও এ নিয়ে অভিযোগও রয়েছে বিস্তর। অনেকে অনলাইনে দেখানো পণ্যের সঙ্গে সরবরাহ করা পণ্যের মিল পান না। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, ‘অনলাইনে পণ্য কিনলে সময় বাঁচে, ঝক্কিও এড়ানো যায়। তাই ঘরের দুয়ারে প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে নিবন্ধন নেয় ইভ্যালি।’ মোটরসাইকেল, রেফ্রিজারেটর, মোবাইল ফোন সেট, টেলিভিশন ইত্যাদি পণ্য বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি গাড়ি বিক্রিতেও নেমেছে। কিন্তু শুরু থেকেই তারা নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেনি। নানাভাবে মানুষের আকর্ষণ জাগিয়ে বিপাকে ফেলেছে। সাধারণ ক্রেতার বেশিরভাগই সমস্যায় পড়েছে ইভ্যালির লেনদেনে। যারা ই-কমার্সের নামে প্রতারণা করছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। জনস্বার্থ চিন্তা করতে হবে। এখানে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া এবং বিনা স্টাবলিশমেন্টে ব্যবসা করা হচ্ছে। এতে সরকার যথেষ্ট রাজস্ব হারাচ্ছে। ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন জারি করা হয়েছে। এই আইনের উদ্দেশ্যÑ কোনো ক্রেতা কোনোভাবে প্রতারিত যাতে না হয় এবং আইনত নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রি করা না হয় কিংবা সরবরাহসহ ব্যবস্থায় ক্রেতার কোনো ক্ষতি না হয় ইত্যাদি। এই আইনের বাস্তবায়ন জরুরি।