উত্তপ্ত রাজনীতি, পাল্টেছে সুর
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৩ , ৪:৫২ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : বিএনপির দাবি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। আওয়ামী লীগ নির্বাচন চায়, দলীয় সরকারের অধীনে। এটাই দুই দলের এক দফা। গত কয়েক মাসে মাঠের আন্দোলনে এটাই ছিল মূল উপজীব্য। সম্প্রতি সুর পাল্টাচ্ছে দুই দলই। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, আর ছাড় দেওয়া হবে না। বিএনপি নেতারাও বলছেন, আঘাত এলে পাল্টা আঘাত দেওয়া হবে। দফাকেন্দ্রিক আন্দোলনের পাশাপাশি এখন রাজনীতির মাঠ আরও উত্তপ্ত হচ্ছে এ ধরনের বাক্যবাণে। নির্বাচনের বাকি মাত্র চার মাস। অথচ এক দফা দাবিতে দুই দল দুই মেরুতে অবস্থান করছে। দেশি-বিদেশি নানা বৈঠক বা আলোচনায় অবস্থানের পরিবর্তন করেনি তারা। এরই মধ্যে রাজনৈতিক মাঠে নেতাদের উসকানিমূলক বক্তব্য উত্তাপ ছড়াচ্ছে। যদিও অনেকে এটিকে রাজনীতিতে ‘কথার কথা’ বলেই উড়িয়ে দিচ্ছেন। তারা মনে করেন, দেশের অর্থনৈতিক এ পরিস্থিতিতে কোনো অস্থিরতা সামাল দেওয়ার অবস্থা নেই। সব পক্ষকে এটি বুঝতে হবে। বিশ্লেষকরাও বলছেন, আলোচনায় সমাধান না হলে সংকট বাড়বে। অস্থিতিশীল একটা পরিবেশ তৈরি হবে। যেটা কোনোভাবেই দেশের জন্য কল্যাণকর নয়। সম্প্রতি এক কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আঘাত এলে পাল্টা আঘাত করা হবে। জীবন দিয়ে হলেও দাবি আদায় করে নেওয়া হবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা যুগে যুগে শুধু মার খাবো না। এজন্য দেশ স্বাধীন করিনি। কেউ আঘাত করলে পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমরা কোনো প্রাণহানি চাই না। শান্তিপূর্ণভাবে (সরকারের) পদত্যাগ চাই। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত শেখ হাসিনার পতনের জন্য মাঠে থাকবো। শেখ হাসিনার পতনের আগে গয়েশ্বর রায় চিতায় উঠবে না। অপরদিকে বিএনপিকে সতর্ক করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা প্রস্তুত হচ্ছে, আমরাও প্রস্তুত, বেশি বাড়াবাড়ি করলে ছাড় দেওয়া হবে না। বিএনপির উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘অনেক হয়েছে আন্দোলন, এবার ঘরে ফিরে যান। আন্দোলনের নামে যদি দেশে অরাজকতা করতে চান, তবে আপনাদের বিগত বছরের মতো প্রতিহত করা হবে। কোনো নাশকতাকারীকে আর ছাড় দেওয়া হবে না। একই সুর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিরও। ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘যারা এ দেশকে পাকিস্তান বানাতে চায় তাদের প্রতিহত করতে নতুন প্রজন্মকে প্রস্তুত থাকতে হবে। রাজনীতির নামে যদি কোনো অপশক্তি মাথাচাড়া দিতে চায় তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আমার ধারণা এসব মাঠের বক্তৃতা। বর্তমান টালমাটাল বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সদ্য মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ কোনো অস্থিতিশীলতার ধাক্কা সামলাতে পারবে না। যে কোনো ধরনের অস্থিরতা, ভাঙচুর, নাশকতার ধাক্কা সহ্য করার মতো অবস্থা আমাদের অর্থনীতির নেই। এমনকি অবৈধভাবে স্থাপিত বা পরিচালিত যে কোনো দোকান, কারখানা বা যানবাহন উচ্ছেদ করাও এই মুহূর্তে সমীচীন হবে না। কোনোভাবেই উৎপাদন, সরবরাহ, বাজারজাতকরণের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করা উচিত নয়। এই নির্মম সত্যটুকু সব পক্ষকে অনুধাবন করতে হবে। তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদরা সংবিধান ও সব নির্বাচনী আইন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পারবেন, নির্বাচনকালে সব ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত। নির্বাচনকালীন সরকার কেবল রুটিন সরকার। সরকারের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। সুতরাং, সব দলের উচিত নির্বাচন কমিশনের ওপর দৃষ্টি রাখা। একবার নির্বাচন কমিশন আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠা করলে নির্বাচন ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে উন্নত হওয়ার যাত্রার শুভ সূচনা হবে। রাজপথে বর্তমান সংকটের সমাধান হবে না। বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেন, দেশ এক অবশ্যম্ভাবী রক্তপাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের প্রচণ্ড জেদ, অনমনয়ীতা, অসহিষ্ণুতা কোনোভাবেই ক্ষমতা না ছাড়ার প্রবণতার অবশ্যম্ভাবী ফল হচ্ছে- বাংলাদেশে আরেকটা রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ।
কারণ মানুষ ভোট দিতে চায়। দুই মেয়াদে মানুষকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। যতই অবকাঠামো উন্নয়ন দেখান না কেন, বাস্তবিকভাবে মানুষের জীবনমানের কোনো উন্নতি হয়নি। মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ পিষ্ট। মানুষ সিন্ডিকেটের চাপে পিষ্ট। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেকের পরিবারে কেউ না কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত। প্রতিদিন খবর পাই ছোট ছোট শিশুরা মারা যাচ্ছে। এমনও হয়েছে বাবা-মার দুটো সন্তান, দুজনকেই তারা ডেঙ্গুতে হারিয়েছেন। অন্যদিকে দেখি, উত্তর সিটি করপোরেশন স্কুলের বাচ্চাদের মশা সাজিয়ে নাচায় আর ভিডিও করে। বলে ওই ভিডিও ভাইরাল করতে। একনায়ক শাসন যখন থাকে, তখন এটাই হয়। যে কোনোভাবেই ক্ষমতায় থাকতে হবে। তারা একটা গোষ্ঠী তৈরি করে, তারা চায় যে কোনোভাবে এই সরকারকে রাখতে হবে। তাহলে তার ব্যক্তিগত কিছু লাভ হবে। বিএনপির এই নেত্রী বলেন, ‘মানুষের মধ্যে ক্ষুব্ধতা আছে, রাগ আছে। দু-একজন নেতা সর্বস্ব সুবিধাভোগী দল বাদ দিয়ে পুরো বাংলাদেশের ছোট-বড়-মাঝারি যত রাজনৈতিক দল আছে- সবাই একসঙ্গে আওয়াজ তুলছে, এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়। সুতরাং এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হচ্ছে- সাধারণ মানুষ তাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাস্তায় নামবে। সরকার তার প্রশাসন এবং ক্যাডার বাহিনী দিয়ে সেটা বন্ধ করার চেষ্টা করবে। যার কারণে এটি আলটিমেটলি রক্তপাতের দিকে যাবে।