আজকের দিন তারিখ ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য উদ্বেগ কাটছে তিন কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের

উদ্বেগ কাটছে তিন কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১ , ১২:০৭ অপরাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


দিনের শেষে প্রতিবেদক : অবশেষে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ আরও ৫ বছর বাড়িয়ে জাতীয় সংসদে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) বিল-২০২১’ পাশ হয়েছে। বিলটি পাশ হওয়ার ফলে খুলনা পাওয়ার কোম্পানির (কেপিসিএল) ২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র, সামিট পাওয়ারের ১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের ২টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নবায়ন করার পথ সুগম হয়েছে। যার ফলে কোম্পানি ৩টির বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে চলা উদ্বেগ-উৎকন্ঠার অবসান হতে চলেছে। গত বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সংসদের সমাপনী দিনে আইনটি সংসদে পাশ হয়। আগেরদিন আইনটি সংসদে উত্থাপন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এর আগে গত ০৬ সেপ্টেম্বর মন্ত্রীসভার বৈঠকে আইনটির মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাড়াতে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় ঘুরে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পাঁচ কার্যদিবসের মাথায় সংসদে আইনটি উত্থাপিত হয়। এর আগে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কথা চিন্তা করে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) খুলনা পাওয়ার কোম্পানির ২টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর বরাবরে চিঠি পাঠায়। এক পর্যায়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম প্রধানমন্ত্রীরও নজরে আনেন। তারই ধারাবাহিকতায় সরকার কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত করার আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বিএসইসির চেয়ারম্যানের এমন পদক্ষেপের কারণে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি আস্থা বেড়েছে শিবলী রুবাইয়াত কমিশনের প্রতি। তারা বলেন, বিএসইসির নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে একের পর এক বিনিয়োগকারীদের সার্থ রক্ষার্থে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা বাজারের গভীরতা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।
কোম্পানিগুলোর চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি না করলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অনেক বেশি ক্ষতির মুখে পড়তো। এতে করে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে–এমন কথা চিন্তা করেই বিএসইসির চেয়ারম্যান কেপিসিএলের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা। তবে সংসদে বিলটির প্রচন্ড বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা। তারা বলেন, জনগণের করের টাকা অন্যের হাতে তুলে দিতেই এই বিল আনা হয়েছে। বিশেষ কয়েকটি শিল্প গ্রুপকে সুবিধা দিতেই তড়িঘড়ি করে বিলটি পাস করা হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন। এর আগে মন্ত্রীসভায় আইনটির মেয়াদ আরও ৫ বছর বাড়ানোর খবরে কেপিসিএল, সামিট পাওয়ার ও ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার দরে কিছুটা তেজিভাব দেখা দেয়। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর সর্বোচ্চ ৮-১০ শতাংশ বাড়ে। এর প্রেক্ষিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কোম্পানিগুলোর কাছে দর বৃদ্ধির কারণ জানতে চায়। কোম্পানিগুলোর মধ্যে কেপিসিএল ও ওরিয়ন ফার্মার পক্ষ থেকে ডিএসইকে জানানো হয়, তারা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধি করার জন্য মন্ত্রীসভায় আইন অনুমোদনের খবর শুনেছেন। এটি বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি ইতিবাচক খবর। তবে তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি। সুতরাং কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধি সংক্রান্ত আইনের সঙ্গে তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রের নবায়নের কোন সম্পর্ক নেই। যে কারণে তাদের কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধিরও কোন কারণ নেই।
কোম্পানিগুলোর এই মতামত ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রচার করা হলে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরে ফের নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়। যেখান থেকে শেয়ারগুলো বাড়া শুরু করেছিল, প্রায় সেই জায়গায় ফিরে আসে। তবে বুধবার জাতীয় সংসদে আইনটির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য বিল আকারে উত্থানের খবরে বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) কোম্পানিগুলোর শেয়ার দরে ফের তেজিভাব দেখা দেয়। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর খবরটি যখন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, তখন ডিএসই কর্তৃপক্ষও খবরটি নিশ্চয়ই দেখেছে। তাদেরওতো চোখ-কান খোলা। তারপরও কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর সামান্য বাড়াতেই তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়ে যায়। তারা দর বৃদ্ধির কারণ জানতে কোম্পানির কাছে শোকজ নোটিশ পাঠায়। কোম্পানিগুলোর পক্ষে শোকোজ নোটিশের জবাবে সেই সময়ে বলারও কিছু ছিল না। কারণ আইনটির কার্যক্রম তখনো শেষই হয়নি। তাই তারাও গদবাধা জবাব ডিএসইর দিকে ছুড়ে দেয়।
এছাড়া, কোম্পানিগুলোর পক্ষে কী বলা সম্ভব, এই আইনের পেছনে তারাই নিয়ামক হিসাবে রয়েছেন। তাদের তদবির-যন্ত্রের কারণেই রকেট গতিতে আইনটি পাশ হয়েছে। আইনের মেয়াদ না বাড়ালে তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ আর বাড়বে না। আইনটির পেছনে কারা রয়েছেন, কারা আইনটির সুফল পাবেন, কাদের সুবিধা দেওয়ার জন্য তড়িঘড়ি করে আইনটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, তা জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যদের আলোচনার মাধ্যমে অনেকটাই স্পষ্ঠ হয়েছে।