আজকের দিন তারিখ ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার, ১৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
রাজনীতি ‘একপেশে’ আলোচনায় গিয়ে ক্ষোভ মতিয়ার

‘একপেশে’ আলোচনায় গিয়ে ক্ষোভ মতিয়ার


পোস্ট করেছেন: admin | প্রকাশিত হয়েছে: জুন ৪, ২০১৬ , ৬:৪৬ অপরাহ্ণ | বিভাগ: রাজনীতি


a.ligকাগজ অনলাইন প্রতিবেদক: ছয় দফার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের না দেখে প্রকাশ্যেই আয়োজকদের উপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।

বাম থেকে আওয়ামী লীগে আসা মতিয়ার সঙ্গে এই অনুষ্ঠানে ছিলেন তার ছাত্রজীবনের সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও নূহ উল আলম লেনিন।

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক জিএস মতিয়া বর্তমানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন তিনি।

মতিয়ার মতো লেনিনও আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এখন ক্ষমতাসীন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তবে ডাকসুর সাবেক ভিপি সেলিম কমিউনিস্ট পার্টিতেই রয়েছেন, এখন দলটির সভাপতি তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে ‘রোড টু ফ্রিডম’ নামের সংগঠন আয়োজিত ওই আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।

সভাপতিত্বকারী মাহফুজা খানমও ছাত্র ইউনিয়নের হয়ে ডাকসুর ভিপি ছিলেন।

বক্তাদের মধ্যে কেউই ছাত্রলীগে যুক্ত ছিলেন না। বক্তা হিসাবে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের নাম থাকলেও তিনি উপস্থিত হননি।

ষাটের দশকে চীনপন্থি ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতা রাশেদ খান মেনন ও হায়দার আকবর খান রনোর নাম বক্তার তালিকায় থাকলেও তারা দুজনও ছিলেন অনুপস্থিত।

ষাটের দশকের রাজনৈতিক সহকর্মীদের পাশে রেখে তখনকার মস্কোপন্থি ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মতিয়া বলেন, “বঙ্গবন্ধু যাদেরকে দিয়ে ছয় দফার প্রচার করিয়েছিলেন, তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতাদের এখানে উপস্থিত করা বা আনাটা অবশ্যই কর্তব্য ছিল। এ ধরনের একপেশে আলোচনা সভা জানলে আমি আসতাম না।

“একটা পক্ষের আলোচনা হয়েছে। সর্বমতের সমাহার ঘটানোর যে আলোচনা, সেটা হয় নাই। ৫০ বছর পূর্তির এই আয়োজন যারা করেছেন, তারা সংকীর্ণ গণ্ডির উর্ধ্বে উঠবেন, এই আশা করি।”

তার অভিযোগের বিষয়ে রোড টু ফ্রিডম প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সাগর লোহানী  বলেন, “উনি উনার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, কিন্তু কাকে ডাকা যেত, সেটা আমি পরে জানতে চেয়েছিলাম; তিনি কোনো উত্তর দেননি।”

“ওই সময়ে আন্দোলনের সংগঠকদের মধ্যে সিরাজুল আলম খান দাদা ভাই, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, শাহজাহান সিরাজ, ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী- কাকে আমি ডাকতে পারতাম? একেবারে ডান-ঘেঁষা কাউকে কি আমি আলোচনায় ডাকতে পারতাম? তাও তো পারতাম না,” আত্মপক্ষে যুক্তি দেখান তিনি।

সাগর বলেন, “তোফায়েল আহমেদকে আমরা ডেকেছিলাম। কিন্তু পরশুদিন (বৃহস্পতিবার) বাজেটের পর আমাকে জানান, শুক্রবার রাতে বিদেশ চলে যাওয়ায় তিনি থাকতে পারছেন না।

“আমরা আমাদের সামর্থ্য থেকে যতটুকু করা সম্ভব সেটাই করেছি। এর বেশি কিছু কীভাবে করতে পারতাম?”

বক্তব্যে সত্তরের নির্বাচনে বামপন্থিদের অবস্থানের সমালোচনা করে ওই সময়ের বাম নেতা মতিয়া।

তিনি বলেন, “আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিভক্তি ছিল। সেভাবে ছয় দফার সময়েও এটা কেবল স্বায়ত্তশানের দাবি, অর্থনৈতিক মুক্তির দাবি না, এমন বিতর্ক ছিল। কিন্তু আমরা দেখেছি, জাতীয়করণ, ভূমি সংস্কার ইত্যাদি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছেন।

“৭০-র নির্বাচন ছিল ৬ দফার প্রশ্নে ম্যান্ডেট। সেদিন অনেক বড় বাম নেতা স্লোগান দিয়ে বসলেন, ভোটের আগে ভাত চাই এবং এ নির্বাচন বর্জন। সেই নির্বাচন বর্জন করে না বামপন্থিরা কোনো সিট পেল, না ভোট ঠেকাতে পারল। বাঙালির কৃষক শ্রমিক ‘মনু মিয়া’র উত্তরসূরিরা বঙ্গবন্ধুকে নির্বাচিত করল।”

পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের অসারতা বঙ্গবন্ধুই বুঝতে পেরেছিলেন মন্তব্য করে মতিয়া বলেন, “তবুও জনগণের সঙ্গে থেকে তাদের আবেগ, ক্রোধ, অনুভূতির সমাহার দেখে উনি রাজনীতিটা করেছেন। সেজন্য আওয়ামী মুসলিম লীগ, আওয়ামী লীগ একেক করে এসছে। বঙ্গবন্ধু কৃত্রিম রাষ্ট্রের চক্রান্ত বুঝে কাজ করেছেন।”

মতিয়ার কয়েক দশক পর আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া লেনিন বলেন, “ছয় দফা ছিল মুক্তির সনদ। এটা অনেকটা সোপানের মতো। এটাকে এক দফা অর্থাৎ স্বাধীনতার অর্জনের ভূমিকা বলা যেতে পারে। এ কারণে বঙ্গবন্ধু এটাকে মুক্তির সনদ বলেছেন।”