এবারও ঈদে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বাড়ি যাওয়া মানা
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: জুলাই ২৭, ২০২০ , ৮:২৪ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে প্রতিবেদক : বিগত বছরগুলোর মতোই এবারের কোরবানির ঈদেও তৈরি পোশাক কারখানা তিন দিন বন্ধ থাকবে। এই তিন দিন সরকারিভাবেও ছুটি থাকবে। তবে কোনও শ্রমিক যাতে ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে না যান, সেজন্য কারখানাগুলো থেকে বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, গত রোজার ঈদের মতো এবারের কোরবানির ঈদেও যেন শ্রমিকরা বাড়িতে না যান।
বিজিএমইএ’র এই নির্দেশনার পর গার্মেন্ট মালিকরাও তাদের শিল্প-কারখানাগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের আবশ্যিকভাবে কর্মরত এলাকা ত্যাগ না করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে।
এর আগে ২২ জুলাই শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে এ ব্যাপারে চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ঈদুল আজহার সময় শিল্প-কারখানাগুলোর কার্যক্রম সরকার ঘোষিত ঈদের সাধারণ ছুটির দিন ছাড়া চলমান রাখা যেতে পারে। পাশাপাশি শিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের আবশ্যিকভাবে কর্মরত এলাকায় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা যেতে পারে।
তবে শ্রমিকদের পাশাপাশি কারখানার মালিকরাও মনে করছেন, তাদের এই নির্দেশনা শ্রমিকরা হয়তো মানবেন না। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করছেন, গত রোজার ঈদে অনেক শ্রমিক বাড়ি যেতে পারেননি। তাই এবারের ঈদে হয়তো মালিকদের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই শ্রমিকরা বাড়ি যাবেন।.
মালিকদের নির্দেশনা অমান্য করার বাস্তবসম্মত তিনটি কারণ উল্লেখ করে বিজিএমইএ’র শীর্ষ এক নেতা দিনের শেষে প্রতিনিধিকে জানান, ‘প্রথমত বাবা মায়ের সঙ্গে শ্রমিকদের ঈদ করাটা আবেগ ও অনুভূতির বিষয়। এছাড়া গত ঈদে বাড়িতে না যেতে পাড়ার কষ্টটাও দূর করতে এবারের ঈদে তারা বাড়ি যেতে চাইবেন। দ্বিতীয়ত, শ্রমিকদের মধ্যে কে বাড়ি গেলো বা কে গেলো না তা তদারকি বা মনিটরিং করার কোনও পদ্ধতি নেই। তৃতীয়ত, গত রোজার ঈদে রাস্তায় যানবাহন ও যাত্রীবাহী গাড়ি ছিল না, তবুও শ্রমিকরা বিভিন্নভাবে বাড়ি গিয়েছিল। এবার ঈদে রাস্তায় শত শত গাড়ি নামানো হয়েছে। বিশেষ করে ঈদের যাত্রীদের বাড়ি পৌঁছানোর জন্য সরকার ট্রেনও চালু করেছে। এমন অবস্থায় শ্রমিকরা বাড়ি না গিয়ে করবেটা কী?’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ওয়াজেদ-উল ইসলাম খান বলেন, ‘শ্রমিকরাও মানুষ। শ্রমিকদেরও আবেগ আছে। আত্মীয়-স্বজন আছে। তারাও বাবা মায়ের সঙ্গে ঈদ করার ইচ্ছে রাখেন। তবে এখনও অনেক শ্রমিক বেতন পাননি।’ তাদের বেতন দ্রুত দেওয়ার জন্য তিনি গার্মেন্ট মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।.
এদিকে গার্মেন্ট মালিকরা বলছেন, শ্রমিকরা বাড়ি যেতে চাইলে গার্মেন্ট মালিকদের কিছুই করার নেই। বিজিএমইএ’র সদস্য ই-এইচ ফেব্রিক্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামার আলম বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদের ছুটিতে শ্রমিকরা যাতে কর্মরত এলাকা ত্যাগ না করে, সেজন্য আমরা কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছি। তবে যে তিন দিন কারখানা বন্ধ থাকবে, সেই তিন দিন শ্রমিকরা কোথায় থাকবেন সেটা শ্রমিকরা ঠিক করবেন। আর হাজার হাজার শ্রমিকের মধ্যে কে কোথায় যাবেন তা মনিটরিং কে করবে। ফলে শ্রমিকরা বাড়ি গেলে ঠেকাবে কে? এছাড়া রাস্তায় ট্রেন বাস সব এখন চালু।’
এ বিষয়ে বিকেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ঈদুল আজহার ছুটিতে কর্মস্থল ছেড়ে যেতে পারবেন না। আমরা শ্রমিকদের সেভাবেই নির্দেশনা দিয়েছি। কর্মস্থল এলাকা ছেড়ে চলে না যাওয়ার জন্য সব শ্রমিককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকদের বলা হয়েছে, ঈদের ছুটিতে যেন কেউ বাড়িতে চলে না যায়। এ ব্যাপারে সরকারেরও নির্দেশনা আছে। তবে রাস্তায় যানবাহন থাকায় অনেকে হয়তো এই নির্দেশনা অমান্য করেই বাড়ি যাবে। এছাড়া অনেকে গত রোজার ঈদে বাড়ি যেতে পারেনি। তারা এই ঈদে যেতে চাইবে।’
এর আগে গত ১৬ জুলাই সরকারি ছুটির সঙ্গে মিল রেখে তৈরি পোশাক কারখানায় ঈদের ছুটি তিন দিন থাকার ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সচিবালয়ে এ দিন তিনি বলেন, ছুটিকালীন সময়ে কোনও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। একইভাবে ছুটিকালীন তিন দিন পোশাক কারখানার শ্রমিকরাও তাদের কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না।