এমপি আনার হত্যাকাণ্ড : লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন ‘কসাই’ জিহাদ
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ২৪, ২০২৪ , ৪:৪১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: জাতীয়
দিনের শেষে প্রতিবেদক : ভারতের কলকাতায় নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। প্রায় ৮ দিন নিখোঁজ থাকার পর সামনে আসে হত্যাকাণ্ডের খবর। এরপর থেকেই আসতে শুরু করেছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। ভারত ও বাংলাদেশের গোয়েন্দা বাহিনী সমন্বিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, হত্যার পর আনোয়ারুলের লাশকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হয়। সম্প্রতি এমপি আনোয়ারুলকে খুনের পর টুকরো করা সেই ‘কসাই’ জিহাদকে কলকাতায় গ্রেফতার করেছে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি। গতকাল বারাসাত আদালতে তোলা হবে তাকে। সিআইডির এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জিহাদ হাওলাদার নামে ওই ব্যক্তি বাংলাদেশি নাগরিক। তিনি অবৈধভাবে ভারতের মুম্বাইতে বাস করতেন। তার আদি বাসস্থান বাংলাদেশের খুলনার দিঘলিয়া থানার বারাকপুরে। বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক আখতারুজ্জামান জিহাদকে দুমাস আগে ভারতে নিয়ে আসেন। এরপর তিনি কলকাতায় থাকতেন। জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিআইডি জানায়, আখতারুজ্জামানের নির্দেশে ওই ফ্ল্যাটে তিনিসহ আরও চারজন এমপি আনারকে শ্বাসরোধ করে খুন করেন। সিআইডির ওই কর্মকর্তা বলছেন, হত্যার পর প্রথমে শরীর থেকে চামড়া ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। এরপর মাংসগুলো আলাদা আলাদা টুকরো করা হয়। এগুলোকে খুব ছোট ছোট করে টুকরো করা হয়েছে— যাতে চেনা না যায়। এরপর মাংস-খণ্ডগুলো পলিথিনে ভরা হয়। পরে হাঁড়গুলোকেও ছোট ছোট টুকরো করা হয়। জিহাদের দেওয়া তথ্যমতে— পলিথিনে ভরে হাঁড় ও মাংসের টুকরোগুলো বিভিন্নভাবে কলকাতার ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ফেলে আসা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি ইতিমধ্যে পোলেরহাট থানার কৃষ্ণবাটি সেতুর কাছে বাগজোলা খালে তল্লাশি চালায়। খালটি নিউটাউন এলাকার ওই ফ্ল্যাটে সামনে দিয়ে বয়ে গেছে। তবে সেখানে কিছু পাওয়া যায়নি বলে সিআইডি জানিয়েছে। এদিকে, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে একের পর এক বেড়িয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হত্যার পর টুকরো টুকরো লাশের অংশ বহন করা গাড়িচালকের দেওয়া তথ্যমতে, লাশের টুকরোগুলোর মধ্যে কিছু অংশ পোলেরহাট থানার ভাঙড় এলাকার কৃষ্ণমাটি গ্রামে ফেলা হয়েছে। জিরানগাছাতেও ফেলা হয়েছে দেহাংশ। এসব জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে ভারতের সিআইডি। সম্প্রতি আনোয়ারুল আজীম আনারকে বহন করে লাল গাড়ি ও খুন হওয়ার পর লাশের টুকরো বহন করা সন্দেহে আরেকটি সাদা গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। দুটি গাড়ির ফরেনসিক পরীক্ষা করছে কলকাতা পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, গত ১৩ মে এমপি আনার এক নারী ও দুই পুরুষের সঙ্গে কলকাতার নিউ টাউনের অ্যাকুইটিকা কমপ্লেক্সে প্রবেশ করেন। প্রবেশের পর তাকে বের হতে দেখা যায়নি। গত ১৩ ও ১৫ মের মধ্যে ওই নারী এবং দুই পুরুষকে বাড়িটি থেকে একাধিকবার বের হতে দেখা গেছে। তাদের দুজনকে বড় বড় ব্যাগ হাতে নিয়ে গাড়িতে উঠতে দেখা গেছে। ব্যাগ নিয়ে তারা যে গাড়িতে উঠেছিলেন, সেটা ছিল উবারের ভাড়া করা গাড়ি। ধারণা করা হচ্ছে, সেই গাড়ির রঙ সাদা। সূত্র বলছে, আনার নিউটাউনের ওই ফ্ল্যাটে ঢোকার ২০ মিনিটের মধ্যেই তাকে খুন করা হয়। প্রথমেই আনারের মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়। এরপর বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। মরদেহের পচন ঠেকাতে মরদেহটি টুকরো টুকরো করে কেটে ফ্রিজে রাখা হয়। এরপর মরদেহের টুকরোগুলোতে হলুদ মেশানো হয়। পরে খুনিদের সুবিধামতো লাশের টুকরোগুলোর মধ্যে কিছু অংশ পোলেরহাট থানার ভাঙড় এলাকার কৃষ্ণমাটি গ্রামে ফেলা হয়েছে। কিছু অংশ কলকাতার একটি খালে এবং কিছু অংশ ফেলা হয়েছে জিরানগাছাতে। এসব জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে সিআইডি। একই সঙ্গে তল্লাশি চালাবে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফও।