এমসি কলেজের ঘটনায় ছাড় নয়
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০ , ১২:৩২ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সম্পাদকীয়
ধর্ষণের অভিযোগের বৃত্ত থেকে যেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বের হয়ে আসতে পারছেন না। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে চলতি মাসেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের নামে অন্তত পাঁচটি ধর্ষণ মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। সর্বশেষ সিলেটের এমসি কলেজে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনাটি সারাদেশে আলোচিত হচ্ছে। সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করছে। এমন বর্বর ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আমরা গভীর সংকটে পতিত হবো। জানা গেছে, গত শুক্রবার বিকালে স্বামীর সঙ্গে এমসি কলেজে বেড়াতে গিয়েছিলেন এক গৃহবধূ। সন্ধ্যায় তাদের কলেজ থেকে ছাত্রাবাসে ধরে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের ৬-৭ জন নেতাকর্মী। এরপর দুজনকে মারধর করা হয়। একই সঙ্গে স্বামীকে আটকে রেখে তার সামনে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করে তারা। খবর পেয়ে রাতে ছাত্রাবাস থেকে ওই দম্পতিকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীকে ওসমানী হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পরেরদিন শনিবার ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় মামলা করেন। মামলায় ছাত্রলীগের ৬ নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাত আরো ৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে অভিযুক্ত কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রায় ১২ বছর ধরে ছাত্রলীগ মূলত আলোচনায় এসেছে হত্যা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই কিংবা টেন্ডারবাজির কারণে। ইদানীং ধর্ষণের ঘটনাও শুনতে হচ্ছে। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি এই তিনটি হলো ছাত্রলীগের মূলনীতি। দেশের ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটি আজ নানা অপকর্মে জড়িয়ে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের বেপরোয়া দৌরাত্ম্যের রাশ টানতে পারছে না ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও অভিভাবক রাজনৈতিক দল। সরকারের অনেক ইতিবাচক অর্জন ও সাফল্যকে ¤øান করে দিচ্ছে ছাত্রলীগের দুষ্কর্ম। এটা ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বুঝেন না তা নিশ্চয়ই নয়। বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী নেতৃত্বের পক্ষ থেকে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি নেয়ার কথা বলা হয়েছে। অপরাধী যে দলের পরিচয়ধারীই হোক তাকে ছাড় না দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এসবের কোনো প্রতিফলন নেই। অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগের তাÐব-সন্ত্রাস পুলিশ দেখেও দেখে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষও তাদের ঘাঁটাতে চায় না। এভাবে তো চলা যায় না। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ পরিচয়ধারীদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ করতে শক্ত ভ‚মিকা নিতে হবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে; অভিভাবক রাজনৈতিক দলকে। অপরাধীর পরিচয় যাই হোক তাকে ছাড় দেয়া যাবে না এটা যে কথার কথা নয় তার প্রমাণ দিতে হবে নিজেদের পদক্ষেপে। সরকারকেও তার ভাবমূর্তির স্বার্থেই শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস মোকাবিলায় কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় রাজনীতি দূষিত হয়ে পড়া এবং স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েই ধর্ষণের মতো ঘৃণিত অপরাধে জড়ানোর সাহস পাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীকে কেড়ে নিয়ে ধর্ষণের মতো অকল্পনীয় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। আমরা দেখতে চাই, সিলেট এমসি কলেজে সংঘটিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হোক। অভিযুক্তরা উপযুক্ত শাস্তি পাক।