কংগ্রেসকে জোটে চায়, নেতৃত্বে চায় না তৃণমূল
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: ডিসেম্বর ৩, ২০২১ , ৩:৫১ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাবিশ্ব
দিনের শেষে ডেস্ক : কংগ্রেসকে ছাড়া বিরোধী জোট হবে না। কিন্তু তাই বলে কংগ্রেসের নেতৃত্বেও বিরোধী জোট হবে না। কংগ্রেস বিরোধী জোটে থাকবে আর পাঁচটা আঞ্চলিক দলের মতো। বুধবার মুম্বাইয়ে শরদ পাওয়ার এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকে দু’জনেই এ বিষয়ে একমত হয়েছেন। এনসিপি শীর্ষ সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইন এ খবর জানিয়েছে।
তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে প্রবীণ মরাঠা নেতার আলোচনার বিষয়ে ওয়াকিবহাল এক এনসিপি নেতার ব্যাখ্যা, পাওয়ার প্রথম থেকেই বলছেন, কংগ্রেসকে ছাড়া বিরোধী জোট সম্ভব নয়। উল্টো দিকে মমতা কংগ্রেসের সমলোচনা করে আঞ্চলিক দলগুলোর জোটের কথা বলছেন। আপাতভাবে একে দু’জনের মধ্যে মতভেদ বলে মনে হলেও আসলে দু’জনের অবস্থান একই। তা হল, কংগ্রেস জোটে থাকতে পারে। কিন্তু কংগ্রেসের হাতে নেতৃত্ব থাকবে না।
পাওয়ার বা মমতা কেউ এ কথাটি স্পষ্ট করে না বললেও শুক্রবার ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর তা খোলসা করে দিয়েছেন। এক টুইটে তিনি বলেন, ‘কংগ্রেস যে ভাবনা ও জায়গার প্রতিনিধিত্ব করে, তা মজবুত বিরোধী শিবিরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
কিন্তু তা সত্বেও কংগ্রেসের হাতে নেতৃত্ব না থাকার যুক্তি দিতে গিয়ে নাম না করে রাহুল গান্ধীকে নিশানা করেছেন কিশোর। তিনি বলেন, ‘কংগ্রেসের নেতৃত্ব একজন ব্যক্তির ঈশ্বরপ্রদত্ত অধিকার নয়। বিশেষত ওই দল যখন গত ১০ বছরে ৯০ শতাংশ আসনেই হেরেছে।’ তার মন্তব্য, ‘বিরোধী জোটের নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ঠিক হোক।’
কিশোর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের পরই একাধিকবার পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। এখন কোন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিরোধী জোটের নেতৃত্ব ঠিক করার কথা বলছেন তিনি?মহারাষ্ট্রে লোকসভা আসন ৪৮টি; পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি। এ ৯০টি আসনে ‘জোট বেঁধে’ তৃণমূল, শিবসেনা ও এনসিপি লড়বে। ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, হরিয়ানার মতো রাজ্যের ১২০ থেকে ১৪০টি আসনে কংগ্রেস সরাসরি বিজেপির সঙ্গে লড়াই করে কতগুলো আসন নিয়ে আসতে পারে, তা দেখা হবে। বাকি আঞ্চলিক দলগুলোর শক্তিও পরখ করা হবে। তারপর কার কত সংখ্যা, কে বিরোধী জোটে চালিকাশক্তির কাজ করেছেন, তা নিয়ে আলোচনা হবে।
এনসিপি-র রাজ্যসভার সংসদ সদস্য মজিদ মেমনের মতে, মহারাষ্ট্র-পশ্চিমবঙ্গ মিলিয়ে ৯০টি আসনে এনসিপি-তৃণমূলের যৌথ লড়াই বিরোধী জোটের মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে। বৃহস্পতিবার মমতা রাহুলের নাম না করে তার বারবার বিদেশে চলে যাওয়া নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন। আজ কিশোর আবার রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেসের হারা নিয়ে কটাক্ষ করায় কংগ্রেস নেতারা আবার ক্ষুব্ধ। কিন্তু এনসিপি, তৃণমূল নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কংগ্রেস ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ১৮৬টি আসনে বিজেপির সঙ্গে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। তার মধ্যে বিজেপি ১৭০টা আসনে জিতেছিল। কংগ্রেস জিতেছিল মাত্র ১৫টি আসনে। এ ১৮৬টি আসনে কংগ্রেস ২০১৪ সালের তুলনাতেও ৯টি আসন কম পায়।
এনসিপি সূত্রের খবর, বৈঠকে পওয়ারকে মমতা বলেন, কংগ্রেস এখন দুর্বল। সেভাবে সক্রিয়ও নয়। তাই তাদের থেকে তেমন প্রত্যাশা না রেখেই পরিকল্পনা সাজাতে হবে। সেই সঙ্গে তার অভিমত, ২০২৪ সালের জন্য এখন থেকে বিরোধী-ঐক্যের ঘুটি সাজানো জরুরি। নইলে তখন শেষ মুহূর্তে মাঠে নেমে লাভ হবে না।
তৃণমূল নেতাদের যুক্তি, কংগ্রেস এখন তাদের বিরুদ্ধে বিজেপিবিরোধী ভোটে ভাগ বসিয়ে নরেন্দ্র মোদির সুবিধা করে দেয়ার অভিযোগ তুলছে। ওই ১৮৬টি আসনে তো কংগ্রেসের ভোটে কেউ ভাগ বসাতে যায়নি। তারপরও কংগ্রেস খারাপ ফল করছে কেন?
তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের যুক্তি, মহারাষ্ট্র, তেলঙ্গানা, তামিলনাড়ুর মতো যেসব রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিরোধী রয়েছে, সেখানে তৃণমূল লড়তে যাচ্ছে না। ত্রিপুরা, গোয়া, মেঘালয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই ঠিকমতো হচ্ছিল না বলেই তৃণমূল সক্রিয় হয়েছে। মুম্বাই সফরের পর মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৩ ডিসেম্বর নাগাদ গোয়ায় যেতে পারেন বলে তৃণমূল সূত্রের জানা গেছে। কংগ্রেস শক্তিশালী বিকল্প জোটে থাকবে কি না, সে প্রশ্নের উত্তরে বুধবার তার ‘সিলভার ওক’ বাংলোয় মমতা ও অভিষেকের সঙ্গে বৈঠকের পর পাওয়ার বলেছিলেন, কংগ্রেস হোক বা অন্য কোনও দল, যারা বিজেপির বিরুদ্ধে, তারা যদি একসঙ্গে আসতে চায়, তা হলে সকলেই স্বাগত।
মুম্বাইয়ে পাওয়ার-ঘনিষ্ঠ নেতারা বলছেন, বিরোধী জোটের নেতৃত্বের রাশ হাতে থাকার মনোভাব কংগ্রেসকে ছাড়তে হবে বলে পাওয়ারও আগে বুঝিয়ে দিয়েছেন। কংগ্রেসের ‘জমিদারি মনোভাব’ নিয়ে তিনি কটাক্ষ করেছেন। তা ছাড়া, কংগ্রেস নিজেই ২০২৪ সালে ১২০টির বেশি আসনে জেতার আশা করছে না। কয়েক মাস আগে সালমান খুরশিদ বলেছিলেন, যে দল ১২০টি আসন জিতবে, সেই দলই বিরোধী জোটে নেতৃত্ব দেবে।
কংগ্রেসের কাছে এখন মাত্র ৫৩ জন সংসদ সদস্য। সেখান থেকে কংগ্রেস ২০২৪ সালে বিজেপির মতো ৩০০ আসন পেরোবে বলে যে আশা করা যায় না, তা আজ স্পষ্ট বলেছেন দলের প্রবীণ নেতা গুলাম নবী আজাদ। কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ ফেরানো নিয়ে পুঞ্চে এক জনসভায় তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালে কংগ্রেস ৩০০ আসনে জিতে এসে এ বিষয়ে কিছু করতে পারে, তা বলতে পারছি না। আমি তেমন কিছুর আশা দেখছি না। তাই মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেব না।’
কংগ্রেস আজ কিশোরের সমালোচনা করেছে। কিন্তু গুলামের মন্তব্যে অস্বস্তিতে পড়ে বলেছে, ওই কথাটি ৩৭০ প্রসঙ্গে বলা। রাহুলকে কিশোরের কটাক্ষ নিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, ‘রাহুল গান্ধী আরএসএসের থেকে দেশের গণতন্ত্রকে বাঁচানোর ঈশ্বরপ্রদত্ত কর্তব্য করছেন। কোনও মতাদর্শগত দায়বদ্ধতাহীন পেশাদার কোনও দল বা ব্যক্তিকে নির্বাচন লড়ার পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু তিনি রাজনীতির বিষয়বস্তু ঠিক করতে পারেন না। কংগ্রেস শাসনের ঈশ্বরপ্রদত্ত অধিকার নিয়ে চলছে, এ ধারণা ভুল। রাহুল গান্ধী আন্দোলনের কর্তব্য পালনের ঐতিহ্য এগিয়ে নিয়ে চলেছেন।’