কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ছে না তৃণমূল, ইঙ্গিত মমতার
পোস্ট করেছেন: dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: নভেম্বর ২৬, ২০২১ , ৪:০৫ অপরাহ্ণ | বিভাগ: সারাবিশ্ব
দিনের শেষে ডেস্ক : ভারতের রাজধানী দিল্লির সাউথ অ্যাভিনিউয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারি বাসভবনের সামনে দাঁড়িয়ে বুধবার দু’টি বিষয় পর পর প্রায় এক নিঃশ্বাসে বলেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক, এবারের দিল্লি সফরে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে তিনি দেখা করছেন না। দুই, শিগগিরই মুম্বাইয়ে গিয়ে এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার এবং শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। খবর আনন্দবাজার অনলাইনের। রাজনৈতিক শিবির বলছে, আগামী দিনে বিরোধী জোটে নতুন সমীকরণের সম্ভাবনা এই জোড়া মন্তব্যে উস্কে দিয়েছেন মমতা। যদিও কংগ্রেসের অভিযোগ, ‘নতুন জোটের’ মোড়কে আসলে কংগ্রেসকেই ভাঙতে চাইছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। এর উদ্দেশ্য, কংগ্রেসকে দুর্বল করে নরেন্দ্র মোদির সুবিধা করে দেয়া।
তৃণমূল সূত্র জানায়, ১ ডিসেম্বর মুম্বাইয়ে উদ্ধব এবং পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠক করবেন মমতা। অথচ ২৯ নভেম্বর সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু। সেই হিসেবে ১ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে সংসদ অধিবেশনে হাজির থাকার কথা ছিল পাওয়ারের। কিন্তু মমতার সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে তিনি দিল্লি না এসে অপেক্ষা করবেন মুম্বইয়ে। বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বলে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি।
দলীয় সূত্র ঘরোয়াভাবে জানাচ্ছে, কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন আঞ্চলিক দলকে সঙ্গে নিয়ে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে জোট তৈরি করতে চাইছেন মমতা। গতকাল রাতে মেঘালয়ের ঘটনার পর একথা আরও স্পষ্ট যে, এবার প্রকাশ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেসের দুর্গে হানা দেবে তৃণমূল। আজ লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘কংগ্রেসকে ভাঙার চক্রান্ত শুধু মেঘালয়ে নয়, পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চল জুড়ে চালাচ্ছে তৃণমূল।’
গত কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক শিবিরে যে তর্ক সামনে এসেছে, তা হল- কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপি-বিরোধী জোটের ধারণা আসলে সোনার পাথরবাটি কি না। দেশে ১২০টিরও বেশি আসনে লড়াই সরাসরি কংগ্রেস বনাম বিজেপির। কোনও স্থানীয় দলের পায়ের ছাপ সেভাবে সেখানে নেই। এমনও নয় যে, পোড়খাওয়া নেত্রী মমতা জাতীয় রাজনীতির এই বাস্তবতা জানেন না। আর তাই কংগ্রেস শিবিরের তোপ, আসলে কংগ্রেসকে বাইরে রেখে জোট গড়ার নামে বিজেপির হাতই শক্ত করছে তৃণমূল।
তৃণমূলের অবশ্য যুক্তি অন্য। সূত্রের বক্তব্য, বিভিন্ন রাজ্যে দলীয় সংগঠন বাড়িয়ে নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে নিজের বিজেপি বিরোধী মুখকে আরও ঝকঝকে করতে চাইছেন মমতা। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছেন তারা। একদিকে তাই রাজ্যে-রাজ্যে কংগ্রেস থেকে নেতা-কর্মীদের তৃণমূলে যোগ দেওয়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। অন্যদিকে, অকংগ্রেসি আঞ্চলিক দলের সঙ্গে কথাবার্তা চালানো শুরু করছেন মমতা। সম্ভবত ১ ডিসেম্বর পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে তার সূচনা।
এরপর উত্তরপ্রদেশেও যেতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূলের হিসাব, আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে মমতা নিজের নেতৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করে রাজ্যে-রাজ্যে একটি পোক্ত বিজেপি-বিরোধী জোট বানাতে পারলে, লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস বিরোধী জোটে নেতৃত্বের প্রশ্নে খবরদারি করতে পারবে না। বরং পরিস্থিতি তেমন দাঁড়ালে, বাইরে থেকে মমতাকেন্দ্রিক আঞ্চলিক জোটকে সমর্থন দিতে বাধ্য হবে তারা।
বুধবারই মমতা স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘আমরা সব রাজ্যে লড়ব না। যেখানে যে আঞ্চলিক দল শক্তিশালী, আমরা তাদের পাশে থেকে সমর্থন দেব।’ যে কারণে উত্তরপ্রদেশে তৃণমূলের ইউনিট খোলার কথা জানিয়েও তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য, এসপি নেতা অখিলেশ সিং যাদব যদি সাহায্য চান, তিনি সমর্থন করবেন। পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠকটিকেও এই প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
তৃণমূলের হয়ে কাজ করা ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর (পি কে) কয়েক মাস আগে বার বার পাওয়ারের সঙ্গে গিয়ে দেখা করেছেন মুম্বাইয়ে। উদ্দেশ্য ছিল, মমতার সঙ্গে পাওয়ারকে আলোচনার টেবিলে বসানো। কিন্তু মমতা জুলাইয়ে দিল্লি এসে পাওয়ারের সঙ্গে দেখা করেননি। অপেক্ষা করছিলেন পাওয়ার।
সূত্রের খবর, সে সময়ে কে নিজে থেকে উদ্যোগ নিয়ে কার বাড়িতে যাবেন, তা নিয়ে একটা ‘ইগোর’ লড়াই তৈরি হয়েছিল। সূত্রের দাবি, এবার মমতা নিজেই যেহেতু পাওয়ারের শহরে যাচ্ছেন, তাই তার গিয়ে দেখা করায় সমস্যা নেই।
পাওয়ারের সঙ্গে এবারের বৈঠকে ভোটের মুখে দাঁড়ানো গোয়ায় এনসিপি-তৃণমূল সমঝোতা নিয়েও কথা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস এবং শিবসেনার সঙ্গে জোট গড়ে সরকার চালাচ্ছে এনসিপি। স্বাভাবিকভাবেই সে রাজ্যে মমতার ‘কংগ্রেসকে বাইরে রেখে জোটের তত্ত্ব’ পাওয়ার বা শিবসেনার পক্ষে গ্রহণযোগ্য হবে না। কিন্তু এনসিপি গোয়ায় লড়ছে ছোট বিরোধী দল হিসেবে। তাই সেখানে তৃণমূল-এনসিপি জোট সম্ভব।
আরও একটি রাজনৈতিক অংক সামনে রয়েছে। উত্তরপ্রদেশে ভোটের ফলাফল ঘোষণার কয়েক মাসের মধ্যেই ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। হিসাব বলছে, যদি উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকারের পতন হয়, বিরোধীদের সামনে সুযোগ চলে আসবে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে জিতিয়ে আনার।
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এক সময়ে প্রধানমন্ত্রিত্বের ‘স্বপ্ন দেখা’ পাওয়ারের রাষ্ট্রপতি হওয়ার অভিলাষ ক্ষমতার করিডরে গোপন বিষয় নয়। সে ক্ষেত্রে তাকে রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী হিসেবে সামনে রেখে জাতীয় রাজনীতিতে ঘুঁটি সাজাতে পারে তৃণমূল। মমতার উদ্যোগে যদি বিভিন্ন আঞ্চলিক বিরোধী দল এককাট্টা হয়ে পাওয়ারের নামে সম্মত হয়, তখন সোনিয়া-রাহুল তাতে আর কোনও বিরোধী বাদ সাধতে পারবেন না বলেই মনে করা হচ্ছে।