আজকের দিন তারিখ ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মাত্র পাঁচ মিনিটে চিহ্নিত : ড. জ্যাকি ইং

কভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মাত্র পাঁচ মিনিটে চিহ্নিত : ড. জ্যাকি ইং


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ১২, ২০২০ , ৯:৩১ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি


দিনের শেষে ডেস্ক : সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জ্যাকি ইয়ে-রু ইংয়ের (Jackie Yi-Ru Ying) নেতৃত্বাধীন গবেষকদল এক দ্রুততম পরীক্ষাপদ্ধতি তৈরি করেছে, যা করোনা কভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মাত্র পাঁচ মিনিটে চিহ্নিত করবে। তাদের গবেষণাটি গৃহীত হলে তা হবে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম পরীক্ষাপদ্ধতি। সম্প্রতি এমনি খবর প্রকাশ করেছে সিঙ্গাপুরের প্রধান ইংরেজি সংবাদপত্র ‘দ্য স্ট্রেইটস টাইমস’। এক মাসের মধ্যে তারা এটি পরীক্ষার জন্য জমা দিতে পারবেন বলে আশা করছেন ইনস্টিটিউট অব বায়োইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ন্যানোটেকনোলজি (আইবিএন) গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান অধ্যাপক জ্যাকি ইং। অণুবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে একজন মুসলিম নারী গবেষক হিসেবে অধ্যাপক ড. জ্যাকি ইং বেশ পরিচিত। সিঙ্গাপুরে তরুণ-তরুণীদের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিষয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ গবেষণা পরিচালনা করছেন অধ্যাপক জ্যাকি। ১৯৬৬ সালে তাইওয়ানের রাজধানী তাইপাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন জ্যাকি ইং। ছোটবেলায় মা-বাবার সঙ্গে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান। সেখানেই পড়াশোনা শুরু হয় কৃতীমান এই গবেষকের। এখানে এসে মেশার সুযোগ পান নানা জাতি ও গোষ্ঠীর সঙ্গে। আর এখানকার বেশির ভাগ জাতি-গোষ্ঠী ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি ও বিশ্বাসকে খুব কাছ থেকে দেখতে পান তিনি। মুসলিম সহপাঠীদের দ্বারা প্রভাবিত হন তিনি। এ সময়ে তিনি অনুধাবন করেন যে বিশ্বাসের ভিন্ন ভিন্ন রূপ আছে। অধ্যাপক জ্যাকির বর্ণনা মতে, তখন থেকেই আমি ধর্ম সম্পর্কে খুবই কৌতূহলী হয়ে উঠি। সব সময় আমি জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চেয়েছি এবং তা আমি ধর্মের মধ্যে অনুধাবন করেছি। অতঃপর ১৫ বছর বয়সে সিঙ্গাপুর থেকে পাড়ি জমান আমেরিকায়। যুক্তরাষ্ট্রের কোপার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৮৭ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং ১৯৯১ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। অতঃপর যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের একজন তরুণ অধ্যাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন। মাধ্যমিক থেকেই তিনি ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছেন। তাই যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটিতে এসে ধর্মের প্রতি আগ্রহবোধ আরো বৃদ্ধি পায়। সেখানে থাকাকালে ৩০ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন জ্যাকি। একজন প্রতিশ্রুতিশীল বিজ্ঞানী হওয়ায় নিজের অধ্যয়নের মাধ্যমে তিনি সত্য ও স্রষ্টাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন। তিনি বলেন, আপনি যদি সত্যিই বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন, তাহলে আপনাকে একজন স্রষ্টাকে বিশ্বাস করতে হবে। আর অন্যান্য ধর্মও আমাকে বেশ কৌতূহলী করে তুলেছে। ইসলাম ও বিজ্ঞান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ইসলাম জ্ঞান অর্জনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। আর বিজ্ঞান শেখার মাধ্যমে আমরা সমাজের সবচেয়ে উপকারী সদস্য হতে পারব। তবে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, বিজ্ঞান একজন স্রষ্টার অস্তিত্ব বারবার প্রমাণিত করে। অতএব, ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে কোনো সমস্যা আছে বলে মনে করি না। এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, বায়োমেডিক্যাল বিষয়ে গবেষণা করলে দেখা যাবে যে বায়োলজি সিস্টেমের জটিলতা ও তাদের কাজের ধরনের কারণে আপনি তাদের কোনো সাহায্য করতে পারবেন না; কিন্তু আঘাত পাবেন। এ পদ্ধতিতে এতটাই জটিলতা কাজ করে যে সামান্য সুযোগে ঘটে যাওয়া সব কিছুর সম্ভাবনা অসীম ক্ষুদ্র। এখান থেকেই আমার ছোট্ট উপলব্ধি তৈরি হয় যে সব কিছুতে একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন। এমআইটির একজন নারী অধ্যাপক হিসেবে তিনি বলেন, ২৫ বছর বয়সে যখন আমি এমআইটির ফ্যাকাল্টি হিসেবে যোগ দিই, তখন সেখানে আমি ছিলাম এশিয়ার দুজন নারী অধ্যাপকের একজন। কিন্তু আমি নিজেকে কঠিন পরিশ্রমে নিমগ্ন রেখেছি। তাই দ্রুত সময়ে শর্তাবলি পূরণ করে পদোন্নতি লাভের সৌভাগ্য হয়েছিল। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এখনো অনেক ক্ষেত্রে পুরনো পুরুষ কর্মীদের শক্ত নেটওয়ার্কের কারণে যথেষ্ট যোগ্য নারীদের সর্বোচ্চ পদে আসীন করা হয় না। অগণিত পুরস্কারের অধিকারী অধ্যাপক জ্যাক ইংয়ের উচ্চতর একাডেমিক গবেষণার পরিমাণ তিন শর অধিক। বর্তমানে তিনি সিঙ্গাপুরের দি এজেন্সি অব সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড রিসার্চের অধীনে ইনস্টিটিউট অব বায়োইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ন্যানোটেকনোলজির (আইবিএন) প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করছেন। ২০০৮ সালে আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশিত ‘আধুনিক যুগের এক শ বিজ্ঞানী’ তালিকায় স্থান লাভ করেন। বিজ্ঞানে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখায় ২০১৪ সালে তিনি ‘সিঙ্গাপুর উইমেনস হল অব ফেম’ হিসেবে নির্বাচিত হন। অনেক বছর যাবৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্যাটাগরিতে বিশ্বের প্রভাবশালী পাঁচ শ মুসলিমের একজন নির্বাচিত হয়ে আসছেন। ২০১৫ সালে তিনি অরগানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) ‘মুস্তফা সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ফাউন্ডেশন’-এর পক্ষ থেকে ‘মুস্তফা প্রাইজ’ হিসেবে পাঁচ লাখ ডলার লাভ করেন। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব ইনভেন্টরস’ (এনএআই)-এর ফ্যালো মনোনীত হন। একজন উদ্ভাবক হিসেবে সিঙ্গাপুরের পক্ষ থেকে তিনিই প্রথমবারের মতো এ গৌরব অর্জন করেন। অণুবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘ন্যানো টুডে’-এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তথ্যসূত্র : দ্য স্ট্রেইটস টাইমস, রাহইয়াফতেহা