দিনের শেষে ডেস্ক : স্বাস্থ্য উদ্বেগকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা তুলতে চীনে গাড়ি নির্মাতারা ভাইরাস ঠেকানোর ব্যবস্থা সম্বলিত গাড়ি বাজারে ছেড়েছে। ফেস মাস্ক পরলে যে মাত্রার সুরক্ষা পাওয়া যায়, নতুন মডেলের এই গাড়িগুলোতে সে ধরণের ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। খবর বিবিসির। দেশটির কয়েকটি বড় গাড়ি নির্মাতা সংস্থা এধরনের গাড়ি বাজারে ছেড়েছে। এর মধ্যে লন্ডনের রাস্তায় চলা কালো ট্যাক্সির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গিলিও রয়েছে। চীনে দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে এবছরের প্রথম তিন মাসে দেশটির গাড়ির বাজার ব্যাপকভাবে মার খেয়েছে। গিলি নামের কোম্পানিটি প্রথম ভাইরাসপ্রতিরোধী ব্যবস্থা সম্বলিত তাদের গাড়িটি বাজারে চালু করেছে। বড় শহরে বায়ু দূষণ থেকে মোটরগাড়ির চালকরা কীভাবে সুরক্ষা পেতে পারেন তা নিয়ে কিছু কাজ তারা আগেই করেছিল। তাদের এই কাজের নাম ছিল ‘স্বাস্থ্যকর গাড়ি প্রকল্প’। এর লক্ষ্য ছিল বাতাসের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দূষণকণা যাতে গাড়ির ভেতরে ঢুকতে না পারে এবং গাড়ির চালক ও যাত্রীদের শরীরে এসব বিষাক্ত পদার্থ যাতে নি:শ্বাসের সঙ্গে না ঢোকে এমন প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা তৈরি করা। গিলি এমন জীবাণুপ্রতিরোধী পদার্থ তৈরি করছে যাতে গাড়ির ভেতরের জিনিসপত্র এবং গাড়ির দরোজার হ্যান্ডেল জীবাণুমুক্ত থাকে। গিলির একজন মুখপাত্র বলেন, অনেক গাড়ির চালক তাদের গাড়িতে লম্বা সময় কাটান, অনেকের কাছে তাদের গাড়ি তাদের ‘দ্বিতীয় বাড়ি’, কাজেই স্বাস্থ্যসম্মত গাড়ি বানাতে পারলে উন্নত জীবনমানের জন্য সেই গাড়ির চাহিদা বাজারে বাড়বে। তিনি বলছেন, তাদের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যই হবে গাড়িতে চালক ও যাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপকরণ রাখা। গিলি এখন নতুন গাড়ির চাবি ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য ব্যবহার করছে ড্রোন। ড্রোন খদ্দেরের দরোজার সামনে বা ফ্ল্যাটের বারান্দায় চাবি দিয়ে আসছে যাতে ভাইরাস সংক্রমণের এই সময়ে ক্রেতাদের দোকানের কর্মীদের সামনাসামনি হতে না হয়। ব্রিটিশ ব্র্যান্ড এমজির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এসএআইসি আরও একটি বাড়তি ফিচার যোগ করেছে তাদের গাড়িতে। এতে গাড়ির ভেতর একটি অতিবেগুনি রশ্মির বাতি ব্যবহার করে গাড়ির শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে গাড়ির ভেতরের বাতাসকে জীবাণুমুক্ত করা যাবে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান গুয়ানঝু অটোমোবাইল তাদের বেশ কয়েকটি নতুন মডেলে তিন ধাপের বাতাস জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা বসিয়েছে। তবে একটি গবেষণা সংস্থা ফ্রস্ট অ্যান্ড সালিভান বলছে এসব নতুন পদক্ষেপ শুধুই চটকদার। সংস্থার একজন বিশেষজ্ঞ ভিভেক বৈদ্য বলেন, গাড়িকে আরও স্বাস্থ্যসম্মত, ঝুঁকিমুক্ত করে তোলার অবশ্যই একটা প্রয়াস চলছে। গাড়িতে এসব নতুন সংযোজনের কাজ আগে থেকেই চলছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ এর পর এগুলোকে সামনে আনা অবশ্যই বিক্রিবাট্টা বাড়ানোর একটা চেষ্টা। তিনি বলছেন, বর্তমানে স্বাস্থ্যসচেতনতা বড়েছে এবং পাশাপাশি মানুষ গাড়ির ভেতরেও স্বাস্থ্যগত পরিবেশ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে। কাজেই এটা শুধু চীনের একার কোন বিষয় নয়। সব গাড়ি নির্মাতাই এখন এই সুরক্ষা ব্যবস্থার দিকে নজর দিচ্ছে। তবে বিষয়টাকে ‘চটকদার’ বলা মানতে নারাজ চীনের মার্কেট রিসার্চ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক শন রিয়েন। তার মতে, করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ভীতি আছে অবশ্যই তার সুযোগ নিচ্ছে গাড়ি নির্মাতারা। খদ্দেররা যদি বাড়তি সুরক্ষা কিনতে বাড়তি অর্থ খরচ করে গাড়ি কোম্পানিগুলো সে সুযোগ হাতছাড়া করবে কেন?
২০১৫ সালে টেসলা কোম্পানির যেসব গাড়িতে দূষণমুক্ত বাতাস ফিলটার পদ্ধতির মাধ্যমে ঢোকার ব্যবস্থা ছিল, সেসব গাড়ি চীনের বাজারে প্রচুর বিক্রি হয়েছে। টেসলা বড় বড় শহরের বায়ু দূষণের মধ্যে চালক ও যাত্রীদের স্বস্তি দিতে ওই বিশেষ প্রযুক্তি গাড়িতে বসিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, কোন গাড়ি নির্মাতা যদি দাবি করে যে তাদের গাড়ির ভেতর এমন প্রযুক্তি আছে, যা গাড়ির ভেতর থেকে কেউ কোভিড নাইনটিনে সংক্রমিত হতে পারবে না কারণ তাদের প্রযুক্তি গাড়ির ভেতর থেকে ভাইরাস তাড়িয়ে দেবে, তাহলে সেটা একটু আবস্তব দাবি হবে। তারপরও গাড়ি প্রস্তুতকারকরা মনে করছে,ন আগামী কয়েক মাসে মানুষ গণপরিবহনে চলাফেরা করার বদলে হয়ত নিজেদের গাড়ি ব্যবহারে বেশি উৎসাহী হবে, তাই ভাইরাস মোকাবেলার বিশেষ ব্যবস্থা গাড়িতে আছে এমন ধারণা তাদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করতে পারে।