করোনার প্রভাবে গত ১ বছরে প্রবাসীদের আয়ে ভাটা
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ৪, ২০২০ , ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য
দিনের শেষে অর্থ–বাণিজ্য ডেস্ক : করোনাভাইরাসের প্রভাবে গত মার্চ মাসে বড় ধরনের পতন হয়েছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে বা প্রবাসী আয়ে। এ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১২৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা গত এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ কম। ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণার পর ১৪০ কোটি ডলারের কম রেমিট্যান্স আসেনি কোনো মাসেই। আগের মাস ফেরুয়ারিতে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১৪৫ কোটি ডলার। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়ায় সামনের মাসগুলোতে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, রেমিট্যান্স কমে গেলে অর্থনীতিতে আরো চাপ তৈরি হবে। কেননা, কয়েক মাস ধরে রপ্তানি কমে গেছে। আমদানির পরিমাণও বেশ কিছুদিন ধরে কমছে। এমন পরিস্থিতিতে আশা জাগাচ্ছিল প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স। বিশেষ করে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণার ফলে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ছিল ২০ শতাংশের বেশি। তবে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সে সূচকেও পতন শুরু হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রবাসীরা প্রায় ৩৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠান। দ্বিতীয় সপ্তাহে তা বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৪২ কোটি ডলারে। তবে তৃতীয় সপ্তাহে সেটি কমতে থাকে এবং মাসের শেষ পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। এতে পুরো মার্চ মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ নেমে এসেছে মাত্র ১২৮ কোটি ৬০ লাখ ডলারে। গত বছরের মার্চে যা ছিল ১৪৫ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। সব মিলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) দেশে প্রায় এক হাজার ৩৭৮ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬.১৫ শতাংশ বেশি। সে সময় রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ১৮৬ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। অথচ প্রথম আট মাসে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২০ শতাংশেরও বেশি। এ ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে যেসব দেশ থেকে বেশি রেমিট্যান্স আসে, তার সব গুলোতেই ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। ফলে করোনার কারণে প্রবাসী শ্রমিকরাও ভালো নেই। আবার এসব দেশে নতুন করে শ্রমিক পাঠানো আপাতত সম্ভব হবে না। ফলে আগামীতে রেমিট্যান্সের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব নাও হতে পারে। বর্তমানে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, ওমান, মালয়েশিয়া, কাতার, ইতালি, বাহরাইন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে। এর বাইরে সিঙ্গাপুর, হংকং, জাপান ও জার্মানি থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে। কিন্তু এই ১৫ দেশের কোনোটিই করোনাভাইরাসমুক্ত নয়। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। চলতি ২০১৯–২০ অর্থবছরের বাজেটে রেমিট্যান্সে এই প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে এ জন্য তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত ৬ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংক এসংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রকাশ করে। আর ২ অক্টোবর থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে তাৎক্ষনিক ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা কার্যকর হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রণোদনা দেওয়ার পর থেকেই প্রতি মাসে তার আগের মাসের চেয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছিল। তবে সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে তার আগের মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যায়। জানুয়ারি মাসে প্রায় ১৬৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসে। সেখানে ফেব্রুয়ারি মাসে আসে ১৪৫ কোটি ডলারের। আর মার্চে সেটি আশঙ্কাজনকহারে কমল।