করোনার প্রভাব : নোয়াখালীর সুবর্নচরের তরমুজ চাষীদের মুখে হাসি নেই
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মে ১৫, ২০২০ , ৯:১৬ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য
নোয়াখালী (বেগমগঞ্জ) থেকে গোলাম মহিউদ্দিন নসু : নোয়াখালীর সুবর্নচর উপজেলার তরমুজ চাষীরা বাজারে প্রাইকার না পেয়ে বিপাকে পড়েছে। লাখ টাকা পুজি বিনিয়োগ করে লোকশানে তরমুজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। চরজুবলি ইউনিয়নের উত্তর কচ্ছপিয়া গ্রামের কৃষক ছিদ্দিক উল্লা (৫০) চলতি বছর পাঁচ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। তবে তার মুখে হাসি নেই। কৃষক ছিদ্দিক উল্ল্যাহ বলেন, তরমুজের বাম্পার ফলন হলেও এ বছর করোনারভাইরাসের প্রভাব পড়েছে তরমুজের বাজারে। তরমুজ পানির দামে বিক্রি করতে হয়েছে। এতে করে তার প্রায় লক্ষাধিক টাকা লোকসান হয়েছে । তিনি চলতি বছর পাঁচ একর জমিতে তরমুজ চাষ করতে গিয়ে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। তরমুজ চাষ করার আগে তিনি সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদের একটি বাড়ি একটি খামার থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে দেড় লাখ টাকা ঋণ করেন। সেই সঙ্গে নিজের ৫০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই তরমুজ চাষ করেন। মার্চের শেষের দিকে তার তরমুজ পাকা শুরু হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারনে নোয়াখালী জেলা লকডাউন থাকায় ক্রেতা সংকটে পড়েন তিনিসহ উপজেলার তরমুজ চাষিরা। প্রতি বছর মার্চের শেষ সপ্তাহ ও এপ্রিলে চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তরমুজ ব্যবসায়ীরা সুবর্ণচর এসে চাষিদের কাছ থেকে ক্ষেতের তরমুজ কিনে নিয়ে যেত। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে সবাই ক্রেতা সংকটে পড়েন। এর ফলে ছিদ্দিক উল্লাহ পাঁচ একর জমির তরমুজ এক লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। এতে তার লোকসান হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। অথচ গত বছর তিনি দুই একর জমিতে তরমুজ চাষ করে এক লাখ ২০ হাজার টাকা লাভ করেছিলেন। এখন তিনি মহাজনের সুদের টাকা ও একটি বাড়ি একটি খামারের ঋণের কিস্তি কিভাবে পরিশোধ করবেন এবং পরিবার পরিজন নিয়ে কি খেয়ে বাঁচবেন এ নিয়ে চিন্তায় দিশে হারা। সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলি ইউনিয়নের উত্তর কচ্ছপিয়া গ্রামের চাষি হারুন চলতি বছর চার একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে তিনি তার ক্ষেতের তরমুজ এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে তার ৮০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। অথচ গত বছর তরমুজ চাষ করে তিনি দেড় লাখ টাকা লাভ করেছিলেন। ছিদ্দিক উল্ল্যাহ ও হারুনের মতো আরো অনেক কৃষক আছেন যারা তরমুজ চাষ করে বিপাকে পড়েছেন। লাভ তো দূরের কথা, পুঁজি নিয়েও ঘরে ফিরতে পারছেন না তারা। উপজেলায় ছিদ্দিক উল্ল্যাহ ছাড়াও কথা হয় নুরুল হক, আলমগীর হোসেন, হারুন, আব্দুল কুদ্দুস, ইউনুছ মিয়সহ ১০জন চাষির সঙ্গে। এমন হতাশা ও কষ্টের কথা তাদের সবার মুখে। ফলন ভালো হলেও তাদের কপালে চেপে বসেছে দুশ্চিন্তার চাপ। চাষীরা জানান, প্রতিবছর মার্চ ও এপ্রিলে বিভিন্ন জেলা থেকে তরমুজ ব্যবসায়ীরা সুবর্ণচরে এসে তরমুজ কিনে ট্রাকযোগে নিয়ে যেতেন। কিন্তু করোনার কারণে এবার কোনো পাইকার আসছেন না। চাষিরা ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে ট্রাকযোগে চট্টগ্রাম, ফেনী ও কুমিল্লায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। এতে পরিবহন খরচ ও বিভিন্ন স্থানে চাঁদা দিতে গিয়ে তাদের প্রচুর লোকসান হচ্ছে। সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, নোয়াখালীর কৃষি রাজধানী খ্যাত সুবর্ণচরে চলতি বছর তিন হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে এ ফসল তোলা যায়। সাধারণত ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকে তরমুজ চাষ শুরু হয় এবং যা মার্চ মাসে পরিপক্বতা আসে এবং এপ্রিলে বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে ঘুর্নিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ভারি বর্ষণ হয়েছিল, যার কারণে এ বছর দেরিতে চাষ শুরু হয়েছে। ফলনও দেরিতে হয়েছে। তবে ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে তরমুজের দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কমে গেছে।