করোনার সঙ্গে বসবাস শিখছে এশিয়া
পোস্ট করেছেন: delwer master | প্রকাশিত হয়েছে: মে ৫, ২০২০ , ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সারাবিশ্ব
দিনের শেষে ডেস্ক : এশিয়ার দেশগুলো ধীরে ধীরে করোনাভাইরাসের সঙ্গে বসবাস করা শিখছে। সিউল থেকে সিডনি- সব শহরের বাসিন্দা ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন; কিন্তু সামাজিক দূরত্ব ও অন্যান্য বিধি মেনে চলাকে তাদের নতুন স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত করছেন। নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, দক্ষিণ কোরিয়া নতুন নীতি চালু করে তার নাম দিয়েছে ‘প্রত্যহিক জীবনে কোয়ারেন্টিন।’ দেশটির রাজধানী সিউলের বৃহত্তম ক্যাথলিক গির্জার উপাসকদের লালা ছড়ানোর ভয়ে প্রশংসা গীত গাওয়া বা ‘আমিন’ বলা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। যাজকরা একত্রিত হওয়ার আগে তাদের হাত স্যানিটাইজ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ‘এখন থেকে এসবই সাধারণ নিয়ম হওয়া উচিত,’ বলেছেন সিউলের মিয়ংডং চার্চে গত সপ্তাহের এক রাতে প্রার্থনায় অংশ নেয়া স্কুল শিক্ষিকা গং মাই-ইয়াং (৩৩)। তিনি বলেন, ‘আমাদের সর্বদা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’ দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন রীতি চালু হয়েছে, তার নাম ‘প্রতিদিনের জীবনে কোয়ারেন্টিন।’ দেশটির কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি একটি ৬৮ পৃষ্ঠার গাইড প্রকাশ করেছে, যেখানে সিনেমা দেখতে গিয়ে চ্যাঁচামেচি করা থেকে বিরত থাকা এবং জানাজায় অংশ নিয়ে কোলাকোলির পরিবর্তে মাথা নত করা সম্পর্কিত পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এশিয়ার দেশগুলো, অস্ট্রেলিয়া এবং অন্য যেসব শহর করোনা প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে, তারা গির্জা, স্কুল, রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল এবং স্পোর্টিং ভেন্যুগুলো খুলতে শুরু করেছে। তারা কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস আইসোলেশনে থেকে এখন করোনাকে স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গী হিসেবে নেয়ার চেষ্টা করছে। তারা একে একটি ‘করোনা যুগ’ কল্পনা করে পৃথিবীতে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। যেখানে সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং সরকার আরোপিত বিধিনিষেধ দৈনন্দিন কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পর্কিত হবে। একটি ভ্যাকসিন না পাওয়া পর্যন্ত এমন জীবনযাপন অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। হংকংয়ে রেস্তোরাঁগুলোয় টেবিলগুলো কমপক্ষে ৫ ফুট দূরে বসানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গ্রাহকদের খাওয়ার সময় তাদের মুখগুলো ঢেকে রাখতে ভিন্ন আঙ্গিকে তৈরি এক ধরনের মুখোশ দেয়া হচ্ছে। চীনশাসিত এ নগরীর লাইব্রেরিগুলো আবার চালু হলেও পাঠকদের এক ঘণ্টার বেশি ভেতরে থাকতে দেয়া হচ্ছে না। হংকংয়ে চারজনের বেশি মানুষ একত্র হওয়া নিষিদ্ধ। চীনে শিক্ষার্থীদের স্কুলে প্রবেশের আগে তাপমাত্রা যাচাই করা হচ্ছে। দেশটির রেস্তোরাঁর টেবিলগুলো প্লাস্টিকের বিভাজক দিয়ে পৃথক করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় বেসবল খেলায় দর্শক থাকা নিষিদ্ধ এবং খেলোয়াড়রা মাঠে থুতু ফেলতে পারবে না। সিউলের সালসা অ্যামিগোস ড্যান্স ক্লাবের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মুখোশ পরতে বাধ্য করছেন। পাশাপাশি নাচের মধ্যে ঘন ঘন বিরতি দিচ্ছেন যাতে তারা ঘেমে না যায় এবং তাদের সঙ্গীদের থেকে তিন ফুট দূরত্বে অবস্থান করছেন। ‘আমি আশা করছি ভাইরাসটি চলে যাক, যাতে আমি আগের মতো আবার নাচতে পারি,’ বলেছেন এ সপ্তাহে সালসা ও বাচা নাচে অংশ নেয়া টেলিকম সংস্থার কর্মচারী উও তায়ে-হিউক (৪৮)। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির হেয়ার সেলুনগুলো প্রচুর মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহের শর্তে ব্যবসায় ফিরেছে। সেলুনে গ্রাহকদের হাতে ম্যাগাজিন দেয়া বন্ধ করা হয়েছে। শহরের বাসিন্দা দুইজনের বেশি অতিথি ঘরে আনতে পারবেন না। বেইজিং, হংকং, সিউল, সিডনি এবং তাইওয়ানের রাজধানী তাইপের নতুন এ সামাজিক রীতিনীতিগুলো শিগগিরই বিশ্বব্যাপী সাধারণ নিয়মে পরিণত হবে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অংশ বিধিনিষেধ শিথিল করতে অস্থায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে। পর্যটকদের জন্য হোটেল খুলে দিল মিসর : মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে নাজেহাল পুরো বিশ্ব। তবে উত্তর আফ্রিকার প্রাচীন রাষ্ট্র মিসর এরই মধ্যে তাদের বন্ধ হওয়া হোটেলগুলো সীমিত আকারে পুনরায় চালু করেছে স্থানীয় পর্যটকদের জন্য। করোনা ঠেকাতে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব হোটেল খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে দেশটির মন্ত্রিপরিষদ। সোমবার (৪ মে) বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে। মন্ত্রিপরিষদের ইস্যু করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, চালু করা হোটেলগুলোতে আবাসিক একজন চিকিৎসক সার্বক্ষণিক উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি, আগত পর্যটকদের নিয়মিত তাপমাত্রা পরীক্ষা, পর্যাপ্ত জীবাণুনাশক ও অন্যান্য বিষয় সুনিশ্চিত করেই এসব হোটেল চলবে।