করোনা টিকা প্রথম ডোজ নেওয়া ক্যান্সার রোগীরা অন্যদের তুলনায় ‘কম সুরক্ষিত’
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: মার্চ ১১, ২০২১ , ২:১০ অপরাহ্ণ | বিভাগ: /////হাইলাইটস/////
দিনের শেষে ডেস্ক : নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯ ঠেকাতে ফাইজার উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেয়ার পর একজন ক্যান্সার রোগী অন্যদের তুলনায় ‘অনেক কম সুরক্ষিত’ অবস্থায় থাকেন। দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য ১২ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়, আর এই সময়ের মধ্যে একজন ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা বেশ নাজুক হয়ে পড়তে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, দ্বিতীয় ডোজ টিকা যদি তাড়াতাড়ি দেয়া যায়, তাহলে ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়তে পারে। কিংস কলেজ লন্ডন এবং ফ্রান্সিস ক্রিক ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে করা এক গবেষণায় এমনটা দেখা গেছে। করোনাভাইরাস টিকার বিষয়ে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে এ ধরণের জরিপ এটাই প্রথম করা হয়েছে। ব্রিটেনে ব্রেস্ট ক্যান্সার সংক্রান্ত দাতব্য সংস্থা ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিন দেয়ার নীতিমালা পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে বলছে, এই গবেষণাটি এখনো অন্য বিজ্ঞানীরা নিরীক্ষা করে তাদের মতামত দেননি। একই সঙ্গে যাদের ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছে তাদের নিজেদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ-পথ্য চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এবং কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষণাটির অন্যতম প্রধান ডা. শীবা ইরশাদ বলেছেন, গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল ‘রীতিমত উদ্বেগজনক’ এবং ক্লিনিক্যালি নাজুক অবস্থায় থাকা ব্যক্তির স্বার্থে দ্রুত ভ্যাকসিন নীতিমালায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, “তার আগ পর্যন্ত, এটা নিশ্চিত করা জরুরি যে ক্যান্সার রোগীরা টিকা নেয়ার পরেও সব ধরনের স্বাস্থ্য বিধি, যেমন সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে মেনে চলবেন এবং হাসপাতালে যখন যাবেন পুরোপুরি সুরক্ষা নিয়ে যাবেন।” গবেষণায় ২০৫ জন ক্যান্সার রোগী অংশ নিয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৫১ জনই ফুসফুস, স্তন এবং পাকস্থলীর ক্যান্সারের মত কঠিন ক্যান্সারে আক্রান্ত। প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার তিন সপ্তাহ পরে দেখা গেছে, কঠিন ক্যান্সারে আক্রান্তদের ৩৯ শতাংশ রোগী সুরক্ষিত আছেন। ব্লাড ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ১৩ শতাংশ সুরক্ষিত আছেন। আর ক্যান্সার নেই এমন ৯৭ শতাংশ মানুষ সুরক্ষিত আছেন। প্রথম ডোজ নেয়ার তিন সপ্তাহ পরে যাদের দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে কিছু ক্যান্সার রোগী ছিলেন, দেখা গেছে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু যাদের দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেবার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের তেমন সুরক্ষা ছিল না। প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার পাঁচ সপ্তাহ পরে দেখা গেছে, কঠিন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষিত ছিলেন। ব্লাড ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর মাত্র আট শতাংশ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা পেয়েছেন। আর যাদের ক্যান্সার নেই এমন মানুষ শতভাগ সুরক্ষিত হয়েছেন। গবেষকেরা স্বেচ্ছাসেবকদের রক্তে অ্যান্টিবডি এবং টি-সেল পরীক্ষা করেন, যা থেকে বোঝা যায় ভবিষ্যতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হলে তা ঠেকাতে শরীরে প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে কি না। পরীক্ষামূলকভাবে ফাইজারের টিকা প্রয়োগের সময় তিন সপ্তাহের ব্যবধানে দুই ডোজ টিকা দেয়া হয়েছিল। তবে পুরোপুরি সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে দুই টিকার মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান বাড়লে সমস্যা নেই। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি এভাবে কাজ করে না।
ডা. ইরশাদ বলছেন, “ক্যান্সারের চিকিৎসা প্রক্রিয়া এমনিতেই মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে, সেই সঙ্গে ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকে, সে কারণে সতর্কতা দরকার।” তিনি বলছেন, এজন্যই তাদের দ্বিতীয় ডোজ তাড়াতাড়ি দেয়া দরকার। এছাড়া দীর্ঘ সময় এমন রোগীদের ভাইরাসের বিরুদ্ধে অরক্ষিত রাখার ফলে যারা অসুস্থ ব্যক্তির দেখাশোনার কাজ করেন তাদের মধ্যে কোভিড-১৯ এর নতুন ভ্যারিয়ান্ট ছড়িয়ে পড়ার আশংকা তৈরি হয়। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই নেই তাদেরকে এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। প্রসঙ্গত, ফাইজারের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, এটি একজন সুস্থ মানুষের শরীরে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত ভাইরাস প্রতিরোধী সুরক্ষা তৈরি করে। সূত্র: বিবিসি বাংলা