করোনা দুর্যোগের মধ্যে নদীভাঙন, জনমনে আতঙ্ক
পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ১৫, ২০২০ , ৮:০৪ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সারাদেশ
সাতক্ষীরার (আশাশুনি) সংবাদদাতা : করোনা দুর্যোগের মধ্যেই ব্যাপক নদীভাঙন শুরু হয়েছে সুন্দরবনসংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চলে। নদীভাঙনে এরইমধ্যে বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে, যা করোনায় গৃহবন্দি মানুষের জন্য ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা‘ হয়ে দেখা দিয়েছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে এলাকাবাসী। নদীভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা জানান, কাল বৈশাখী মৌসুমের শুরুতে উপকূলীয় এলাকার নদ–নদীগুলোতে জোয়ারের পানি বাড়তে শুরু করে। জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় খুলনা জেলার পাইকগাছা ও কয়রা এবং সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কয়েকটি এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত ১১ এপ্রিল মধ্যরাতে আশাশুনিতে খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে যায়। এতে উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কোলা ও হিজলিয়া গ্রাম এবং শ্রীউলা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিতে এলাকার সব মাছের ঘের ভেসে গেছে। এলাকাবাসী জানায়, গত ১০ এপ্রিল থেকে খুলনার কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া কপোতাক্ষ নদের বাঁধ ভেঙে পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কয়রা উপজেলার ১৫৪ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ২১ কিলোমিটার ঝুঁকিতে রয়েছে। এরমধ্যে আট কিলোমিটার বাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময় এই বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকায় লোনা পানি প্রবেশ করতে পারে। একইভাবে পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের ২২ নম্বর ও ১৬ নম্বর পোল্ডারে ভয়াবহ নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ১২ এপ্রিল ২২ নম্বর পোল্ডারের কালিনগর এলাকায় নদী ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু। তিনি ভাঙনকবলিত এলাকার সাধারণ মানুষের খোঁজ–খবর নেন। তিনি নদীভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এ সময় পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আলীসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে উপকূলীয় জনপদ পাইকগাছা ও কয়রার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের কথা আগেই জানিয়েছি। এরপর পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই অঞ্চলের ভাঙন রোধে এরইমধ্যে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটি পাস হওয়ার আগেই নতুন করে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। সংসদ সদস্য আরো বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এই নদীভাঙন সবার জন্য ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা‘ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাই মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আগেই জরুরি ভিত্তিতে কিছু এলাকায় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দ্রুত পদক্ষেপ নিবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সাতক্ষীরার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান বলেন, খোলপেটুয়া নদীর কোলা পয়েন্টে বাঁধ সংস্কারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আরো কিছু এলাকা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে, যা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে ওইসব এলাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।