করোনা প্রতিরোধে যেভাবে সফল ভিয়েতনাম, মারা যায়নি একজনও
পোস্ট করেছেন: delwer master | প্রকাশিত হয়েছে: এপ্রিল ২৯, ২০২০ , ৭:০৮ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: সারাবিশ্ব
দিনের শেষে ডেস্ক : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অভিনব সাফল্য পেয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভিয়েতনাম। বিবিসি জানিয়েছে, বুধবার ভিয়েতনামে নতুন করে কোনো ভাইরাস আক্রান্ত ধরা পড়েনি। গত ১৩ দিনে কোনো কমিউনিটি ট্রান্সমিশনও হয়নি ভিয়েতনামে। প্রায় ৯ কোটির ওপর জনসংখ্যার ওই দেশটিতে করোনাভাইরাস রোগী পাওয়া গেছে ২৭০ জন, এর মধ্যে একজনও মারা যায়নি। বিশ্বে প্রতি মিলিয়নে আক্রান্তের সংখ্যা এ দেশেই সবচেয়ে কম। দেশটির প্রধানমন্ত্রী তবু জনগণকে সজাগ থাকতে বলেছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সব রোগীকে সুস্থ করে তোলায় ভিয়েতনামের চিকিৎসকদের ভূয়সী প্রশংসা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। হুর কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটি বিস্তারের প্রাথমিক পর্যায়েই তা মোকাবেলায় দেশটির সরকারের নেয়া নানা জরুরি পদক্ষেপ বেশ ভালোভাবে কাজ করেছে বলেই এমনটি সম্ভব হয়েছে। দেশটির প্রতিবেশী চীনসহ এশিয়ার দেশগুলোয় করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃতের সংখ্যা চিকিৎসক, সাধারণ মানুষ ও সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। ভিয়েতনাম কীভাবে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ করে রেখেছে এবং আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যু শূন্যের কোঠায় ধরে রেখেছে– সেই রহস্য তুলে ধরেছে নিউইয়র্ক টাইমস। ভিয়েতনাম সরকারিভাবে স্বাস্থ্য খাতের বিনিয়োগ ও রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগ প্রতিরোধ করার যে কর্মসূচি বহুদিন ধরে চর্চা করে আসছে করোনা প্রতিরোধ সেটি বড় ঢাল হিসেবে কাজ করেছে। আর ‘কোভিড-১৯’ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আগেই ভিয়েতনাম পুরো দেশটাই লকডাউন করে দিয়েছিল। এতে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়েছে। প্রায় ১০ কোটি অধ্যুষিত ভিয়েতনামে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৭০। এখন পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি। চীনের উহান থেকে ফেরা ৬৬ বছর বয়সী এক ভিয়েতনামি প্রথম করোনাভাইরাসে শনাক্ত হন। আনুষ্ঠানিকভাবে ২৩ জানুয়ারি প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের খবর প্রকাশ করে ভিয়েতনাম সরকার। ওই দিন থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ‘কোভিড-১৯’ রোগীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১৪ জনে। এর মধ্যে দুজন চীনা নাগরিক ছাড়া বাকি সবাই ভিয়েতনামি। ব্যাপক আকারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে তখনই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। পাশাপাশি করোনা নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালায় সাধারণ মানুষের মধ্যে। কীভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে, কী করলে সুস্থ থাকবে, এটাই ছিল প্রচারের মূল্য বক্তব্য। এসবের পাশাপাশি দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের খুঁজে খুঁজে পরীক্ষা করেছে। তবে গত ২ মার্চ সর্বনাশটা ঘটায় দেশটির একজন প্রভাবশালী নারী ব্যবসায়ী। ইউরোপের তিন দেশ ঘুরে ওই ব্যবসায়ী ভিয়েতনামের হ্যানয় বিমানবন্দরের দায়িত্বরত কর্মচারীদের পরীক্ষা ফাঁকি দিয়ে ঢুকে পড়েন দেশে। বিমানবন্দরের পরীক্ষায় ফাঁকি দিলেও ভিয়েতনামের পুলিশ তাকে ঠিকই আটক করে। এর পর জানা যায়, তিনি করোনায় আক্রান্ত। এর পর ভিয়েতনাম সরকার একটা বড় পদক্ষেপ নেয়। সেটি হলো– ওই নারী যে বিমানে এসেছিলেন, তার সব যাত্রীকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। তিনি যে রাস্তা দিয়ে গিয়েছিলেন, সেই রাস্তা জীবাণুমুক্ত করা হয়, সেই পথের ধারে বাস করা প্রত্যেককে পরীক্ষা করা হয়। ভিয়েতনামের স্বাস্থ্য বিভাগ মনে করে, যদি ইউরোপফেরত নারী বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ফাঁকি না দিতেন, তাহলে আক্রান্তের সংখ্যা এত বাড়ত না। তবে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানের তুলনায় ভিয়েতনাম এখন পর্যন্ত করোনা মোকাবেলায় যা করেছে, তা পুরো বিশ্বের জন্য অনুকরণীয়।