আজকের দিন তারিখ ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সর্বশেষ সংবাদ
অর্থ ও বাণিজ্য কর ফাঁকি দিতে ম্যারিকোর ৩০ কোটি টাকা আয় গোপন

কর ফাঁকি দিতে ম্যারিকোর ৩০ কোটি টাকা আয় গোপন


পোস্ট করেছেন: Dinersheshey | প্রকাশিত হয়েছে: অক্টোবর ১০, ২০২১ , ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ | বিভাগ: অর্থ ও বাণিজ্য


দিনের শেষে প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানি ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড করা ফাঁকি দিতে আট খাতে প্রায় ৩০ কোটি টাকার আয় গোপন করেছে। এতে কোম্পানিটি ১০ কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে। রাজস্ব অডিট অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির আয় গোপন ও কর ফাঁকির চিত্র উঠে এসেছে। কোম্পানিটির ফাঁকি দেয়া কর আদায়ে রাজস্ব অডিট অধিদপ্তর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যারিকো বাংলাদেশ দুই করবর্ষে আয় করেছে ২৬১ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু আয়কর বিবরণীতে দেখানো হয়েছে ২৩১ কোটি টাকা। মূলত কর ফাঁকি দিতে প্রতিষ্ঠানটি আয় কম দেখিয়েছে। এনবিআর সূত্রে জানা যায়, এনবিআরের আওতাধীন ৯টি কর অঞ্চলের অধীনে ১৫টি কর সার্কেলের ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ২০১৮-১৯ করবর্ষের (২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত) ওপর আয়কর নির্ধারণের সঠিকতা যাচাইয়ের ওপর অডিট ইন্সপেকশন রিপোর্ট (এআইআর) সম্পন্ন করেছে, যার মধ্যে ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের আয়কর গোপনের মাধ্যমে অনিয়মের বিষয়টি উঠে এসেছে। ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড কর অঞ্চল-৩, ঢাকা এর অধীন ৪৫ সার্কেলের (কোম্পানিজ) করদাতা প্রতিষ্ঠান। প্রতিবেদনে উল্লেখ যায়, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ করবর্ষে ৮২ (বিবি) ধারায় আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছে। দুই করবর্ষের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদন (সিএ রিপোর্ট) জমা দিয়েছে। যাতে করযোগ্য সব খাতে কর কর্তন করা হলেও আটটি করযোগ্য খাতে কর কর্তন করা হয়নি। এছাড়া এসব খাত করযোগ্য হলেও প্রতিষ্ঠানটি কর ফাঁকি দিতে কর কর্তন করেনি। এর মধ্যে কোম্পানির বিজনেস প্রমোশন হিসেবে ‘মার্কেটিং সেলিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন এক্সপেন্স’ খাতে এক কোটি ৬৭ লাখ ৭০ হাজার ৪৪৪ টাকা খরচ দেখানো হলেও এর ওপর উৎসে কর কর্তন করা হয়নি। আয়কর অধ্যাদেশ ও অর্থ আইন, ২০১৫ অনুযায়ী কোনো মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল খাতে বিল পরিশোধের সময় ৪ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। উৎসে কর কর্তনের কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় এই আয় অননুমোদনযোগ্য ব্যয় হিসেবে মোট আয়ের সঙ্গে যোগ হয়ে যাবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, একই খাতে মার্কেট রিসার্চ হিসেবে দুই কোটি ২৮ লাখ ১৮ হাজার ২৩৭ টাকা খরচ দাবি করা হয়েছে। এর ওপর ৪ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়নি। ওয়ার্কার্স প্রফিট অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ফান্ড খাতে খরচ দেখানো হয়েছে ১১ কোটি ৮০ লাখ ৯১ হাজার ৮৪৪ টাকা। আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল হতে সুবিধাভোগীদের অর্থ পরিশোধের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ওই অর্থের ওপর ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়, কিন্তু প্রতিষ্ঠান কর কর্তন করেনি। রিপেয়ার অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স খাতে এক কোটি ৪৪ লাখ ৯৭ হাজার ৪৯৯ টাকা খরচ দাবি করা হলে এর ওপর ৪ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়নি। ভেহিকল অ্যান্ড রানিং এক্সপেন্স খাতে ৪ কোটি ৩৫ লাখ ৭৯ হাজার ৬৭২ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে, যাতে ৪ শতাংশ হারে প্রযোজ্য উৎসে কর কর্তন করা হয়নি। কনফারেন্স অ্যান্ড ট্রেনিং এক্সপেন্স খাতে ৫০ লাখ ৩৬ হাজার ৭৮৪ টাকা খরচ দাবি হয়েছে। আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী এর ওপর ১২ শতাংশ হারে উৎসে কর প্রযোজ্য হলেও প্রতিষ্ঠান তা কর্তন করেনি। লিফটিং ফিস খাতে তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা খরচ দাবি করা হলেও ৪ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়নি। জেনারেল অ্যান্ড টেকনিক্যাল ফিস হিসেবে ৭ কোটি ৬৮ লাখ ২২ হাজার ৮৫৬ টাকা খরচ দাবি করা হয়েছে। আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী ব্যবসা শুরুর প্রথম তিন আয় বছরের জন্য নিট মুনাফার ১০ শতাংশ এবং পরবর্তী আয় নিট মুনাফার ৮ শতাংশ প্রাপ্য হবে। কিন্তু ম্যারিকো কোনো উৎসে কর কর্তন করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি। আটটি খাতে কর কর্তন ও তা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার কোনো প্রমাণ পায়নি অডিট অধিদপ্তর।
প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, দুই করবর্ষে ম্যারিকো করযোগ্য আয় দেখিয়েছে ২৩১ কোটি ৬৪ লাখ এক হাজার ২১৬ টাকা। অথচ আটটি খাতের আয়সহ করযোগ্য আয় হওয়ার কথা ২৬১ কোটি ৪৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫৫২ টাকা। অর্থাৎ দুই করবর্ষে ম্যারিকো আয় গোপন করেছে ২৯ কোটি ৭৯ লাখ ৩২ হাজার ৩৩৬ টাকা; যার ওপর ৩৫ শতাংশ হারে প্রযোজ্য কর ১০ কোটি ৪২ লাখ ৭৬ হাজার ৩১৭ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি এই কর পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে। অনিয়মের মাধ্যমে পরিহার করা এই আয়কর আদায় ও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৯-২০ করবর্ষে ম্যারিকো পাঁচটি খাতে প্রায় ৮০ কোটি টাকা আয় গোপন করেছে। যাতে কর ফাঁকি দিয়েছে প্রায় ২৮ কোটি টাকা। স্থানীয় রাজস্ব অডিট অধিদপ্তর ওই করবর্ষের জন্য এনবিআরকে পৃথক প্রতিবেদন দিয়েছে। উল্লেখ্য, মুম্বাইভিত্তিক এফএমসিজি কোম্পানি ম্যারিকো ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে। গাজীপুরের মৌচাক ও সিরিরচালায় অবস্থিত ম্যারিকোর কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বর্তমানে নেপালে রপ্তানি হচ্ছে। ম্যারিকোর আন্তর্জাতিক বাজারের ব্যবসার ৪৯ শতাংশই আসে বাংলাদেশ থেকে। বাংলাদেশের বাজারে ম্যারিকোর রাজস্ব আয়ের ৬৫ শতাংশই আসে প্যারাসুট ব্র্যান্ডের নারকেল তেল থেকে। ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড ২০০৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানির পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৯০ শতাংশ শেয়ার। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৫.৭০ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ২.৪৫ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ১.৮৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কোম্পানিটির সর্বশেষ আর্থিক বছরে শেয়ারহোল্ডারদের ৯০০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে